অবৈধভাবে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসা পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধমক খেলেন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে আরও বলেছেন, কারা ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তা আমার নলেজে আছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধ ভিওিআইপি ব্যবসা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, অন্যথায় কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার সাপ্তাহিক বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গতকালের বৈঠকে বহুল আলোচিত ফরমালিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৪’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সংসদের চলতি অধিবেশনে এই আইনটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে। মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মাদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সিনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকালের বৈঠকে আলোচ্য বিষয়গুলোর বাইরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। এ সময় তিনি দেশে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা পরিচালনাকারীদের বিষয়ে নিজের কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন। ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে ধমক দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি কারা ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িত। কার ছেলে, কার মেয়ে, কার জামাই এ ব্যবসা করেন সবই আমার জানা আছে।
শেখ হাসিনা ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, দ্রুততম সময়ে এটা (অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা) বন্ধ করেন। না হলে কাউকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর একজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, আইজিডবি্লউ ও আইসিএঙ্রে টাকা যারা মেরেছে তারা যত বড় প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারে লতিফ সিদ্দিকীকে কড়া ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সরকারি দলের নাম ভাঙানো যাবে না। যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যদি সরকারি দলের লোকও হয়, তবু একচুল ছাড় দেওয়া হবে না।
একজন সিনিয়র মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যখন এসব কথা বলছিলেন তখন লতিফ সিদ্দিকী চুপ করে বসেছিলেন। তিনি কোনো শব্দ করেননি। প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ভিওআইপি কল রেট কমিয়ে দিলে এ ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হবে। একাধিক মন্ত্রী বলেন, অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের আত্দীয়স্বজন ও ঘনিষ্ঠজনরা যে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এ বিষয়টা প্রধানমন্ত্রী অবগত আছেন। এ কথা তিনি স্পষ্ট করেছেন। অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসার কারণে সরকার প্রতি মাসে কয়েকশ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। রাজধানী ঢাকা, বন্দনগরী চট্টগ্রাম এবং সিলেটে অবৈধভাবে ভিওআইপি ব্যবসা সবচেয়ে বেশি চলছে। এ ছাড়া দেশের আরও অনেক বিভাগীয় ও জেলা শহরেও এ ব্যবসা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি রাজধানীতে। এখানে প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা ভিওআইপি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যা ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীর জানা রয়েছে। মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসির কতিপয় কর্মকর্তা সুবিধা নিয়ে অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসায়ীদের সুযোগ দিচ্ছেন।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী একজন শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গে টেলিফোনে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে সার্ভিস (আইজিডবি্লউ) ও ইন্টারকানেকশন একচেঞ্জ (আইসিএঙ্) খাত নিয়ে কিছু কথা বলেন। এর আগে সরকারি আরেকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এই খাতে তহবিল সংগ্রহের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জাতীয় পার্টির একজন নেতা ও সংসদ সদস্য এ বিষয়টি সংসদে ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে আনেন। সূত্র জানায়, লতিফ সিদ্দিকীর কিছু টেলিফোন কথোপকথনের রেকর্ড বিভিন্ন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে নেওয়া হয়েছে। যে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অন্য একটি সূত্র জানায়, আইজিডবি্লউ ও আইসিএঙ্ খাত থেকে তহবিল সংগ্রহে মন্ত্রী ও একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী সম্মত হয়েছেন। এ বিষয়টি জাতীয় পার্টির একজন শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিতে এনেছেন। সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন