অষ্টাদশ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিতলেন সেরেনা উইলিয়ামস। ছুঁয়ে ফেললেন ক্রিস এভার্ট ও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভাকে। পেছনে ফেললেন রজার ফেদেরারকে। এখন সেরেনার সামনে স্টেফি গ্রাফ আর মার্গারেট কোর্ট। জার্মান তারকা স্টেফির ঝুলিতে আছে ২২টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা। আর ওপেন যুগ শুরু হওয়ার আগে অস্ট্রেলিয়ার মার্গারেট কোর্ট জিতেছিলেন ২৪টি গ্র্যান্ডস্লাম। পরের মাসে ৩৩ বছরে পা দেবেন সেরেনা। এ বয়সে যে টেনিস খেলছেন তিনি, তাতে স্টেফিকে ছোঁয়া অসম্ভব কিছু নয়।
ফ্ল্যাশিংমিডোয় রোববার রাতের ফাইনাল ছিল একপক্ষীয়। ক্যারোলাইন ওজনিয়াকি ফাইনালে সেরেনার সামনে দাঁড়াতেই পারেননি। সরাসরি ৬-৩, ৬-৩ গেমে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়ে ছয় নম্বর ইউএস ওপেন শিরোপা জিতে নিয়েছেন সেরেনা। ছুঁয়েছেন কিংবদন্তি ক্রিস এভার্ট ও মার্টিনা নাভ্রাতিলোভার ১৮টি গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জয়ের রেকর্ড। শুধু তাই নয়, এই শিরোপা জয়ের মাধ্যমে মেয়েদের এককে গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের সর্বকালের সেরা তালিকায় যৌথভাবে দুইয়ে উঠে এলেন সেরেনা। এ তালিকায় ২২টি গ্র্যান্ডস্লাম নিয়ে সবার ওপরে স্টেফিগ্রাফ। ওপেন যুগের আগে ২৪টি গ্র্যান্ডস্লাম আছে মার্গারেট কোর্টের। তাকে সর্বকালের সেরা সফল টেনিস তারকা বলা হয়।
চলতি বছরটা মোটেই ভালো কাটছিল না সেরেনার। এ বছর অনুষ্ঠিত গত তিনটি মেজর টাইটেলে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি। শিরোপা জয় তো দূরের কথা, কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালেই উঠতে পারেননি সেরেনা। অথচ গত চার বছরেই সেরেনা জিতেছেন সাতটি গ্র্যান্ডস্লাম। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের পর আরও দুটি গ্র্যান্ডস্লাম জেতেন সেরেনা; কিন্তু এ বছর একটু ঝিমিয়ে পড়েছিলেন। বছর শেষে ঠিকই ঘুম ভেঙেছে তার। শেষ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা জিতে ইতিহাস ছুঁয়েছেন তিনি। ইতিহাস গড়ার পর অষ্টাদশতম শিরোপা জয়ের মুহূর্তটাকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য ক্রিস এভার্ট আর নাভ্রাতিলোভা ‘এইটিন’ লেখা একটা সোনালি ব্রেসলেট সেরেনাকে উপহার দিয়েছেন। এই উপহার পেয়ে দারুণ খুশি সেরেনা বলেছেন, ‘আমি কি এমন কেউকেটা! এই গ্রেট, এই কিংবদন্তির সঙ্গে আমার নামও উচ্চারিত হবে, কখনোই তো ভাবিনি।’ সেরেনার হাত ধরেই পাওয়ার টেনিস প্রত্যক্ষ করেছিল দুনিয়া। তার কোনো কোনো সার্ব তো ছেলেদের সার্বের গতিকেও ছাপিয়ে যেত। পিট সাম্প্রাস অবসর নেওয়ার পর মার্কিন টেনিসের বিজয়পতাকা নিজেই বহন করছিলেন সেরেনা। এই শতাব্দীর শুরুতে মেয়েদের টেনিসে সেরেনা-ভেনাসের দাপটে অন্যরা শিরোপা জিততেই ভুলে গিয়েছিলেন।
ভেনাসের পতন হয়েছে। অথচ সেরেনা এখনও প্রবল দাপটে খেলে যাচ্ছেন। এখনও তার পাওয়ার টেনিসের সামনে বেসামাল নতুন প্রজন্মের মেয়েরা। ক্যারোলাইন ওজনিয়াকির হারে সেটাই আবার প্রমাণ হলো। এ পর্যন্ত দশবার দুই তারকার দেখা হয়েছে। সেরেনার পক্ষে রেকর্ড ৯-১। ব্যক্তিগত জীবনে ওজনিয়াকির খুব ভালো বন্ধু সেরেনা। কিন্তু কোর্টে বন্ধুত্বের কোনো প্রশ্ন নেই। তাই ফাইনালে নামার আগে বলেছিলেন, ‘ওজনিয়াকি জীবনের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জিততে মরিয়া। আমিও ইতিহাস গড়তে চাই।’ শেষ পর্যন্ত বান্ধবীকে হতাশ করে ইতিহাসই গড়েছেন সেরেনা। ১৭টি গ্র্যান্ডস্লাম জেতা ফেদেরারকে পেছনে ফেলেছেন। ৩৩ বছর বয়সী ফেদেরার যেখানে চিলিসের বাধা টপকাতে পারেননি, সেখানে একের পর এক নতুন প্রজন্মের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জয়ের পর থেমেছেন সেরেনা।