‘পুঁজিবাজার স্বাভাবিক থাকলে পদ্মা সেতুর জন্য হাত পাততে হতো না’

‘পুঁজিবাজার স্বাভাবিক থাকলে পদ্মা সেতুর জন্য হাত পাততে হতো না’

পুঁজিবাজারে গতি স্বাভাবিক থাকলে আজ পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে হাত পাতা লাগতো না বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা।

আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য এখনই পুঁজিবাজার, দ্রব্যমূল্য, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ খাতসহ বিভিন্ন সমস্যা দূর করার আহবান জানিয়েছেন তারা।

সংসদ সদস্যরা যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও এর সহযোগীরা ‘বাংলাদেশ নামক গাড়ির প্লাগের ময়লা। এ ময়লা পরিষ্কার করতে না পারলে ‘বাংলাদেশ গাড়ি’ চলবে না।

সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ সম্পর্কে আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে সরকারকে কয়েকটি বিষয়ে সর্তক হওয়ার আহ্বান জানান সংসদ সদস্যরা।

আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, শাহিদা তারেক দীপ্তি, মহসিন আলী, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, জাসদের মইনুদ্দীন খান বাদল, জাতীয় পার্টির এম হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, আনিছুল ইসলাম মন্ডল।

রাষ্ট্রপতির ভাষণের আলোচনায় অংশ নিয়ে মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য দশম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ এই সরকারের আমলেই জঙ্গিবাদ নির্মূল ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সরকারের নেওয়া সকল উ্ন্নয়নমূলক কাজগুলোকে যে কোনও মূল্যে আগামী নির্বাচনের আগেই শেষ করতে হবে। বিদ্যুতের সংযোগ বাড়াতে হবে। অন্যথায় জনগণকে সন্তুষ্ট করা যাবে না। ’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যাখাতে সমন্বয়হীনতা কাজ করছে। স্থাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি করা প্রয়োজন। এ বিষয়টিকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এমপিওভুক্তি নিয়ে বর্তমানে দেশের শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। পর্যায়েক্রমে বেতন কাঠামো সমন্বয় করে শিক্ষকদের হতাশা দূর করতে হবে। খাদ্যে ভেজাল নিয়ে সংসদে একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। পরবর্তীতে ২ মাসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট পেশ করার কথা ছিল। কিন্তু এখনও এটির কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। কারণ ভেজাল আজ জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এছাড়াও দ্রব্যমূল্যকে আমাদের যে কোনও মূল্যে কমিয়ে আনতে হবে। দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য সাধারণ মানুষ খুবই কষ্টে আছে। এসব সমস্যাগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে সরকারকে সমাধানের পথ বের করতে হবে। অন্যথায় আগামী নির্বাচনে ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে।’

সরকারি দলের আরেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ নিয়ে আশা প্রকাশ করলেও হতাশা প্রকাশ করেন পুঁজিবাজার নিয়ে।

তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। কী কারণে পুঁজিবাজারের এ অবস্থা হয়েছে তার বিশদ ব্যাখ্যায় যেতে চাই না। তবে পুঁজিবাজার নিয়ে কিছু প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। একটি সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু এখনও তার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়টিকে অবহেলার চোখে দেখলে হবে না। পুঁজিবাজার বুঝি না-সরকারের মুখে এ ধরনের কথা শুনতে চাই না।’

তিনি বলেন, ‘পদ্মাসেতু নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগ থেকে বিশ্বব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আজ পুঁজিবাজার চাঙ্গা থাকলে পদ্মাসেতু নির্মাণে অণ্যের মুখাপেক্ষী হতে হতো না। সুযোগ নিয়ে বিশ্বব্যাংক নতুন নতুন শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।’

আব্দুর রহমান বলেন, ‘২০১০ সালে যখন পুঁজিবাজার উর্ধ্বমুখী ছিল ওই সময়ে তিতাস গ্যাসের শতকরা ৮০ ভাগ শেয়ার ছিল সরকারের। প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী পুঁজিবাজারকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে নিদের্শনা দিয়েছেন কিন্তু শেয়ারবাজারের চিত্র বদলে যায়নি। কিন্তু ওই সময়ে পুঁজিবাজার চাঙ্গা অবস্থায় থাকায় তিতাস থেকে আয় হয় ১৭ হাজার কোটি টাকা। যদি পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতো তাহলে পদ্মাসেতুর জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে হাত পাতা লাগতো না।’

জাতীয় পার্টির হাফিজউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘সংসদে গঠনমূলক কোনও আলোচনা হয় না। সর্বদা একে অন্যকে দোষারোপ করে বক্তব্যে রাখছেন। আজ যদি সরকার ও বিরোধী দল সম্মিলিতভাবে কাজ করতো তাহলে দেশ এগিয়ে যেত। কিন্তু আমাদের দেশে উল্টো। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পুরো চিত্রই ভিন্ন।’

সরকার ও বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় আছেন তাদের একটাই লক্ষ্য, যে কোনও মূল্যে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে হবে। একইভাবে বিরোধী দলও চাইছে যে কোনওভাবে সরকার গঠন করতে হবে। কিন্তু কোনও পক্ষই দেশ ও জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে না।’

জাসদের মইনুদ্দীন খান বাদল সরকারকে সতর্ক করে বলেন, ‘কোথায় যেন হালকা কুয়াশার মতো অহঙ্কার দেখা যাচ্ছে। এটা ভালো হবে না। সমালোচনাকে সরকারের আত্মস্থ করতে হবে। তাহলে আমরা উন্নতি করতে পারবো।’

বাংলাদেশ