অবৈধ আমদানি ও খাদ্যপণ্যে ফরমালিন মেশালে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৪’-এ খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। লাইন্সেস ছাড়া ফরমালিন উৎপাদন আমদানি, মজুদ ও বিক্রি করা যাবে না। লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করলে পাঁচ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
গত ৪ নভেম্বর ‘ফরমালিন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৩’-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিপরিষদ। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে গত ২৫ জুন খসড়া আইনে সই করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনেই আইনটি অনুমোদন পেতে পারে। আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন চলবে।
সচিব বলেন, এ আইনের মাধ্যমে ফরমালিন আমদানি বন্ধ হচ্ছে না, তবে এর অপব্যবহার বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। আইনে ফরমালিন মজুদের বিষয়টি রয়েছে। কেউ অবৈধভাবে নিজ বাড়িতে ফরমালিন রাখলে শাস্তি হবে দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ড।
সচিব বলেন, এ আইনের পুলিশ ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে। গ্রেফতারের পর কোনো জামিন পাবে না। এছাড়া মোবাইল কোর্টেও শাস্তির দিতে পারবে।
এর আগে গত বুধবার বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৪’-এর চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে। এরপর জাতীয় সংসদে চলতি বাজেট অধিবেশনে আইনটি পাস হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, নতুন এ আইনের মাধ্যমে ফরমালিন উৎপাদন, আমদানি, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এ ছাড়া আইনে ফরমালিনের ব্যবহার বিষয়ে হিসাব সংরক্ষণের বিধান রাখা হয়েছে।
আইনে বলা হয়েছে, ফরমালিন নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হবে। আইনের অধীনে সংঘটিত অপরাধ আমলযোগ্য, অ-আপসযোগ্য ও অজামিনযোগ্য করা হয়েছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে ফরমালিনকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। এ ছাড়া ফরমালিনের উৎসসহ বিভিন্ন বিষয়ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে নতুন আইনে।
ফরমালিন সাধারণত গবেষণাগার, হাসপাতাল, চামড়াশিল্প, টেক্সটাইল, হ্যাচারি, বোর্ড শিল্প ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইদানীং কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যসামগ্রী, যেমন- ফলমূল, শাকসবজি, মাছ-মাংস পচনরোধে এই রাসায়নিক ব্যবহার করছে। ফলে ফরমালিন-মিশ্রিত খাদ্যসামগ্রী মানুষ গ্রহণ করে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফরমালিন রোধে দেশব্যাপী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।