বাংলাদেশ থেকে ভারতে মানবপাচার রোধে যৌথ নজরদারির ওপর জোর দিয়েছেন মানবাধিকার কর্মী এবং বিশ্লেষকরা৷ দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরকে তাই ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করেছেন তারা৷ বলেছেন, দু’দেশই লাভবান হবে৷
গত সপ্তাহে ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকে মানবপাচার রোধে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে৷ এটা ছিল বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার কর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি৷ কারণ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া নারী ও শিশুদের প্রধান গন্তব্য এখনো ভারত৷
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, এই চুক্তি সইয়ের মধ্য দিয়ে দুই দেশেই মানবপাচার কমে আসবে৷ চুক্তির আওতায় তথ্য বিনিময় এবং পারষ্পরিক সহযোগিতা বাড়লে পাচারকারী চক্রকে চিহ্নিত করা সহজ হবে৷
তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে ভারতে মানবপাচারের জন্য সেখানে যেমন সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে, তেমনি বাংলাদেশেও তাদের সহযোগী গ্রুপ রয়েছে৷ এই দুই গ্রুপ এক হয়েই মানবপাচার সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে৷ সুতারাং দুই দেশ তথ্য বিনিময় করলে চক্রগুলোকে চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে৷”
তার কথায়, ‘‘বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারী ও শিশুদের প্রধান গন্তব্য ভারত৷ এছাড়া বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্তই পাচারের প্রধান রুট৷ তাই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে রুটগুলোতে নজরদারি যেমন বাড়বে, তেমনি পাচারের সংখ্যাও কমে আসবে৷ এবং তার সঙ্গে সঙ্গে পাচার হওয়া নারী ও শিশু উদ্ধারের উৎপরতায় গতি আসবে৷”
অন্যদিকে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘‘এই চুক্তিটি অভিনন্দনযোগ্য৷ শুধু যে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয় তা নয়, ভারত থেকেও নারী ও শিশু পাচার হয়ে বাংলাদেশে আসে৷ আর এই পাচারকৃত নারী ও শিশুদের গন্তব্য ভারত ও দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ৷ তাদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়৷ এখন প্রধান কাজ হলো, দুই দেশেরই নজরদারি জোরদার করা৷ বিশেষ করে সীমান্তে যৌথ নজরদারির ব্যবস্থা করা গেলে তা বেশ ফল দেবে৷”
তিনি বলেন, মানবপাচারের এই ঘৃণ্য কাজে সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ কেউ জড়িত থাকার অভিযোগ আছে৷ এ ব্যাপারেও অনুসন্ধান করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে৷
প্রসঙ্গত, সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার নারী ও শিশু ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হয়ে থাকে৷ তার ওপর বাংলাদেশের ১৮টি রুট দিয়ে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার নারী ও শিশু অবৈধ পথে ভারতে পাচার হয়ে চলেছে৷
বাংলাদেশের সাথে ভারতের চার হাজার ২২২ কিলোমিটার এবং মিয়ানমারের সঙ্গে ২৮৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে৷ পাচারকারীরা বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ব্যবহার করে নারী ও শিশুদের পাচার করে৷ উত্তরের দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, রংপুর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্ত পথ দিয়ে নারী ও শিশুদের পাচার করা হয়৷ ওই অঞ্চলের সীমান্ত এলাকার ১১টি রুট দিয়ে নারী ও শিশু পাচার হয়ে থাকে৷
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ হাজার মানব পাচার হয়, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু৷ তাদের হিসাব অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে তিন লাখের বেশি নারী ও শিশু পাচার হয়েছে ভারতে৷ তবে বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও-র দাবি, পাচারের সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি৷
মানবপাচার প্রতিরোধে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি আইন করে, যাতে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷ এর আওতায় জেলা পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মামলা পরিচালনার কথাও বলা হয়েছে৷ সূত্র: ডিডব্লিউ