জনতা ব্যাংকের সদ্যবিদায়ী চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের কঠোর সমালোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেছেন, জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে মেয়াদ বাড়ছে না জেনেই ‘মনের দুঃখে’ বারকাত সিএসআর বন্ধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বিরোধিতা করছেন।
বারকাত সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতার জন্য টাকা চেয়ে পাননি বলে জনতাসহ চার ব্যাংকের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম স্থগিত করেন অর্থমন্ত্রী।
মঙ্গলবার দেয়া অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বারকাত বলেন, বুধবার তিনি তার বক্তব্যের সপক্ষে প্রমাণসহ সাংবাদিকদের সামনে আসবেন।
বারকাতের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মুহিত সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “তার (বারকাত) টার্ম শেষ হয়েছে, রিনিউ করা হবে না। সে জন্য তার দুঃখ থাকলে থাকতে পারে।
“এটা জেনেই হয়তো তিনি মনের দুঃখে সিএসআর বন্ধ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের বিরোধিতা করছেন। আমার সমালোচনা করছেন।”
দুই মেয়াদে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসাবে আবুল বারকাতের মেয়াদ সোমবার শেষ হয়েছে।
২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর তিন বছরের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয় অর্থনীতি সমিতির সভাপতি বারকাতকে।
তাকে নিয়ে বারকাতের বক্তব্যকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলেছেন মুহিত। তার দাবি, সেই ধরনের কোনো অর্থ তিনি চাননি।
মুহিত বলেন, “আওয়ামী লীগের সমর্থক লোকজন এবং তাদের মধ্যে ইনটেলেকচুয়াল জায়ান্ট অনেকেই আছেন। তাদের আমাদের দেখাশোনা করতে হয়। একজন চেয়ারম্যান অব দ্য বোর্ড অনন্তকাল থাকবেন-এ রকম আশা করার কোনো কারণ নেই।”
সিএসআর কেন বন্ধ করলেন- এই প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “কিছু ব্যাংকের বোর্ডের (পর্ষদ) টার্ম শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এ সময় একটা প্রবণতা দেখলাম। সেটা হল সিএসআরে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছে। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সিএসআর কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করা হয়েছে।”
সিএসআর নিয়ে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আরও ভালো ব্যবহার হতে পারত।”
২৮ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ৪ ব্যাংকের সিএসআরের অর্থ ব্যয় বন্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এগুলো হল- জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক।
এই ৪ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে বলে জানানো হয়।
ওই প্রজ্ঞাপনের সমালোচনা করে বারকাত সোমবার রাজধানীর বাসাবোতে জনতা ব্যাংক-বারডেম ইব্রাহিম নার্সিং কলেজের ভিত্তিস্থাপন অনুষ্ঠানে বলেন, সুনামগঞ্জের হাওরে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় টাকা চেয়ে সুপারিশসহ জনতা ব্যাংকে চিঠি দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। টাকা না দেওয়ায় জনতাসহ চার ব্যাংকের সিএসআর কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
“জনতা ব্যাংকের সিএসআর স্থগিত করে অর্থমন্ত্রী বোকামি করেছেন, অন্যায় করেছেন এবং এক ধরনের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন,” ওই অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন তিনি।
নৌকাবাইচের জন্য টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে মুহিত বলেন, “আমার অফিস বলছে, এ রকম কোনো রেকর্ড তারা পায়নি।”
সব উত্তর নিয়ে আসছেন বারকাত
অর্থমন্ত্রীর সব প্রশ্নের জবাব বুধবার জানাবেন বলে জানিয়েছেন আবুল বারকাত।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া নিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টেলিফোন করে শুরুতেই কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কেমন আর আছি। তোমাদের অর্থমন্ত্রী যেমন রেখেছেন, ভালোই আছি।”
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, “আজ আমি এ বিষয়ে কিছু বলব না।
“পাঁচ বছরে জনতা ব্যাংকের সামাজিক দায়ববদ্ধতা নিয়ে আমি আটশ’ পৃষ্ঠার একটি বই বের করেছি। সেই বইতে জনতা ব্যাংক কোথায়, কাকে- কিভাবে সিএসআর করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ আছে।”
সোমবার বইটি প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছেন জানিয়ে বারকাত বলেন, “আগামীকাল (বুধবার) জাতীয় প্রেসক্লাবে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান হবে। বলতে পার, সংবাদ সম্মেলন করব। কাল আসো, ওখানে সব কিছু বলব।”