একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাউকে অবৈধভাবে আটক রাখা হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ।
২০১১ সালের ২৩ নভেম্বর জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশ সরকারের কাছে যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক পাঠানো একটি চিঠির জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
জাতিসংঘের ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের আইনগত সহযোগিতা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। বিচারের পূর্বে আটকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের অবশ্যই আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে। ট্রাইব্যুনাল ৮ জন আসামির মধ্যে ৬ জনকে এক বছরের অধিককাল ধরে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ গঠন ছাড়াই আটক রেখেছে। এটা সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ৯ অনুচ্ছেদ এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদের ৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন।
শনিবার সোনারগাঁও হোটেলে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা জাতিসংঘের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। সে চিঠিতে বিনাকারণে আটক রাখার কথা উল্লেখ আছে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং বিচার কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। সুতরাং এটাকে বিনাবিচারে আটক বলা যাবে না।
তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ১০ বছরও আটক রাখার নজির আছে। যেমন, কম্বোডিয়ায় ছয় বছর আটক রেখেছে। আমাদের দেশে আটক সবাইকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কোনো প্রকার মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে না।
আদিবাসীদের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আইএলও কনভেনশনের ১৬৯ ধারায় বলা আছে, কোনো দেশকে দখলের পর অর্থাৎ কলোনি হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর যারা ওই দেশে বসবাস করে তারাই হচ্ছে আদিবাসী। কিন্তু আমাদের দেশেতো এরকম কোনো পরিস্থিতি হয়নি। আমরা কেন তাদেরকে আদিবাসী বলবো। দেয়ার নট ইনডিজিনিয়াস, দেয়ার ট্রাইব। সাংবিধানিকভাবে তাদের অধিকার রক্ষা করা হয়েছে। সংবিধানের ২৩ (এ) তাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করা হয়েছে।
ডেথ পেনাল্টির ব্যাপারে তিনি বলেন, অনেক আন্তর্জাতিক সংগঠন বলেছে এটা রহিত করার জন্য । ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট দেওয়ার জন্য। আমরা বলেছি আমাদের দেশে আর্থ সামাজিক এখনো ওই অবস্থায় যায়নি। সুতরাং ডেথ পেনাল্টি রহিত করা যাবে না।
তবে মৃত্যুদণ্ড অনেক কমেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার দুর্নীতি দমনে বদ্ধ পরিকর। দুদককে শক্তিশালী করার জন্য আইনের সংশোধনী করা হচ্ছে।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচারবিভাগ স্বাধীন হয়েছে। এ কারণে নির্বাহী বিভাগের ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারের দায়িত্ব পালন করবে না। বিচারের দায়িত্ব পালন করবেন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা।
ধর্ম পালনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিক যার যার ধর্ম সঠিকভাবে পালন করছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আসবে এ ধরনের কোনো আইন সরকার করবে না।
মানবাধিকার কমিশনের ব্যাপারে তিনি বলেন, দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে মানবাধিকার কমিশন ওই বিষয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইঁয়া।
সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রায় ২৪ সচিব উপস্থিত ছিলেন।