ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে বর্তমান সরকার তথ্যপ্রযুক্তিতে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের অবকাঠামোতে আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। যে কারণে ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবে রূপ নিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ জনগণের হাতের মুঠোয় তথ্যপ্রযুক্তির সেবা পৌঁছে গেছে। আর এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসিস অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি।
বেসিস সভাপতি শামীম আহসানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান রেবারগেন, বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ড রাষ্ট্রদূত যারবেন ডি ইয়ং।
অনুষ্ঠানের বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র সম্পর্কে নানা দিক তুলে ধরেন বেসিসের নির্বাহী পরিচালক সামি আহমেদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বেসিসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাসেল টি আহমেদ।
বেসিস সভাকক্ষে আয়োজিত সেমিনারে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “গবেষণা প্রতিষ্ঠান গার্টনার বাংলাদেশকে তথ্যপ্রযুক্তি সেবার পরবর্তী গন্তব্যস্থল হিসেবে বিশ্বের ৩০টি শীর্ষ দেশের অন্যতম বলে চিহ্নিত হয়েছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও নিজস্ব কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে সেবার পরিধি বাড়াচ্ছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ, বেসিসের ওয়ান বাংলাদেশ ভিশনসহ সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের কারণে নেদারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান তথা দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী সেমিনারে উপস্থিত নেদারল্যান্ডের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগের আহবান জানান।
বেসিস সভাপতি শামীম আহসান বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। দেশের বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণ, তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে নিতে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা, সামাজিক দায়বদ্ধতাসহ নানা কাজ করে চলেছে বেসিস। বিদেশে বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে আরো প্রতিষ্ঠিত করতে কান্ট্রি ব্র্যান্ডিং প্রয়োজন। সেই প্রয়োজনীয়তা বোধ করে বেসিস ইউএস-বাংলাদেশ টেক ইনভেস্টমেন্ট সামিট, ইউরোপ-বাংলাদেশ টেক ইনভেস্টমেন্ট সামিট ইত্যাদি আয়োজন করে থাকে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ১০ লাখ আইটি প্রফেশনাল তৈরি এবং প্রতিবছর এক কোটি করে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ২-৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হবে। এর মাধ্যমে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে জিডিপিতে সফটওয়্যার ও এ খাতের অবদান হবে এক শতাংশ (১%)।”
ইউরোপিয়ান কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ২০ আইটি আউটসোর্সিং গন্তব্যের একটি। ফলে বলার অপেক্ষা রাখে না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা ও সুনাম বাড়ছে। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টি এদিকে। তিনি বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ড বিজনেস ফোরাম গঠনের ব্যাপারেও আহ্বান জানান।
নেদারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান রেবারগেন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ড রাষ্ট্রদূত যারবেন ডি ইয়ং বেসিসসহ সরকারের এসব কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। বিনিয়োগ করার আগ্রহ নিয়েই তারা বাংলাদেশে এসেছেন বলে জানান।
মঙ্গলবার ও বুধবার বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশত কোম্পানির সঙ্গে শতাধিক বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) মিটিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বেসিস মিলনায়তনে নেদারল্যাল্ডের পাঁচটি কোম্পানি এসব কোম্পানির সঙ্গে তাদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলবেন বলে জানা গেছে।