প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিবির সভাপতির খোলা চিঠি

প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিবির সভাপতির খোলা চিঠি

shibir hপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার। আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো প্রায় ১২শ’ শব্দে সাধু ভাষায় লেখা ওই চিঠিতে ৭টি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে। প্রধানমন্ত্রী এ চিঠি না পড়লেও তার ভক্ত-অনুরক্তরা তা পড়বেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রিয়দেশের পাঠকদের জন্য চিঠিটির উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ হুবহু তুলে ধরা হলো:

‘সম্মানীয় দেশের প্রধান নির্বাহী কর্ণধার,
আপনার স্বমতে ও দলীয় বলয়ের ভাষ্যমতে শাসনকাল ভালভাবেই অতিবাহিত করিয়া চলিয়াছেন, যাহার জরিপ কয়েকদিন থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে আপনার পক্ষের মতাদর্শীরা প্রচার চালাইয়া যাইতেছেন। প্রচারিত জরিপ মতে দেশে এখন শায়েস্তা খানের জমানার চাইতেও ভাল সময় অতিক্রম করিতেছে। যাহার দরুন জরিপ মতে দেশের অধিকাংশ জনগণ আপনার পক্ষে বাহবা নিক্ষেপ করিয়া চলিয়াছেন। যাহারা মুষ্টিমেয়, আপনাদের অভক্ত, তাহারা দুর্বল বলিয়া আপনার বিরুদ্ধে তেমন উচ্চ-বাচ্য করিতে পারিতেছেন না, আর করিলেও আপনার জন্মভূমির নিরপেক্ষ প্রশাসন(!) ও ভক্ত-রিক্তের অতিরিক্ত আদর-যত্নে ওনারা নেতাইয়া পড়িয়াছেন। না নেতাইয়া গেলে গুম, হত্যা ও পটল তুলিবার তরে সদাপ্রস্তুত থাকিতে হয় বলিয়া জনশ্রুতি রহিয়াছে। তবে আপনার ও আপনার নেতা-কর্মীদের ধারালো গলাবাজিতে আপনার শত্রুমহল সুবিধা করিতে পারিতেছে না।’

এরপর ওই চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর ৭টি প্রশ্ন রাখা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে:
১. ‘দেশে আপনার শাসনামলে আইনের ধারক ও আপনার ভক্ত-রিক্তরা কয়েক হাজার তাজা প্রাণ হরণ করিয়াছে তাহাদের কোন খোঁজ-খবর কি নেয়ার আপনার ফুসরত হইয়াছে?’

২. ‘হাজার হাজার মানুষ বিরোধী পার্টি করে বলিয়া আহত করিয়া আপনারই বাহিনী পিঁপড়ার মত পিষিয়া মারিতে চাহিয়াছিল, তাহারা আহত হইয়া বিনা চিকিৎসায় জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে লড়িতেছে, তাহাদের কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা করিবার ফুসরত বা ঘোষনা দিবার সুযোগ কি আপনার হইবে?’

৩. ‘যাহারা গুম হইয়া স্বজনদের ঘুম হারাম করিয়া দিয়াছেন, আপনার প্রশাসন যন্ত্রের আদর যত্নে আদৌ তাহারা ধরাতে জীবিত আছে না মৃত হইয়া দেশের মাটি উর্বর করিতেছে অন্তত তাহার জবাব কখনো কি মিলিবে? অথবা ইহার উত্তর রাষ্ট্রের কোন কর্তার কাছে আমরা জানিয়া লইব? দয়া করিয়া তাহা কি জানাইবেন?’

৪. ‘দেশের অধিকাংশ পাঠশালাতে যে ভাবে আপনার স্নেহ-মুগ্ধ ছাওয়ালরা লম্ফ-ঝম্প করিয়া মাষ্টার-ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংবাদকর্মী মারিয়া-ধরিয়া একাকার করিয়া সব নাস্তানাবুদ করিয়া ক্লাস বন্ধ করিয়া দিব্যি প্রশাসনের সামনে মাস্তানি করিয়া বেড়াইতেছে, নিজেদের দলের ও ভিন্ন দলের নেতা-কর্মীদের পটল তুলিয়া দেদারসে নতুন দাঙ্গা-হাঙ্গামা চালাইয়া যাইতেছে স্বদর্পে। দেশে এখন সোনার ছেলেদের জন্য সাত খুন কেন একশত খুন মাফ! আগে মাফ ছিল জাবি’র মানিকের ধর্ষণ সেঞ্চুরির মত কুকর্ম। এসবের কোন বিহিত করিবার জন্য আপনার কোন চিন্তা-ভাবনা আছে কিনা জাতিকে আদৌ জানাইবেন কিনা?’

৫. ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে নিরাপরাধ বিরোধী নেতাদের মারিতে আর কত কায়দা-কানুন করিবেন তা জানাইবেন? আর আপনার দলের মধ্যে যাহারা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে যোগ দিয়াছেন ও আপনার দলে লুকাইয়া রহিয়াছে যাহারা প্রকৃত যুদ্ধপরাধী তাহাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিবেন কখনো খোলাসা করিয়া জানাইবেন কিনা?’

৬. ‘দুর্নীতিতে যাহারা চ্যাম্পিয়ন হইয়াছেন তাহাদের জন্য দেশপ্রেমিক সহ আরো কি কি পুরস্কার রাখিয়াছেন দয়া করিয়া তাহা জানাইবেন কিনা?’

৭. ‘ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকিবার তরে বিচারপতি অভিসংশোধন ও গণকন্ঠ রোধের লক্ষ্যে সংবাদপত্রের নীতমালার মত আরো কত নীতিমালা মরিবার আগে আমাদের স্বচোখে অবলোকন করিয়া যাইতে হইবে তাহা মেহেরবানী করিয়া জানাইবেন কি?’

চিঠির শেষে লেখা হয়েছে:
‘মহোদয়ার কাছে আরো অনেক প্রশ্ন থাকিলেও আজ আর না বাড়াইয়া ইতি টানিতে চাই। তবে শুনিতেছি যাহারা এইভাবে খোলা চিঠি লিখেন বা মুল কর্তাব্যক্তিকে বেশি বেশি প্রশ্ন করেন তাহাদের প্রধানকর্তার তরে কটুক্তির কারণে নাকি জেল জরিমানা করা হয়। আমি চেষ্টা করিয়াছি নির্বাহী কর্তার তরে যাতে কোন কটুক্তি না হয়, শুধু ঘটনার বিবরণ দিয়া কিছু প্রশ্নের অবতারনা করিয়াছি মাত্র। আশা করি ওনার পড়ার সুযোগ না হইলেও ওনার ভক্ত-অনুরক্তরা পড়িয়া আসল ঘটনা বুঝিয়া লইবেন। নকল কাম বাদ দিয়া আসল কামে হাত দিবেন।
ইতি
আপনার হিতাকাঙ্খী
আবদুল জব্বার
কেন্দ্রীয় সভাপতি
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।’

রাজনীতি শীর্ষ খবর