২৭ বছরে বিষাক্ত প্যারাসিটামলে তিন হাজার শিশুর মৃত্যু

২৭ বছরে বিষাক্ত প্যারাসিটামলে তিন হাজার শিশুর মৃত্যু

১৯৮২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নানা সময়ে বিষাক্ত প্যারাসিটামল খেয়ে কিডনি বিকল হয়ে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত তিন হাজার শিশু। কিন্তু এ পর্যন্ত শাস্তি পেয়েছে শুধু একটি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তাও ঘটনার প্রায় ২২ বছর পর। বিশেষজ্ঞদের মতে, কঠোর শাস্তি ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা না গেলে, এই অপরাধ প্রবণতা কমবে না। খবর ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের।image_91863_0

২২ বছর আগে বঙ্গভবনের চার নম্বর স্টাফ কোয়ার্টারে  মোট ১১ জন শিশু মারা গিয়েছিল বিষাক্ত প্যারাসিটামল খেয়ে। তাদের মধ্যে ছিল লাইলী বেগমের আড়াই বছরের ছেলে রাজীব। প্যারাসিটামলের মতো ওষুধের কারণে ছোট্ট সন্তানের মৃত্যু এখনো মানতে পারেন না লাইলী বেগমসহ মারা যাওয়া শিশুদের মায়েরা।

প্যারাসিটামলে দ্রাবক হিসেবে প্রোফাইলিন গ্লাইকলের পরিবর্তে শিল্পে ব্যবহারের জন্য তৈরি ‘ডাই ইথিলিন গ্লাইকল’ ব্যবহারের ফলেই কিডনি নষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিল শিশুরা। ১৯৮২ সাল থেকেই এ ধরনের মৃত্যু দেখছেন চিকিৎসকরা। অবশেষে ১৯৯২ সালে ঢাকা শিশু হাসপাতালের একজন চিকিৎসক বিষয়টি ধরতে পেরে থাইল্যান্ডে ওষুধের নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন বিষয়টি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর মামলা করে ড্রাগ কোর্টে।

জানা গেছে, তিতা স্বাদকে মিষ্টি বানিয়ে অবুঝ শিশুদের খাওয়ানোর ফন্দি করে বিক্রি বাড়ানোর জন্যই প্যারাসিটামল সিরাপে মেশানো হয়েছিল বিষাক্ত রাসায়নিক ‘ডাই ইথিলিন গ্লাইকল’। তা ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম দামের এই উপাদান ব্যবহার করে বেশি মুনাফার লোভও পেয়ে বসেছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ডাই ইথিলিন গ্লাইকল মূলত রং, প্লাস্টিক, মুদ্রণ কালি, বলপেনের কালি, সিলপ্যাডের কালিতে দ্রবণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া রেফ্রিজারেটরে অ্যান্টি-ফ্রিজ কিংবা বিভিন্ন পরিবহনে ব্রেক অয়েল বা লুব্রিকেন্টে এই রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ ছাড়াও আমেরিকা, দক্ষিণ আফ্রিকা, স্পেন, ভারত, নাইজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, হাইতি, চীন, পানামাসহ আরো কয়েকটি দেশে প্যারাসিটামলে এই ‘ডাই ইথিলিন গ্লাইকল’ ব্যবহারে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল। এ ছাড়া  ১৯৮৫ সালে বিভিন্ন দেশে ওয়াইন এবং ২০০৭ সালে সারা বিশ্বে টুথপেস্টে এই  বিষাক্ত ডাই ইথিলিন গ্লাইকল মিশ্রণের ফলে মানুষের মৃত্যু ঘটে।

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বিদ্যমান আইন সংশোধন প্রয়োজনের কথা জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

অন্যান্য