বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪ হাজার ৬৪৫ দশমিক ৫১১ একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। এ বিভাগের দখলে থাকা অব্যবহৃত খালি জমি ১৩ হাজার ৪২৩ দশমিক ২৪৩১ একর। অর্থাৎ রেলওয়ের এক-তৃতীয়াংশ জমি কাজে লাগানো হচ্ছে না। অথচ এ বিভাগ বছরের পর বছর লোকসান গুনছে।
রেলওয়ের অবৈধ দখলে থাকা জমি সম্পর্কে রেলপথ বিভাগের মহাপরিচালক মো. আবু তাহের দৈনিক ডেসটিনিকে বলেন, যেসব জমির ওপর দিয়ে রেল চলে সেগুলো কেউ দখল করতে পারে না। অবৈধ দখলে থাকা জমিগুলো সাময়িকভাবে আছে। এছাড়া এ বিভাগে যে লোকজন আছে তারা শুধু রেল লাইন মেইনটেইন করে। তিনি বলেন, অবৈধ দখলে থাকা রেলের জমি উদ্ধার একটি চলমান প্রক্রিয়া। উদ্ধারকৃত জমি আবার অবৈধ দখলে চালে যায় লোকজনের অভাব এবং ওই জমি সঠিকভাবে কাজে না লাগানোর জন্য। আর জমি কাজে লাগাতে হলে অর্থের প্রয়োজন সেটা অনেক সময় পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট জমি ৬১ হাজার ৬০৫ দশমিক ৮৪৯ একর। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ২৪ হাজার ৪০১ দশমিক ৬২ একর এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩৭ হাজার ২০৪ দশমিক ২২৯ একর। এসব জমির রেলওয়ের অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ৩০ হাজার ৫১৪ দশমিক ৮ একর। লাইসেন্স প্রদানকৃত জমির পরিমাণ বিশেষ করে বাণিজ্যিক ৯০৯.৮৪ একর, কৃষি ১১০৬৮.৭৫ একর, মৎস্য ৮০০.৫৪ একর, নার্সারি ৩০.৫৫ একর, সিএনজি ১২.৪৭ একর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৪৫.৬৭৪ একর এবং সরকারি, আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৬৫.১৯০৯ একর জমি রয়েছে।
এদিকে, রেলওয়ের ১৩ হাজার ৪ শত ২৩ দশমিক ২৪ একর জমি অব্যবহৃত খালি অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ৩ হাজার ১৮৯ দশমিক ৪৭ এবং পশ্চিমাঞ্চলে ১০ হাজার ২৩৩ দশমিক ৭৬ একর। এসব জমি কোনো কাজে লাগানো হচ্ছে না। কাজে লাগানোর কোনো পরিকল্পনাও আপাতত নেই। অথচ রেল সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ওইসব জমি কাজে লাগিয়ে পুরো রেলখাত লাভজনক করা যায়।
সরকারি এবং বেসরকারি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে অবৈধ দখলে ৪ হাজার ৬৪৫ দশমিক ৫১১ একর জমি। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ১ হাজার ২৪৮ দশমিক ২৩ এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩ হাজার ৩৮৭ দশমিক ২৭ একর। এসব জমি কোথাও দীর্ঘকাল ধরে অবৈধ দখলে রয়েছে। আবার কোথাও সাময়িক। রেলওয়ের আইনে কেউ যদি রেলের জায়গা দখলে রেখে দোকান করে, সে অবস্থায় রেলকর্তৃপক্ষ দোকানদার জারিমানা করে রসিদ দেন এবং তাকে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ওই দোকানদার রসিদ দেখিয়ে কোর্টে মামলা করেন এবং দীর্ঘকাল জায়গা দখলে রাখেন। এছাড়া ক্ষমতাবান লোকের দখলে তো জমি থাকছে।
বাংলাদেশ রেলওয়েতে মূলত ২টি গেজ চালু আছে। একটি মিটার গেজ=১.০০০ মিটার এবং অন্যটি ব্রডগেজ=১.৬৭৬ মিটার। এছাড়া মিটার গেজ ও ব্রডগেজ ছাড়া মিক্সডগেজ বা ডুয়েলগেজও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই তিন ধরনের রেললাইনের পরিমাণ ২ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। এসব পথ পুরনো, পাথরবিহীন, সিস্নপার কম ও নষ্ট হওয়া, অবৈধ দখল, অননুমোদিত লেভেল ক্রসিং ও বৈদ্যুতিক ক্রসিং ইত্যাদি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া অভিযোগ রয়েছে পুরো রেল সেক্টর দুর্নীতির কারণে আগাতে পারছে না।
রেলওয়ে প্রায় ১৫ হাজার জনবল ঘাটতি নিয়ে চলছে। এ কারণে পুরো রেল সেক্টরটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। বর্তমানে জনবলের অভাবে রেলওয়ের শতাধিক স্টেশন বন্ধ রয়েছে। রেল চলাচলের ক্যাপাসিটিও হ্রাস পেয়েছে। অননুমোদিত লেভেল ক্রসিংসহ বিভিন্ন কারণে রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তাই সংস্কারবিহীন ঝুঁকিপূর্ণ এ পথ দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে যেমন গন্তব্যে পেঁৗছাতে পারছে না রেলগাড়ি তেমন অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা এড়াতে পারছে না। এছাড়া পাওয়ার কার, কোচ, ইঞ্জিন ও চালক সংকট এবং দুর্নীতি রেল বিভাগের বেহাল দশাকে আরো চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে।