শোলাকিয়ায় বৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত, সুন্দরবনের জন্য দোয়া

শোলাকিয়ায় বৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত, সুন্দরবনের জন্য দোয়া

প্রতি বছরের মতো এবারও কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগায় অনুষ্ঠিত হয়েছে উপমহাদেশে ঈদ-উল-আযাহার নামাজের বৃহত্তম জামাত।

সকাল ৯টায় শুরু হয় ঈদের জামাত।

এ জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা মো. ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।

মুসল্লিরা দলে দলে ঈদগাহে আসার সময় লাব্বায়িক আল্লাহুমা লাব্বায়িক ধবনিতে চারদিক মুখরিত করে তোলেন।

এ মাঠের রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর ৫ মিনিট, ৩ মিনিট ও ১ মিনিট আগে প্রস্তুতি হিসেবে শটগানের গুলি ছোড়া হয়। নির্ধারিত সময়ের আগেই মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী রাস্তা, ফুটপাত, বাড়ি ঘরের আঙিনায় মুসুল্লিরা জামাতে শরিক হন।

পৃথকভাবে নারীদের জন্য আরও একটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জ এসভি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এতে ইমামতি করেন মাওলানা মোহাম্মদ ছানাউল্লাহ।

ঈদ জামাত উপলক্ষে শহরের ঈদমেলা বসেছিল। স্থানে স্থানে নির্মিত হয় তোরণ, রাস্তার দু’পাশে টাঙ্গানো হয় রঙবেরঙের পতাকা ও ব্যানার। জামাতের আগে-পরে শহর হয়ে ওঠে লোকে লোকরণ্য ও উৎসবমুখর।

শোলাকিয়ায় ঈদের জামায়াতে অংশ নিতে আসা মুসুল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ ও ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ নামে ২টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে।

শোলাকিয়া মাঠের সুনাম শুনে কানাডার টরেন্টো থেকে নামাজ পড়তে আসেন ফয়জুল হক মন্টি (৫০) ও দায়িন হক (২২), নেত্রকোনার মদন থেকে নামাজ পড়তে এসেছিলেন গুনু মিয়া (৪৫)। টাঙ্গাইল থেকে এসেছিলেন অধ্যাপক মফিজুর রহমান (৫০)। এছাড়া অনেক লোকের খোঁজ পাওয়া যায় যারা দীর্ঘদিন ধরে এখানে নামাজ পড়তে আসেন।

আমজনতার সঙ্গে এ মাঠে নামাজ আদায় করেন জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী।

ঈদের নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাতে। এতে বিশ্ব মানবতার শান্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ভাষা সৈনিকসহ যেসব মুক্তিযোদ্ধা জীবন দিয়েছেন সেবসব বীর শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং যারা স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের হেদায়েতের জন্য দোয়া করা হয়। আর যদি হেদায়েত না হয় তাহলে যেন ধ্বংস করে দেওয়া হয়।

এছাড়াও আল্লাহর অপরূপ সৃষ্টি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনের জন্যও বিশেষ মোনাজাত করা হয় যাতে সুন্দরবন পৃথিবীর সপ্তাশ্চার্য নির্বাতি হয়।

সবশেষে দেশ-জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি ও মুসলিম উম্মাহর সংহতি কামনা করে দোয়া করা হয়।

ইতিহাস সূত্রে জানা যায়, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ৬ষ্ঠ বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খান কিশোরগঞ্জের জমিদারী প্রতিষ্ঠার পর ইংরেজি ১৮২৮ সনে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় ৭ একর জমির উপর এ ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন।

জনশ্রুতি আছে যে, শোলাকিয়া ঈদগাহের প্রথম বড় জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশ নিয়েছিলেন। অন্য মতে, মুঘল আমলে এখানে অবস্থিত পরগনার রাজস্বের পরিমাণ ছিল সোয়া লাখ টাকা। উচ্চারণের বিবর্তনে সোয়া লাখিয়া থেকে বর্তমান শোলাকিয়া নামে ঈদাগাহটি পরিচিতি লাভ করে।

১৯৫০ সাল থেকে ওয়াকফ দলিলমূলে হয়বতনগর জমিদার বাড়ির দেওয়ান মান্নান দাদ খান থেকে বংশানুক্রমিকভাবে বড় ছেলেরা শোলাকিয়া ঈদগাহের মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে দেওয়ান ফাত্তাহ দাদ খান মঈন মুতওয়াল্লি ও দেওয়ান মো. রউফ দাদ খান নায়েবে মুতাওয়াল্লির দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

এ হিসাবে আসন্ন ঈদ-উল-আযহার ঈদের জামাতটি হয় ১৮৪তম ঈদের জামাত।

বিশাল এ মাঠে মোট কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে ৫ শতাধিক মুসুল্লি নামাজে অংশ নিয়ে থাকে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর