সম্প্রচার নীতিমালায় সম্প্রচার সম্পর্কিত অনেক খুঁটি-নাটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যে সব ব্যাপারে দেশের প্রচলিত আইনেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা রয়েছে। বর্তমানে সে সব আইনের প্রয়োগে হয় কেবলমাত্র সরকার বা সরকারি দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। নতুন সম্প্রচার নীতিমালার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেজন্যেই নতুন সম্প্রচার নীতিমালা সরকারের হাতে জনমত দলনের একটি নতুন ও ভয়ংকর হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপির চেয়ারম্যান ড. ফেরদৌস আহমদ কোরেশী।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ বীরোত্তম খাজা নিজামউদ্দিন মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় কোরেশী বলেন, “দেশের সম্প্রচার মাধ্যমসমূহের কার্যকলাপ সর্বক্ষেত্রে জনমুখী ও ন্যায়ানুগ নয়। এ ক্ষেত্রে যথাযথ নীতিমালা নির্ধারণ ও তা কার্যকর করা আবশ্যক। এজন্যে যে ‘স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের কথা আমরা প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানাই।”
কিন্তু সেই ‘স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন’গঠন না করেই সরকারি কর্তৃত্বে সম্প্রচার নীতি প্রণয়ন করে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়া হয়েছে। কবে কিভাবে সেই সম্প্রচার কমিশন গঠিত হবে তা নির্দিষ্ট না করে-কমিশন গঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই নীতিমালা কার্যকর করার দায়িত্ব তথ্য মন্ত্রণালয়, তথা, সরকারের হাতে রেখে দেয়ার অর্থ স্পষ্ট।”
“এর ফলে দেশের সম্প্রচার মাধ্যম সমূহকে এখন থেকে সম্পূর্ণরূপে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে থাকতে হবে। সরকার এর মাধ্যমে দেশের সম্প্রচার মাধ্যমের কর্তৃত্ব কার্যত নিজ হাতে তুলে নিয়েছে” বলেও তিনি জানান।
লিখিত বক্তব্যে ড. কোরেশী বলেন, “যেকোনো আইন, বিধি বা নীতিমালার সঠিক বাস্তবায়নের মধ্যেই তার সার্থকতা। সরকার কি উদ্দেশ্যে সেই আইন, বিধি বা নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং কিভাবে তা প্রয়োগ করে তার উপরেই নির্ভর করে সেটি জনবান্ধব হবে, না-কি জন-নির্যাতনের নতুন হাতিয়ার হয়ে আবির্ভুত হবে।”
তিনি বলেন, “বিঘোষিত সম্প্রচার নীতিমালায় কিছু ভালো দিক যেমন রয়েছে তেমনি এতে আছে অসংখ্য অস্পষ্ট ধারা-উপধারা যা সরকার তার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রতিপক্ষকে হয়রানি এবং দমন-পীড়নের কাজে ব্যবহার করতে পারবে।
প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে আমরা মনে করি- সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমেই মিডিয়াকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ব্যবস্থা বিদ্যমান রয়েছে। এজন্যে বিস্তারিত কিছু নীতিমালা প্রণয়ন করা অযৌক্তিক নয়।
তবে সামগ্রিকভাবে দেশের সংবাদ মাধ্যমকে সরকারের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রনে শৃঙ্খলিত করার যেকোনো উদ্যোগ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মৌল চেতনা এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক মনে করি। জাতি কোনো অবস্থাতেই তা মেনে নিতে পারে না।”
কোরেশী বলেন, “এই সরকার সংবাদ মাধ্যমকে কোন দৃষ্টিতে দেখে তা সরকারের মন্ত্রীদের কারো কারো সাম্প্রতিক মন্তব্যে যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে। তা খুবই উদ্বেগজনক। সেই মনোভাব নিয়েই যদি সম্প্রচার নীতিমালা জারি করা হয়ে থাকে তাহলে তাকে আমরা অবশ্যই ‘অশনি সংকেত’হিসেবে দেখব।যা এই সরকারেরই পূর্বসূরি সরকারের ১৯৭৪-’৭৫ সালের সংবাদপত্র দলন ও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার ভয়ংকর দিনগুলির কথা মনে করিয়ে দেয়।”
আমরা আশা করবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তেমন আত্মঘাতী পথ পরিহার করবেন। যার জের এই এখনো টানতে হচ্ছে। সংবাদপত্র দলনের সেই কালো দিনগুলির কথা মনে রেখে সকল পক্ষকে সতর্ক হতে হবে বলে তিনি জানান।