ঢাকা, ২৭ আগস্ট, ২০১৪ (বাসস) : সদ্য ঘোষিত জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করবে- এক শ্রেণীর মানুষের এই আশংকা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার দৃঢ়ভাবে সাংবাদিকতার (মিডিয়া) পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সংবাদ মাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতায় বিশ্বাস না করলে বেসরকারি খাতে এত বেশি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের অনুমতি দিতাম না।
তিনি আজ তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে অসুস্থ, অস্বচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং মৃত সংবাদকর্মীর পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক ভাতা/অনুদান প্রদানকালে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত কমিশন সম্প্রচার নীতিমালার বাস্তবায়ন তদারকি করবে।
সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। যারা কখনোই আমাদের কর্মকা- সমর্থন করেনি এমন অল্পসংখ্যক ছাড়া প্রত্যেকেই এই নীতিমালা পছন্দ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পলিসি ও গাইডলাইন ছাড়া বিশ্বব্যাপী কোন মিডিয়া পরিচালিত হয় না। মিডিয়ার জবাবদিহিতার পাশাপাশি এর স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করে এই নীতিমালা প্রণীত হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি তাঁর সরকারের তথ্য অধিকার আইনের (আর টু আই) কথা উল্লেখ করে বলেন, এই আইন নগণের তথ্য পাওয়ার অধিকার এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ আর্থিক অস্বচ্ছলতার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য ২০১৩ সালে সাংবাদিকদের সহায়তার জন্য দেশে এই প্রথম তহবিল গঠন করে। সরকারি এ তহবিল থেকে এবারে এই অনুদান/ভাতা দেয়া হয়।
চলতি বছর প্রায় ৪৩৭ সাংবাদিককে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রী আজকের অনুষ্ঠানে ১৮১ সাংবাদিকের হাতে চেক তুলে দেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি এই অনুদান প্রাপ্তদের তালিকা প্রণয়ন করে।
তথ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
জাতীয় সংসদে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি আলতাফ মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক কুদ্দুস আফ্রাদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন, প্রেস ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মিলন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বিভিন্ন দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক এবং বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতৃবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার ও প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের সবসময় অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। অনেকে নিহত হন, অনেকে আহত হন ও অনেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব বিবেচনায় তাদের আর্থিক অস্বচ্ছলতার সময় তাদেরকে সহায়তা করতে এই কল্যাণমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়।
সাংবাদিকদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার এই প্রক্রিয়ার কাঠামোগত রূপ নিতে সরকার ইতোমধ্যে একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে। এই তহবিল থেকে সাংবাদিকরা প্রতিবছর অনুদান পাবেন।
সরকার ট্রাস্টের তহবিলে খুব শিগগির থোক বরাদ্দ (সীডমানি) দেবে এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ তহবিলে অন্যান্য বেসরকারি খাত থেকে আরো অর্থ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।