‘রাজধানীর রেলক্রসিংগুলো এখন মৃত্যুফাঁদ’

‘রাজধানীর রেলক্রসিংগুলো এখন মৃত্যুফাঁদ’

railcrossরাজধানীর রেলক্রসিংগুলো এখন মৃত্যুফাঁদ। এসব ক্রসিংয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। রেললাইনের উপরেই বসছে বাজার, এতে হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়ছে। বড় কোনো ঘটনা ঘটলেই কর্তৃপক্ষের টনক কিছুটা নড়ে। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসন খুব বেশি আন্তরিক হয় না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

অভিযোগ রয়েছে, রেললাইনের ওপর অবৈধভাবে এসব বাজার বসানো হয় মোটা অংকের চাঁদার বিনিময়ে। আর এসব চাঁদার ভাগ যায় বিভিন্ন এলাকার মাস্তান থেকে শুরু করে রেল ও স্থানীয় থানার  বড়কর্তা পর্যন্ত। আর এ কারণেই রেললাইনের ওপরের বাজার সরানো সম্ভব হচ্ছে না।

কমলাপুর রেল স্টেশন থানার অপারেশন অফিসার রফিকুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানান, গত ৯ মাসে ট্রেনের নিচে পড়ে ২৩৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ১৯২ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী। তবে এর মধ্যে আত্মহত্যার কয়েকটি ঘটনাও রয়েছে বলে তিনি জানান।

রেল সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেলরুটে ৩৫টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে অবৈধ ২১টি এবং বৈধ রেলক্রসিং মাত্র ১৪টি। অনুমোদনহীন ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান থাকে না। রেললাইনের ওপর বাজার গড়ে ওঠায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছেই। যেখানে রেলক্রসিং সেখানেই বসেছে অবৈধ বাজার।  

সাম্প্রতিক সময়ের রাজধানীতে বড় ট্রেন দুর্ঘটনার মধ্যে গত ২৯ এপ্রিল কমলাপুর টিটিপাড়ায় রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষে প্রাণ হারান চারজন। আহত হন আরো২০ জন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সহ-সম্পাদক একেএম ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী নাজমুস সাবাহ নাজু। এরপর গত জুন মাসের ১২ তারিখে মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেটের কাছে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন এক ব্যক্তি। এরপর গত মাসে মগবাজার রেলগেটের কাছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সহযোগীর গাড়ি ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে। এতে কেউ হতাহত না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাড়ি। সর্বশেষ গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয় চারজন। আহত হন আরো সাতজন।

কারওয়ান বাজারে সংঘটিত দুর্ঘটনার বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশ বলছে, বারবার রেললাইন ও পাশের জায়গায় বাজার-দোকান সরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তাগিদ দেয়ার পরও ব্যবসায়ীরা কোনো কথা শোনেন না। তারা রেললাইনের ওপর নির্দ্বিধায় করছেন মাছের ব্যবসা। ভোর থেকে অনেক লোকজন জমা হয় সেখানে। যখন কোনো ট্রেন আসে বা যায় তখন যে মানুষ নিরাপদ দূরত্বে যাবে, তার কোনো জায়গা থাকে না। দুই পাশের রাস্তায় রয়েছে অসংখ্য দোকান। এ কারণে প্রায়ই এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে।

জিআরপি থানার ওসি আবদুল মজিদ বলেন, “বারবার রেললাইনের ওপর মাছের বাজার না বসার জন্য বলেছি। তারপরও তারা শোনেন না। শিগগিরই রেললাইনের পাশের যেসব জায়গা দখল করে দোকান গড়া হয়েছে, সেগুলো দখলমুক্ত করতে অভিযান চালানো হবে।”

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর