প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আমরা নিম্নআয়ের জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। ফলে দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নেমে এসেছে।”
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের ৩২তম সম্মেলনের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। একই স্থানে ডব্লিউএইচও’র আঞ্চলিক কমিটির ৬৭তম সম্মেলনও শুরু হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক ড. মার্গারেট চ্যান।
চার দিনব্যাপী এ সম্মেলনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন। মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে বুধবার ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুক্রবার ১২ সেপ্টেম্বর তিন দিনব্যাপী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কমিটির ৬৭তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা।
সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরা ২০১২ সালেই এমডিজি-৪ অর্জন করেছি। এমডিজি-৫ অর্জনের ক্ষেত্রেও আমরা সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পরই স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিই। জনগণের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার পথ সুগম করি। যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করি। এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। এসব ক্লিনিকে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদেরকে ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়েছে। রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধ দেয়া হচ্ছে। আমরা ই-হেলথ ও টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছি। এর মধ্য দিয়ে আমরা দেশব্যাপী একটি ব্যাপক-ভিত্তিক স্বাস্থ্যসেবা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। স্বাস্থ্যকর্মী, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি, টারসিয়ারি, বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং উভয়মুখী রেফারেল পদ্ধতি প্রবর্তন করেছি। যা বিশ্বে অনন্য। এজন্য বাংলাদেশ ২০১১ সালে সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের সকল পর্যায়ের হাসপাতালে বেডের সংখ্যা বাড়িয়েছি। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। নতুন নতুন জেনারেল হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে। সরকার নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ, হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজ এবং নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন করেছে। ডাক্তার, নার্সসহ এ খাতের প্রতিটি বিভাগেই জনবল বাড়ানো হয়েছে।
জনগণের সার্বিক সুখ নিশ্চিতে স্বাস্থ্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য আমরা নারী ও শিশু স্বাস্থ্য উন্নয়নকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি। নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য ও জীবনমান সহায়ক নানামুখী সেবা ও সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি।
তিনি বলেন, একটি সুস্থ জাতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, জেন্ডার সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং পরিকল্পিত পরিবার নিশ্চিত করতে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক মানের মিডওয়াইফারি ট্রেনিং কোর্স চালু করেছি। তিন হাজার মিডওয়াইফের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। শিগগিরই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১টি সদস্য রাষ্ট্র বাংলাদেশ, ভূটান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও পূর্ব তিমুর এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছে। সম্মেলনে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ মতামত বিনিময় করা হবে। এ বৈঠক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরো প্রসারিত করবে এবং স্বাস্থ্য খাতে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক সহযোগিতা গঠনে ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সভা পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। মন্ত্রীরা ভেক্টরবাহিত রোগ মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা করবেন এবং এ বিষয়ে ‘ঢাকা ঘোষণা’ দেবেন। সূত্র: আইআরআইবি