জার্মানিই চ্যাম্পিয়ন

জার্মানিই চ্যাম্পিয়ন

germanতীব্র লড়াই, টান টান উত্তেজনা। সমানে সমান লড়াই। গোলও করেছিল তারা। অফসাইডের ফাঁদে তা বাতিল না হলে ফল উল্টোও হতে পারতো। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হলো না আর্জেন্টিনার। বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও ম্যারাডোনা হতে পারলেন না মেসি। ১১৩ মিনিটে মারিও গোৎসার গোলে কেঁপে ওঠে বিশ্ব। কোথাও কান্না, কোথাও হাসি। বাংলাদেশের অর্ধেক বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গিয়েছিল ব্রাজিলের হারে। কাল পুরোটাই শেষ হয়ে যায় আর্জেন্টিনার হারে। তবে জয় হয়েছে মাগুরার কৃষক আমজাদ হোসেনের। তার প্রিয় দল যেমন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তেমনি তার পতাকার ছবি কাল স্থান পায় ফিফার ওয়েবসাইটে। মুহুর্তে তা ছড়িয়ে যায় বিশ্বে।  শিরোপা ছিনিয়ে নেয় জার্মানি। নতুন ইতিহাস গড়েছে জার্মানি। লাতিন আমেরিকা থেকে প্রথম ইউরোপিয়ান দেশ হিসেবে শিরোপা জয় করলো জার্মানি। অতিরিক্ত সময়ের গোলে বিশ্বকাপ জয় করে নিয়েছে জার্মানি। চতুর্থবারের বিশ্বকাপ জয় করলো তারা। দুই জার্মান এক হওয়ার পর এটিই প্রথম শিরোপা তাদের। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যানজেলা মারকেলের মাঠে উপস্থিতি স্বার্থক হয়েছে। ২০০৬-এ নিজেদের মাঠে ও ১০১০-এ দক্ষিণ আফ্রিকার আসরে তৃতীয় হওয়া জার্মানি এবার শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরছে। ১৯৯০-এ ইতালির রোমে আর্জেন্টিনাকে ৮৫ মিনিটে দেয়া গোলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পশ্চিম জার্মানি। এর আগে ১৯৫৪ ও ১৯৭০-এ শিরোপা জয় করে এরাই। এবার টানা তিন খেলায় অতিরিক্ত সময়ে জয় পাওয়ার পর ফাইনালে হার মানলো আর্জেন্টিনা। ১৯৯০-এর ফাইনাল নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও এবার আর বিতর্কের অবকাশ নেই।
এবার অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো অষ্টম খেলা এটি। আর্জেন্টিনা এর আগে অতিরিক্ত সময়ের খেলায় দ্বিতীয় রাউন্ডে সুইজারল্যান্ড, কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়াম ও পরে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে হারায় তারা। টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ ফাইনাল অতিরিক্ত সময়ে গড়ালো। ২০০৬-এ অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলে ফ্রান্সকে হারায় ইতালি। আর ২০১০-এ স্পেন হারায় নেদারল্যান্ডসকে। ফাইনালের গোল দিয়ে বিশ্বকাপে নতুন গোলের রেকর্ড হলো। ১৯৯৮-এর মতো ৬৪ খেলায় এবারও গোল হলো ১৭১টি।
গোল্ডেন গ্লাভস জিতেছেন জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার। শিরোপা জিততে না পারলেও সেরা খেলোয়াড়ের গোল্ডেন বল জিতেছেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ছয় গোল দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা কলম্বিয়ার হামেস রদরিগেস।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে খেলা গতিশীল ছিল। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপভোগ্যই ছিল। বল নিয়ে কেউ সময় কাটানোর সুযোগ পায়নি। তবে ফাউল করে খেলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় তুলনামূলক বেশি। নামি-দামি খেলোয়াড়দেরও হলুদ কার্ড দেখাতে বাধ্য হন ইতালিয়ান রেফারি। শোয়েস্টোইগার, মাসচেরানো, আগুয়েরো, হিগুয়েইন রেফারির কোপানলে পড়েন।
প্রথমার্ধে আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের খেলায় সম্ভাবনা তৈরি হলেও কোন গোল পায়নি কোন দলই। অন্তত ১-১ হতে পারতো ফল। দু’দলই সহজ সুযোগ হারায়। তবে ১১৩ মিনিটের সময় জার্মানির জালে প্রথম বল জড়িয়ে বিশ্বব্যাপি আর্জেন্টিনা সমর্থকদের উল্লসিত করে তুলেছিলেন গনজালো হিগুয়েইন। মেসির ক্রস থেকে বল পেয়ে জালে জড়াতে কার্পণ্য করেন নি এই স্ট্রাইকার। কিন্তু সহকারী রেফারির পতাকা ততক্ষণে উত্তোলিত হওয়ায় বেঁচে যায় জার্মানি। অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায় গোলটি। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে সব আর্জেন্টিনা সমর্থক। এ সময় চোট পাওয়া ক্রিস্টোফার ক্রামারের পরিবর্তে মাঠে নামেন আন্দ্রে শুরলা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে লাভেজ্জির পরিবর্তে মাঠে নামানো সার্জিও আগুয়েরোকে। এই অর্ধেও প্রথম সহজ সুযোগ নষ্ট করেন লিওনেল মেসি। ৪৯ মিনিটের সময় বল নিয়ে ডান দিকে দিয়ে ভেতরে ঢুকলেও নয়্যারকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেন নি মেসি। বল গড়িয়ে বারের বাইরে দিয়ে চলে যায়। মেসির কাছ থেকে এমন মিস কমই দেখা যায়। এই অর্ধে ৫৪ মিনিটে জার্মানি একটা সুযোগ তৈরি করলেও তা সহজ ছিল না। এর দুই মিনিট পর নয়্যার বঙের প্রান্তে এসে লাফিয়ে ঘুষি মেরে বল বাইরে না পাঠালে বিপদ হতে পারতো। বলের পেছনে ছুটছিলেন হিগুয়েইন। নয়্যারের সঙ্গে ধাক্কায় তিনি মাটিতে পড়ে গিয়ে পেনাল্টির দাবি করছিলেন। এ আসরে বদলি নেমে তিন গোল করা চেলসি তারকা আন্দ্রে শুরলা এ দিন তেমন ভাল খেলতে পারেন নি। ৭২ মিনিটে হিগুয়েইনকে উঠিয়ে নামানো হয় রডরিগো পালাসিওকে। শেষ ১৫ মিনিট জার্মানি চড়াও হয়ে খেলতে থাকে। ৮০ মিনিটে একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে জার্মানি।  ৫ মিনিট আগে মেসি প্রায় ঢুকে পড়েছিলেন বঙের মধ্যে কিন্তু বোয়াটেং তাকে প্রতিহত করেন। এর একটু পরই বিশ্বকাপে গোলের রেকর্ড করা মিরোস্লাভ ক্লোসাকে উঠিয়ে মারিও গোৎসাকে পাঠান জোয়াকিম লো। আর এ গোৎসাই শেষ সাফল্যটা তুলে দেন গুরুর হাতে।
১৯৮৬-তে প্রথম দেখায় জয়ী হয় ম্যারডোনার আর্জেন্টিনা। চার বছর পর জয়ী হয় জার্মানি। ২৪ বছর পর ফের জার্মানি জিতলো একই ব্যবধানে। আর্জেন্টিনা ৪-৪-২ আর জার্মানি ৪-৫-১ পদ্ধতিতে দল সাজিয়েছে। মেসি আজ ওপরে উঠে খেলবেন। আর্জেন্টিনা তাদের চিরায়ত আকাশি-সাদা জার্সির বদলে নীল জার্সি পড়ে খেলতে নামে। জার্মানদের জার্সি সাদা হওয়ায় অনেকটা জার্সি বদল করতে হয়।
প্রায় ৭৫ হাজার দর্শক মাঠে খেলা দেখেছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বড় পর্দায় কোটি কোটি দর্শক খেলাটি উপভোগ করেন। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্স ও জার্মানির বার্লিন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়ে যায় সকাল থেকেই। কিন্তু শেষ হাসিটা জার্মানিতেই। আর্জেন্টিনা থেকে প্রায় ২০০০০০ দর্শক ব্রাজিলে এসেছিলেন বিশ্বকাপ উপভোগ করতে।
আর্জেন্টিনা দল: রোমেরো, জাবালেতা, দেমিচেলিস, গ্যারাই, রোহো, বিলিয়া, মাসচেরানো, পেরেজ, হিগুয়েইন, মেসি, লাভেজ্জি।
জার্মানি দল: নয়্যার, লাম, বোয়াটেং, হামলস, হাওয়েডস, খেদিরা, শোয়োনেস্টাইগার, মুলার, ক্রুস, ওজিল ও ক্লোসা।

অন্যান্য আন্তর্জাতিক খেলাধূলা শীর্ষ খবর