১০ বছরে ৯৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ

১০ বছরে ৯৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় সন্ত্রাসীদের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার পর ১০ বছরে আদালতে সাক্ষ্য নেয়া সম্পন্ন হয়েছে ৯৯ জনের। মামলার চার্জশিট অনুযায়ী আরো ৩৯২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়ার বাকি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান আগামী বছরের ২১ আগস্টের মধ্যেই রায়ের ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছেন।image_95172_0

বুধবার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান প্রসিকিউটর এ প্রতিবেদকের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মোট সাক্ষী ৪৯১ জন।আসামির সংখ্যা ৫২। মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ছয়জন।

২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডির পরিদর্শক ফজলুল কবির ২২ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।আদালত একই বছরের ২৯ আক্টন্বর ২২ আসামির বিরুদ্ধে আভিযোগ গঠন করে। পরে ২০০৯ সালের ৩ আগস্ট রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি পুনঃ তদান্তের নির্দেশ দেন। একই বছর ১৩ আগস্ট মামলার তদান্তভার নেন সিআইডি সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। ২০১২ সালের ১৮ মার্চ বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নতুন ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক আভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন তিনি।

কবে নাগাদ এই মামলার রায় হতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান জানান, “এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। তবে যে গতিতে মামলার কার্যক্রম চলছে তাতে আশা করছি আগামী বছরের আগস্ট মাসের মধ্যে মামলাটির একটা বিচার নিষ্পত্তি হতে পারে।

মামলায় এ পর্যন্ত নেয়া সাক্ষ্য থেকে আসামিদের সাজা হতে পারে কি না প্রশ্নে উত্তরে তিনি বলেন, “দেখুন, সাজা হওয়া না হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে বিচারকের ওপর। তবে মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত ও গঠিত অভিযোগ,  রাষ্ট্রপক্ষে আমাদের বক্তব্য, মামলার আলামত, এ পর্যন্ত সম্পন্ন  সাক্ষ্য এবং আসামিদের পক্ষে সাক্ষীদের করা জেরার ধরনের ওপর ভিত্তি করে আমি বলতে পারি যে, আমরা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছি। সাক্ষ্য ও জেরার এই গতি-প্রকৃতি অব্যাহত থাকলে আমরা আসামিদের সাজার ব্যাপারে আশা করতে পারি।”

২০০৮ সালের ১১ জুন ২২ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক ফজলুল কবির যে চার্জশীট দেন তাতে তারেক রহমানের নাম ছিল না। কিন্তু ২০১২ সালের ১৮ মার্চ দ্বিতীয় দফায় তারেক রহমানসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সম্পূরক চার্জশিটে যাদের নাম এসেছে তদন্তের মাধ্যমেই তাদের নাম এসেছে। নতুন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে বলেই তদন্ত কর্মকর্তা তাদের নামে চার্জশিট দিয়েছেন। গ্রেনেড হামলার আগে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সাথে মিটিং হয়েছে, হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের উপস্থিতিতে মিটিং হয়েছে। ওই সব মিটিংয়ে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। তাদের আশ্বাস ও সার্বিক সহায়তায়ই এ বর্বরোচিত হামলা হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রের অস্ত্র আর্জেস গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। যারা এই অপরাধের সাথে জড়িত, তাদের নামে চার্জশিট দেওয়াটাকে কোনো বিবেচনাতেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলা যাবে না। বরং যারা এটা বলেন তারাই রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে বহু নিরপরাধ মানুষকে আহত ও হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তাদের এ বক্তব্য সত্যের অপলাপ।”

শেষে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে চিরতরে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য, শেখ হাসিনাকে হত্যা করার জন্য অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের জনসভায় সন্ত্রাসীরা ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায়। হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলাষয়ক সম্পাদিকা ও প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। আহত হন শতাধিত নেতাকর্মী।

বুধবার (২০ আগস্ট) এ মামলায় তৎকালীন মতিঝিল থানার এসআই এবং জব্দ তালিকার প্রস্তুতকারক মিজানুর রহমান খন্দকারের সাক্ষ্য গ্রহণে করেছেন ট্রাইব্যুনাল। জবানবন্দী প্রদান শেষে আসামিপক্ষে তাকে আংশিক জেরাও করেন আইনজীবীরা। জবানবন্দি ও জেরা গ্রহণ করেন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শাহেদ নুর উদ্দিন।

আদালতের অন্যতম পাবলিক প্রসিকিউটর আকরাম উদ্দিন শ্যামল জানান, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সার্জেন্ট মশিউর রহমান খন্দকারের ডিউটি থাকলেও তাকে কোনো ডিউটি দেয়া হয়নি। সার্জেন্ট মারুফুল ইসলামকে ডিউটি দেয়া হলেও তাকে পরে ডেকে নেয়া হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণকালে জামিনে থাকা আসামি খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালে হাজির হন।

অন্যদিকে সাবেক মন্ত্রী জামায়াত নেতা আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২৫ জনকে জেলহাজত থেকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপির নেতা কাজী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জন আসামি পলাতক আছেন।

এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি এজাহার দায়ের করেন।

বাংলাদেশ