সিরিয়া আর ইরাকের পর এবার ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশেও জাল বিস্তৃত করছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)৷ ভারত-পাকিস্তানের কয়েকটি শহরে আইএস-এর প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে৷ আর বাংলাদেশে চলছে সদস্য সংগ্রহ অভিযান৷
বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর এক খবরে বলা হয়েছে, সম্প্রতি পাকিস্তান এবং ভারতের কয়েকটি শহরে আইএস-এর তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ পাকিস্তানের পেশাওয়ার এবং আফগান সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রকাশ্যে প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে৷ বেশ কিছু গাড়িতে আইএস-এর ‘স্টিকার’ দেখা গেছে৷ পাকিস্তান আর আফগানিস্তানে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলোর মধ্যে এতদিন মূলত আল-কায়েদা আর তালেবানেরই প্রাধান্য ছিল৷
এবার আইএস বা আইসিস-ও হাত বাড়াচ্ছে৷ বিশ্লেষকরা মনে করেন, জঙ্গি গোষ্ঠী তালেবান এবং আল-কায়েদার সাম্প্রতিক নিষ্ক্রিয়তাই আইএস-কে এ অঞ্চলে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করতে উদ্বুদ্ধ করেছে৷
পাকিস্তানের পেশাওয়ারে আইএস-এর ১২ পৃষ্ঠার এক প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়৷ ‘ফাতাহ’ অর্থাৎ ‘বিজয়’ শিরোনামের ওই প্রচারপত্রের লোগোতে একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে৷ প্রচারপত্রটি নিয়ে আইএস সমর্থকরা সাধারণ মানুষের বাড়ি এবং স্থানীয় মসজিদগুলোতে যাচ্ছে৷ আফগান শরণার্থী শিবিরগুলোতেও তাঁদের তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ পেশাওয়ারের এক মসজিদের ইমাম সামীউল্লাহ হানিফি রয়টার্সকে জানান, জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক খেলাফতের কর্মীদের তিনি প্রচারপত্রটি বিতরণ করতে দেখেছেন৷ এছাড়া এলাকায় খুব বেশি পরিচিত নয় এমন কিছু তরুণকেও এ তৎপরতায় জড়িত হতে দেখা গেছে৷
আইএস-এর তৎপরতাকে সমর্থন জানাচ্ছে তালেবানপন্থি কিছু সংগঠন৷ ‘জামাত-উল আহরার’ নামের একটি সংগঠন ও তালেবানের সক্রিয় নেতা এহসান উল্লাহ এহসান বলেছেন, ‘‘ইসলামি শাসন কায়েম এবং খেলাফতের জন্য কাজ করছে আইএস৷ এটি একটি ইসলামি সংগঠন৷ আমরা তাদের সম্মান করি৷ তারা যদি সহযোগিতা চায়, আমরা ভেবে দেখবো৷”
ভারত অধিকৃত কাশ্মীর, মুম্বাই, এমনকি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতাতেও আইএস-এর তৎপরতা শুরুর খবর পাওয়া গেছে৷
কাশ্মীরে গত ২৭ জুন এবং তারপর ঈদ-উল ফিতরের দিনে কিছু মুসলিম তরুণ আইএস-এর পক্ষে এবং কাশ্মীরে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন৷ কয়েকদিন আগে ভারতের বাণিজ্য নগরী মুম্বইয়ের চারটি মুসলিম পরিবার তাদের সন্তান হঠাৎ উধাও হয়ে যাওয়ার খবর পুলিশকে জানিয়েছেন৷ নিখোঁজদের একজন বাড়ি ছাড়ার সময় চিরকুট লিখে জানিয়েছেন তিনি ‘ইসলাম রক্ষার’ লড়াই করতে যাচ্ছেন৷ পরে জানা যায়, কথিত চার তরুণ তবলিগ জামাতের সঙ্গে ইরাকে গিয়েছেন৷ সেখানে যাওয়ার পর থেকে তারা আবার উধাও৷ তরুণরা আইএস অধিকৃত শহর মোসুলে গেছেন এবং তাদের একজন ইতিমধ্যে যুদ্ধে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
গত সপ্তাহে কলকাতায় চার তরুণকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে৷ চারজনের মধ্যে দু’জন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র৷ টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গ্রেপ্তারকৃত চারজন আইএস-এর যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন৷ বাংলাদেশে ইতিমধ্যে আইএস-এর সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে বলেও পত্রিকাটি জানিয়েছে৷
আইএস-এর তৎপরতা শুরুর খবর পেলেও এ তৎপরতা রোধে এখনি কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ভারতের এক শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, লস্কর-ই-তৈয়বা বা ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মতো আইএস-এর তৎপরতা শুধু সশস্ত্র এবং প্রকাশ্য নয় বলে তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া কঠিন৷ তিনি জানান, আইএস সমর্থকরা শুধু যে কোথাও কোথাও প্রচারপত্রই বিলি করছে, তা নয়, বাড়িতে বসে, ফেসবুক, টুইটারেও কাজ করে যাচ্ছে তারা৷-রয়টার্স