সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ির কারণে রাজশাহী অঞ্চলে ভারতীয় গরু আসা কমে গেছে। তাই কোরবানিতে গরু সংকটের আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কোরবানির ঈদের বাকি এক মাসেরও কম সময়। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলের সীমান্তপথে এবার ভারত থেকে গবাদিপশু আসছে না। এ কারণে রাজশাহী অঞ্চলের হাটবাজারগুলো এখনো প্রায় ফাঁকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে উত্তরাঞ্চলসহ সারাদেশে কোরবানির পশুর সংকট দেখা দেবে। ফলে ক্রেতাদের কোরবানির গরু কিনতে হবে দ্বিগুণ বা তিনগুণ বেশি দামে।
রাজশাহীর বৃহত্তম সিটি হাটের একাধিক ইজারাদার জানান, ভারতীয় বিএসএফ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সীমান্তের দিকে গবাদিপশু আসতেই দিচ্ছে না। এই অবস্থার উন্নতি না হলে দেশে কোরবানির গরু-মহিষের সংকট দেখা দিতে পারে।
তারা বলেন, এমনিতেই গরু আমদানি কম। তাছাড়া দেশি গরুও যেতে পারছে না বিভিন্ন হাটে। দেশি গরু-মহিষ ভারতীয় বলে বিজিবি’র প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুধু যেসব গবাদিপশু ভারত থেকে আসে সেগুলোর জন্যই সরকার নির্ধারিত ৫০০ টাকা শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে ছাড়পত্র গ্রহণের নিয়ম আছে। কিন্তু বাড়িতে পালন করা গরুর ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।
তবে সীমান্ত পথে গরু আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি দেশি গরু-মহিষ চলাচলে বিজিবি থেকে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। ফলে রাজশাহী অঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে দেশি গরু-মহিষ ঠিকমতো উঠতে পারছে না।
রাজশাহী-৩৭ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক এইচ কামরুল হাসান বলেন, ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা অর্থাৎ শুধু শুল্ক ফাঁকি দেয়া ভারতীয় গরু-মহিষই আটক করছে বিজিবি।
দেশী গরু-মহিষ আটকের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বিজিবি কখনো দেশি-গরু-মহিষ আটক করে না।
এছাড়া এক্ষেত্রে বিজিবি কর্তৃক কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা হয়রানির অভিযোগ সঠিক নয় বলেও দাবি করেন তিনি।
জানা গেছে, সারা বছরই সীমান্ত পথে কিছু গরু ভারত থেকে আসে। তবে কোরবানির ঈদ উপলক্ষে আমদানি বাড়ে।
বিশেষ করে বড় গরুগুলো আসে বেশি। কিন্তু এবার গরু-মহিষ সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছতেই পারছে না। পুলিশের পাশাপাশি বিএসএফ সীমান্তে টহল বাড়িয়েছে গরু-মহিষের চালান ঠেকাতে।
সীমান্তের ওপার থেকে এক গরু ব্যবসায়ী জানান, সে দেশে সরকার বদলের সঙ্গে সঙ্গে গবাদি পশুর উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার হিসেব-নিকেশ চলছে।
আগে যারা এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন তাদের সঙ্গে নতুন সরকারের লোকজনের ফায়সলা হয়নি। এ বিষয়টি ফয়সলা না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে গবাদিপশুর চালান পাঠাতে পারছেন তারা।
রাজশাহীর সুলতানগঞ্জের এক গরু ব্যবসায়ী জানান, গরু-মহিষ আনতে বিএসএফ বাধা দিচ্ছে। সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ গরু-মহিষের দল দেখলেই ধরে চালান করে দিচ্ছে। ফলে রাজশাহীর চারঘাট থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাসুদপুর সীমান্ত পর্যন্ত এলাকা দিয়ে গরু-মহিষ আসতেই পারছে না।
সূত্র জানায়, সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে গরু আসছে কম। আর বর্তমানে এই পথে দৈনিক গড়ে অন্তত ৫০টি করে গরু আসছে। গত বছর এই সময়ে দৈনিক এক থেকে দুই হাজার পর্যন্ত গরু এসেছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ওয়াহিদপুর, খাঁকচাপাড়া ও জোহরপুর টেক সীমান্ত পথে এখন গড়ে ৩০-৪০টি করে গরু আসছে ভারত থেকে। এবার গরু আমদানি নেই বললেই চলে।
সীমান্তের ওপারের বেপারিরা হাজার হাজার গরু কিনে পাঠানোর অপেক্ষায় থাকলেও সীমান্তে কড়াকড়ির কারণে তা আসতে পারছে না।
এক গরু ব্যবসায়ী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মার চরাঞ্চল সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকলেও গরু আনার পথগুলো এখন জলমগ্ন। এ কারণেও গরু আনতে সমস্যা হচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশও সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছে গরু আটক করে নিয়ে যাচ্ছে।
রাজশাহী কাস্টমসের একটি সূত্র জানায়, এবার সীমান্ত পথে ভারত থেকে গবাদিপশু আসছে কম। কুরবানির মৌসুমে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও জয়পুরহাট জেলার সীমান্ত পথে দৈনিক গড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার করে গরু আসত।
এবার পুরো আগস্ট মাসে এসব সীমান্ত পথে এসেছে মাত্র সাত হাজার গবাদিপশু।