‘দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। দুশ্চিন্তার কারণ নেই। গত অর্থবছরে ২৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর আগের বছর ছিল ১৬ বিলিয়ন ডলার। ২৬ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০১১-১২ অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে। আমরা রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছি।’
শুক্রবার বিকেলে বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (সিআইটিএফ) উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
চলমান অর্থনীতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমদানি-রপ্তানির মধ্যে ৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার পার্থক্য ছিল। এরমধ্যে ১২ বিলিয়ন ডলারের মতো রেমিটেন্স এসেছে প্রবাসীদের কাছ থেকে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যথেষ্ট।’
বাণিজ্যিক ব্যাংকের তারল্য সংকটকে সাময়িক ব্যাপার উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কর ও অন্যান্য খাতে সরকার যে আয় করছে খরচ তার চেয়ে বেশি। তাই সরকার ঋণ নিয়েছে। এটা সাময়িক ব্যাপার। আমার বিশ্বাস ব্যাংকের তারল্য সংকট কেটে যাবে। ইতোমধ্যে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য স্থিতিশীল হচ্ছে।
বর্তমান সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সরকার ব্যবসা করতে আসেনি। সরকার ব্যবসায়ী নয়। ব্যবসায়ীরাই ব্যবসা করবেন। নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের চার লেনে উন্নীত করার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
সত্যিকার অর্থে দেশে সমুদ্রবন্দর নেই উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর করার জন্য সরকার চেষ্টা করছে। চট্টগ্রাম বন্দর মূলতঃ কর্ণফুলী নদীর ওপরই গড়ে উঠেছে।
নিজস্ব অর্থায়নে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার নির্মিত হওয়ায় চিটাগাং চেম্বার নেতৃবৃন্দকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সরকার প্রয়োজন হলে সব ধরণের সহযোগীতা দেবে।
চা নিলাম কেন্দ্র শ্রীমঙ্গলে স্থানান্তরের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সিলেট চেম্বার প্রস্তাব দিয়েছে। দেশ ও ব্যবসায়ীদের কল্যাণে এ ব্যাপারে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠান শুরুর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে ২০তম সিআইটিএফ’র উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে পলোগ্রাউন্ড মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম -১০ আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ এবং এফবিসিসিআই’র সভাপতি একে আজাদ।
চট্টগ্রাম চেম্বারকে দেশের সবচেয়ে ধনী চেম্বার উল্লেখ করে এফবিসিসিআই’র সভাপতি বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ঢাকা চেম্বারও করতে পারেনি। এটাকে কাজে লাগাতে হবে।’
বাণিজ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা যখন ঋণ নিয়েছিল তখন চুক্তি হয়েছিল ১২ থেকে ১৪ শতাংশ সুদ দেব। এখন কাউকে না জানিয়ে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ সুদের হার করা হয়েছে। তাহলে অর্থ মন্ত্রণালয় কেন? অতীতে যে শর্তে ঋণ নিয়েছি তা ব্যাংক ভঙ্গ করতে পারবে না। এটা দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।
একে আজাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান ও ব্রাজিলে আমাদের পণ্যের অনেক চাহিদা আছে। কিন্তু গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে সেই চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না।
দেশি-বিদেশি বাণিজ্য মেলায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে মহিলা উদ্যোক্তাসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের জন্য কোটা চালু করার দাবি জানান।
সাংসদ এমএ লতিফ বলেন, আমাদের ইনসিনসিয়ারিটির কারণে জাতি পঙ্গু হয়ে গেছে। কর্মসংস্থানের অভাবই এখন জাতির প্রধান সমস্যা।
চট্টগ্রাম চেম্বার সারা দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করে আসছে বলে অভিমত দেন তিনি।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুবুল আলম, সিআইটিএফ কমিটির চেয়ারম্যান মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম প্রমুখ।
চেম্বার সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, সিআইটিএফ বেসরকারি খাতে দেশের বৃহত্তম মেলা। শিল্পায়ন ও বাজার সৃষ্টিতে এ মেলা ভূমিকা রেখে আসছে। বহুমাত্রিক সম্ভাবনাময় চট্টগ্রামে বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি।
আগামী জুনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চিটাগাং চেম্বারের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের উদ্বোধন হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
মাহবুবুল আলম বলেন, শতবর্ষী চিটাগাং চেম্বার ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে আসছে। বাণিজ্য মেলা পণ্যের গুণগতমান তুলে ধরার প্লাটফরমে পরিণত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সহকারী হাইকমিশনার সোমনাথ ঘোষ, চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কমিশনার মো. আবুল কাশেম, ঢাকা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন, চেম্বার পরিচালক মোরশেদ আরিফ চৌধুরী, মোঃ শাহীন আলম, মো. জহুরুল ইসলাম, আশিক ভূঁইয়া, অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন, ফরিদ আহমদ চৌধুরী, এসএম নুরুল হক প্রমুখ।
মো. নুরুন নেওয়াজ সেলিম বলেন, ২০তম বাণিজ্য মেলায় ১০টি প্রিমিয়ার গোল্ড প্যাভিলিয়ন, ৪টি মিনি মেগা প্যাভিলিয়ন, ৮টি প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, ১৬টি স্ট্যান্ডার্ড প্যাভিলিয়ন, ৮০টি মেগা বুথ, ৯৭টি প্রিমিয়ার মেগা বুথ, ১০টি প্রিমিয়ার গোল্ড বুথ, ৩৮টি প্রিমিয়ার বুথ, ১৪টি স্ট্যান্ডার্ড বুথ ও তিনটি রেস্তোরাঁ।
এবারের মেলায় দেশের অন্যতম স্বনামধন্য মোবাইল অপারেটর ‘রবি’ মেলায় ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা দেবে। এ ছাড়া সিটিসেল মেলা প্রাঙ্গণে বিনামূল্যে টেলিফোন বুথ স্থাপন করছে। পাশাপাশি বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্স লিমিটেড এবারও ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তির ওয়াইফাই অনলাইন সুবিধা দিচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রীর হাতে চিটাগাং চেম্বারের স্মারক (ক্রেস্ট) তুলে দেন চেম্বার সভাপতি মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। প্রবেশ টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা।