টাঙ্গাইলে বহুদিনের পুরনো একটি যৌনপল্লী থেকে হাজারেরও বেশি যৌনকর্মী উচ্ছেদের পর তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে।
তাদের একজন বলেছেন, প্রভাবশালীদের চাপের মুখে তারা তাদের দীর্ঘদিনের জায়গা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
তবে টাঙ্গাইলের মেয়র বলছেন, পল্লীটি উচ্ছেদ করা হয়নি বরং সামাজিক চাপের কারণে ওই পল্লীর বাড়ির মালিকরাই যৌনকর্মীদের বাড়িগুলো ছেড়ে দিতে বলেছেন।
স্থানীয়রা বলছেন, শহরের কান্দাপাড়ায় প্রায় দুশো বছরের পুরনো ওই যৌনপল্লীতে এক হাজারেরও বেশি যৌনকর্মী ছিলেন।
আর যৌনকর্মীরা চলে যাওয়ার পরপরই পল্লীর বাড়ির মালিকরা তাদের ঘর ভেঙে ফেলতে শুরু করেন।
১৯৮৮ সাল থেকে ওই পল্লীতে অবস্থান করছিলেন এমন একজন বলেন, “শনিবার বেলা এগারটার দিকে বলা হয়েছে দু’ঘণ্টার মধ্যে জায়গা খালি করতে। বেলা পাঁচটার মধ্যে মেয়েরা জায়গা ছেড়ে চলে যায়। ভালো হতো যাদের বের করে দেয়া হয়েছে তাদেরকে যদি পুনর্বাসন করা হতো।”
কারা তাদেরকে পল্লী ত্যাগ করতে বাধ্য করেছে এবিষয়ে যৌনকর্মীরা বেশি-কিছু বলতে রাজি হননি।
এমনকি যৌনকর্মীদের সংগঠন নারীমুক্তির সভানেত্রী আকলিমা বেগম আঁখিও এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কিছুদিন ধরেই টাঙ্গাইল অসামাজিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে ওই পল্লী উচ্ছেদের জন্য আন্দোলন চলছিল।
এই কমিটির পক্ষ থেকে এই দাবিতে টাঙ্গাইল শহরের মেয়র সহিদুর রহমান খানের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়।
যৌনকর্মীদের এই উচ্ছেদের ঘটনার সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে মিস্টার খান বলেন, সামাজিক চাপের কারণে পল্লীর বাড়িওয়ালারা যৌনকর্মীদের ঘর ছেড়ে যেতে বলেছেন।
বিষয়টি নিয়ে কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মেয়র খান বলেন, “কেউ যদি স্বেচ্ছায় চলে যেতে চায়, কেউ যদি ভালো হতে চায় বা বাড়ির মালিক যদি ভাড়াটিয়া সরিয়ে দিতে চায় আর কেউ যদি আমাদের না বলে তাহলে তো কারও কিছু করার নেই।”
এর আগে ২০০৬ ও ২০১০ সালেও ওই যৌনপল্লীটি উচ্ছেদের জন্য টাঙ্গাইলের আন্দোলন হয়েছিল।
এবারও ওই একই গোষ্ঠী সম্প্রতি আবার আন্দোলন শুরু করে এবং মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেয়।
আন্দোলনকারীদেরকে টাঙ্গাইলের নাগরিক সমাজ আখ্যায়িত করে মেয়র অবশ্য বলেছেন স্মারকলিপিটি জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠিয়ে দেয়া ছাড়া এ বিষয়ে তার আর কোন ভূমিকা নেই।
এদিকে পুলিশের কাছে পল্লীটি উচ্ছেদের বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি।
যৌনপল্লীটি উচ্ছেদ হওয়ায় আশপাশের বাড়ির মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। – বিবিসি।