কিংবদন্তী নজরুল সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম ইন্তেকাল করেছেন। রাজধানীর এপোলো হাসপাতালে ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি…রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
জানা গেছে, ডায়ালিসিসের পর জ্ঞান না ফেরায় ফিরোজা বেগমকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু তার নার্ভ কাজ না করায় পরে তা খুলে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
মৃত শয্যাপাশে দুই ছেলে হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ফিরোজা বেগমের মৃত্যুর পরিবারের সদস্যরা শোকে ভেঙে পড়েছেন। হাসপাতালেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ফিরোজা বেগমের মৃত্যুর খবরে গোটা সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এরই মধ্যে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয়েছেন- সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর প্রমুখ।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আজ রাতে ফিরোজা বেগমের লাশ এপোলো হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হবে। বুধবার বাদ আসর তাকে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
বুধবার সকাল ৯টার দিকে ফিরোজা বেগমের লাশ রাজধানীর ইন্দিরা রোডের বাসা কালিন্দিতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানকার আনুষ্ঠানিকতা শেষে দুপুর আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সর্বস্তরের জনসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার লাশ রাখা হবে। সেখান থেকে লাশ জানাজার জন্য গুলশান আজাদ মসজিদে নেয়া হবে। এরপর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
ফিরোজা বেগমের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া শোকবার্তায় জানান, কিংবদন্তীর এ সঙ্গীত শিল্পীর তিরোধানে আমাদের জাতীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা সহজে পূরণ হবার নয়।
মরহুমার বিদেহী আত্মার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং শোকার্ত স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই ফরিদপুরের এক সম্ভ্রান্ত জমিদার পরিবারে। তার বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ও মায়ের নাম বেগম কওকাবুন্নেসা। ১৯৫৫ সালে তার বিয়ে হয়। তার তিন সন্তান – তাহসিন, হামীন ও শাফীন।
১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে ইসলামী গান নিয়ে ফিরোজা বেগমের প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ডিং হয়। এ গান ছিল- ‘ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ’ আর ‘প্রীত শিখানে আয়া’। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তার প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। ১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গ-সংস্কৃতি-সম্মেলন-মঞ্চে কমল দাশগুপ্তের ছাত্রী ও সহধর্মিণী হিসেবে তিনি ছিলেন মূখ্যশিল্পী। উভয়ের দ্বৈতসঙ্গীত সকল শ্রোতা-দর্শককে ব্যাপকভাবে বিমোহিত করেছিল।
ফিরোজা বেগম তার দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা ‘একুশে পদক’, বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ গ্রহণ, শেলটেক পদকসহ দেশ-বিদেশের অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।