বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আস্থাভাজন, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গতকাল বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মজিদ ও ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুস সোবহান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গর্ভনরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে ড. আতিউর রহমান এ পরামর্শ দেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দিয়ে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি। সাক্ষাৎ শেষে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে গভর্নরের পক্ষ থেকে এসব পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালিখি হয়েছে। এসব তথ্য নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অনেক প্রতিষ্ঠান তদন্ত করছে। তাদের এ তদন্তের প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি। যার যে অপরাধ যদি চিহ্নিত করা যায় তার পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যবস্থা নেয়া যাবে বলে মনে করেন গভর্নর। এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বেসিক ব্যাংক সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক। ব্যাংকটির প্রতি মানুষের যে আস্থা তা আজ বিলপ্তির পথে। সে আস্থা পুনরুদ্ধার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি এ ব্যাংকের ঋণ শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা দরকার বলেও মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য ঋণ বিতরণের পূর্বে পর্যালোচনা, পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ঋণ বিতরণ করা ও ঋণ আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নামে-বেনামে বা জালিয়াতি করে যেসব প্রতিষ্ঠান বেসিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে তাদের খুঁজে বের করা ও খেলাপি ঋণ আদায়ে গঠিত টাস্ক ফোর্সের কার্যক্রম জোরদার করার পরামর্শ দেয়া হয়। পরিচালনা পর্ষদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্যও গভর্নর পরামর্শ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন এ নির্বাহী পরিচালক। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংকের করা এমওইউ-এর শর্তাবলি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে শর্তাবলি কিছুটা পরিবর্তন ও নমনীয় করার প্রয়োজন আছে বলে বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। পাশাপাশি ব্যাংকটির কর্মকর্তাদের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোন হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানান এ নির্বাহ পরিচালক। বেসিক ব্যাংককে পূর্বের ন্যয় লাভজনক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে করা বৈঠকে গভর্নর আরও কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হলো যেসব শাখার মাধ্যমে বেসিক ব্যাংকের ঋণ বিতরণে অনিয়ম হয়েছে বিশেষত গুলশান, শান্তিনগর, দিলকুশা ও প্রধান শাখা, আগ্রাবাদ ও জুবিলী রোড শাখার সামগ্রিক আর্থিক কার্যক্রম কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। ব্যাংকের ব্যয় সংকোচনের ক্ষেত্রে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন গভর্নর।