আল-কায়দা প্রধান আল জাওয়াহিরি তার নতুন ভিডিও বার্তায় ভারত ও তার আশেপাশে সংগঠনের নতুন শাখা খোলার আহ্বান জানানোর পর ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসাম ও গুজরাট-সহ বিভিন্ন রাজ্যে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে। খবর বিবিসির।
বৃহস্পতিবার বিবিসির খবরে বলা হয়, দেশের শীর্ষ নিরাপত্তা সংস্থাগুলির প্রধানরা ইতোমধ্যেই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে এই ভিডিও বার্তা নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন, অবহিত করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীকেও।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে এতদিন তেমন সাড়া না-পেলেও আল-কায়দা যে এবার দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
আল কায়দার ভিডিও যে ভারতকে বেশ দুশ্চিন্তায় ফেলেছে, সেটা বোঝা যায় যখন এদিন দুপুরে দিল্লির নর্থ ব্লকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে ছুটে যান গোয়েন্দা সংস্থা’র ও আইবি-র শীর্ষ কর্মকর্তারা।
সদ্য জাপান থেকে ফেরা জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দাভোলও সেই বৈঠকে যোগ দেন, আর আল জাওয়াহিরির বক্তব্যকে ভারত কতটা গুরুত্ব দেবে তা নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠকের পর আসাম, গুজরাট বা জম্মু-কাশ্মীরের মতো যে সব রাজ্যের নাম ভিডিওতে উল্লেখিত ছিল সেই রাজ্যগুলিকে চরম সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, এতদিন আল কায়দা ভারতে তেমন কোনও সংগঠন তৈরি করতে না পারলেও এখন সেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
দিল্লিতে ইন্সটিটিউট অব পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজের প্রধান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি বলছেন, আফগানিস্তানে দু’দফার যুদ্ধে ভারত থেকে কোনও মুসলিম তাতে প্রায় যোগ দেননি বললেই চলে।
‘যে সব দেশে বিশাল সংখ্যায় মুসলিমরা আছেন, সেদিক থেকে এটা বিরাট ব্যতিক্রম’ তিনি বলেন।
‘পশ্চিমের দেশগুলোই বলুন বা ফিলিপাইন থেকে লিবিয়া, সব জায়গা থেকেই মুসলিমরা আফগান যুদ্ধে গিয়েছিল’ মিঃ ব্যানার্জি বলেন।
তবে অতীতে ভারতীয় মুসলিমরা আল-কায়দার ব্যাপারে অনাগ্রহ দেখালেও এখন পরিস্থিতি পাল্টানোর সম্ভাবনা আছে এবং সে কারণেই ভারতীয় প্রশাসনকে সতর্ক হতে হবে বলে মি ব্যানাজির্র অভিমত।
আইসিসের সঙ্গে টেক্কা
ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের মতো ভারতীয় জঙ্গি সংগঠনগুলো যেহেতু এখন কিছুটা কোণঠাসা , তাই আল কায়দা সেই শূন্যতা ভরাট করতে চাইছে বলেও বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
তারা মনে করছেন ভারতের বেশ কিছু মুসলিম যুবক সমপ্রতি ইরাক এবং সিরিয়ায় তৎপর ‘আইসিসে’ যোগ দিয়ে লড়াই করছে, তাই আল কায়দাও এখন ভারতীয় মুসলিমদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টায় ঝাঁপিয়েছে।
আর আইসিসে-র সঙ্গে টক্কর দেওয়ার জন্য তাদের অনেক নতুন রিক্রুটও দরকার, বিবিসি-কে বলছিলেন ওয়াশিংটন-ভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুকতাদির খান।
‘আরব বসন্তের সময় থেকেই আল-কায়দার গুরুত্ব্ব ক্রমশ কমেছে। কিন্তু এখন আইসিসের আবির্ভাবের পর থেকেই আল কায়দাও নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে চাইছে’ মিঃ খান বলেন।
ভারতে সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে মিঃ আল জাওয়াহিরি চিহ্নিত করেছেন তিনটি এলাকাকে কাশ্মীর, আসাম আর গুজরাট।
গুজরাট ও আসামের গুরুত্ব
ভারত-শাসিত কাশ্মীরে সশস্ত্র তৎপরতার দীর্ঘ ইতিহাস তো আছেই, তবে আসাম ও গুজরাটকে তিনি কেন বেছে নিয়েছেন সেটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, বলছিলেন দীপঙ্কর ব্যানার্জি।
মিঃ ব্যানার্জির মতে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসনের কারণে আসামে মুসলিম জনসংখ্যা দিনে দিনে বেড়েছে, বিশেষ করে পূর্ব আসামে।
অন্যদিকে, গুজরাটে বারো বছর আগে দাঙ্গার ইতিহাস সবারই জানা, যেটায় প্রায় হাজার দুয়েক লোক মারা যান যাদের বেশির ভাগই ছিল মুসলিম।
‘আল কায়দা মনে করছে এই দুটো এলাকাকে নিশানা করলে তাদের সুবিধা হবে’ তিনি বলেন।
আল কায়দার এই আহ্বানে কতটা সাড়া মিলবে, বা ইতোমধ্যেই তারা ভারতের কোনও কোনও জায়গায় পায়ের তলায় জমি খুঁজে পেয়েছে কি না, সেটা বুঝতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
তবে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করারও সময় নেই, এই হুমকির মোকাবিলায় কাজে নামতে হবে আজ থেকেই।