দেশে বর্তমানে ৪০ লাখ পরিবার জমি সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়ে রয়েছে। আরো প্রায় ২০ লাখ পরিবার ভবিষ্যতে এ সংক্রান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। আর জমি সংক্রান্ত বিরোধের সঙ্গে সম্পৃক্ত নারীরাই সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে। ব্র্যাক ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধে আর্থ-সামাজিক ক্ষতি’ বিষয়ক এক গবেষণার প্রাথমিক পর্যায়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ব্র্যাক এইচআরএলএস ও প্রোপার্টি রাইটস ইনিশিয়েটিভ (পিআরআই) আয়োজিত এক সেমিনারে গবেষণার এই তথ্য উপস্থাপন করেন পিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান ও বিশেষ অতিথি ভূমি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারপারসন আহমেদ মুশতাক রাজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন পাওয়ার এন্ড পার্টিসিপেশন রিসোর্স সেন্টারের নির্বাহী প্রধান ড. হোসেন জিল্লুুর রহমান, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুল মান্নান, পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচারক ড. আহসান এইচ মনসুর, ব্র্যাকের ইডির উপদেষ্টা ড. মাহবুব হোসেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের হিউম্যান রাইটস এন্ড লিগ্যাল এইড সার্ভিস (এইচআরএলএস) এর পরিচালক ড. ফসটিনা পেরেইরা।
গবেষণায় বলা হয়, জমি সংক্রান্ত প্রায় ২০ লাখ মামলা রয়েছে আদালতে। দেশের প্রতি পাঁচটি পরিবারের একটি জমি সংক্রান্ত বিরোধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব পরিবারের জমি বিরোধে যে ব্যয় হয় তার ৫০ থেকে ৬০ ভাগই দিতে হয় আইনজীবীকে। জমি সংক্রান্ত সহিংসতাও বাংলাদেশের জন্য এখন গুরুতর ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের সাড়ে ৭ শতাংশ পরিবার জমি বিরোধের কারণে সহিংসতার শিকার হয়েছে। তবে নারীদের সহিংসতার শিকার হওয়ার ঘটনা অনেক বেশি।
গবেষণায় বলা হয়, দেশের প্রায় অর্ধৈক জমি বিশেষ করে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির বেশিরভাগই নিবন্ধন ছাড়া। অনিবন্ধিত জমির চেয়ে নিবন্ধিত জমির বিরোধ অনেক কম। জমি সংক্রান্ত বিরোধ কমাতে গবেষণায় সুপারিশের মধ্যে রয়েছে— জমির নিবন্ধনের হার বৃদ্ধি, ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আরো সমন্বয় বৃদ্ধি এবং ভূমি রেকর্ড পদ্ধতি যুগোপযোগীকরণ।
ড. মশিউর রহমান বলেন, জমির মূল্য বৃদ্ধির কারণেই অনেকে আইনের তোয়াক্কা না করে তা জবর-দখলের চেষ্টা চালায়। পূর্ণাঙ্গ গবেষণায় নৃতাত্ত্বিক বিষয়গুলোও যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।
মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, লাখ লাখ মামলা আদালতে পড়ে আছে। ভূমি সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সূত্রিতার জন্য এখন অনেকে আদালতে যেতে চায় না। ভূমি বিরোধ তৈরির ক্ষেত্রে দুর্নীতিও একটি বড় কারণ বলে জানান তিনি।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, দালিলিক ও বিচারিক বিষয়গুলো ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ সৃষ্টি করছে। এজন্য ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থার সংস্কার, বিচারিক প্রক্রিয়ার সংস্কার ও গরীবদের আইনি সহায়তা প্রদানের উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।