দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া।
ঈদুল আযহা উপলক্ষে বিদেশি কূটনীতিক ও বিশিষ্টজনের সঙ্গে ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে সোমবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষকে এখন সব ক্ষেত্রেই কষ্ট করতে হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানুষকে শিশুসহ পরিবারপরিজন নিয়ে রাস্তায় কষ্ট করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারি দলের অন্তর্কোন্দলে নরসিংদীর মেয়র নিহত হওয়ার পর তারা আস্ত ট্রেন পুড়িয়ে দিয়ে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে। এ ঘটনায় নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবীর খোকনকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে আটক করা হয়েছে। অথচ খোকন নির্দোষ।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ উল্লেখ করেন তিনি বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে খোকনের মুক্তি দাবি করছি।’
বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। দেশে খুন, গুম ও গুপ্ত হত্যা চলছে। দেশে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। অথচ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো।
দেশের অর্থনীতিও নাজুক মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এখন পর্যন্ত দেশ পরিচালনায় সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ১৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। অথচ ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে গিয়ে লোন পাচ্ছেন না। আমদানিনির্ভরতা বেড়ে গিয়ে রপ্তানি কমে গেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, আমরা রোডমার্চ করছি, মানুষ এতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিচ্ছে। এতে বোঝা যায়, এ সরকারের প্রতি মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে, এ সরকার অত্যাচারী সরকার, প্রতারক সরকার। এ সরকার পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশের সব খাতে চরম দুর্নীতি চলছে। দেশ আবারও দেশ আবারও দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে। এ সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক, আইডিবি, এডিবি, জাইকা, আইএমএফসহ সব দাতা সংস্থা টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
টেলিফোন খাত ও বিদ্যুৎখাতে চলছে হরিলুটের মহোৎসব। এ সরকারের হাত থেকে দেশ রক্ষার দেশবাসীকে আহ্বান জানান বিরোধীদলীয় নেতা।
তিনি বলেন, কৃষি সেক্টরের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে কিন্তু তারা পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। আমরা যেখানে সারের দাম ২৬০ টাকা বস্তা রেখে এসেছিলাম। এখন সেই সার ১০৬০ টাসা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ তারা নির্বাচনী ইশতেহারে কৃষকদের বিনামূল্যে কৃষকদের সার দেওয়ার কথা বলেছিল।
সরকারি চাকরি থেকে গণহারে ছাঁটাই চলছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের ওএসডি করে রাখা হচ্ছে। ফলে প্রশাসন থমকে গেছে। বিএনপি ক্ষমতায় এলে এসব দক্ষ কর্মকর্তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ নির্বাচন সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এ নির্বাচনে সরকার সংবিধান লঙ্ঘন করেছে বলে তাদের আজ্ঞাবহ সিইসি অভিযোগ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের দাবি অনুযায়ী সেনাবাহিনী না দেওয়ায় আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। সেখানে একদলীয় নির্বাচন হয়েছে। মানুষ সন্ত্রাসীকে ভোট দেয়নি। তবু সেটা এক দলীয় নির্বাচন। নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে মানুষ প্রমাণ করেছে তারা একদলীয় নির্বাচন মেনে নেবে না। তাই অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।’
এ সময় খালেদা জিয়া ঈদের শুভেচ্ছার সঙ্গে ৭ই নভেম্বরের বিপ্লব ও সংহতি দিবসের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন দেশবাসীকে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের রোডমার্চ চলছে, আগামী ২০১২ সাল হবে আন্দোলনের বছর।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি পরিবারের সদস্যদের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে।’
সন্তানদের শারীরিক অবস্থা ভালো নয় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘তাদের সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে।’
‘আপনি কেমন আছেন’- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী হিসেবে দেশের মানুষ ভালো থাকলে আমি ভালো থাকি, তারা খারাপ থাকলে আমিও খারাপ থাকি। তবে পরিবারের সদস্যদের জন্য দুশ্চিন্তা তো থাকেই।’
‘দেশের অবস্থা ভালো নয়, তাই আমিও ভালো নেই’, বলেন খালেদা জিয়া।
এর আগে খালেদা জিয়া বেলা সাড়ে ১২টায় ইস্কাটনের ঢাকা লেডিস ক্লাবে ঢাকায় নিযুক্ত সকল বিদেশি কূটনীতিকের সঙ্গে ঈদের শুভেচছা বিনিময় করেন।
ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চীন-জাপান, সৌদি আরব, ফিলিপিন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা এ সময় খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
কূটনীতিকদের পর এফবিসিসিআই সভাপতি একে আজাদের নেতৃত্বে একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এরপর বিরোধীদলীয় নেতা বিশিষ্টজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জমিরউদ্দিন সরকার, এম কে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হান্নান শাহ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আরএ গনি, শমসের মুবিন চৌধুরী, জয়নুল আবদিন ফারুক, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, তৈমুর আলম খন্দকার, সাবেক কূটনীতিক ইনাম আহমেদ চৌধুরী, ব্যারিস্টার রফিকুল হক, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, জাগপা প্রধান শফিউল আলম প্রধান, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।