আরব জগতে পরিবর্তনের হাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, কোন ধরণের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে দেশগুলোতে? গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আপাতত তিউনিসিয়ার নাহদা এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর সবার দৃষ্টি৷
আরব বিশ্বে অনেক বেশি গণতন্ত্রের অর্থ কি রাজনৈতিক মঞ্চে ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠা? তাই যদি হয়ে থাকে তাহলে তার চরিত্র কী হবে? এসব প্রশ্ন এখন অনেকের মনে৷ তিউনিসিয়ার নির্বাচনের পর সেখানে ইসলামিক রাজনৈতিক দল নাহদা বিপুল ভোট পেয়েছে এবং সরকার গঠন করতে যাচ্ছে। এদিকে লিবিয়ার এনটিসির প্রধান মুস্তাফা আব্দেল জলিল জানিয়েছেন, লিবিয়ায় শরিয়া আইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করবে৷
নেদারল্যান্ডসের আইনের অধ্যাপক ইয়ান মিশেল অটো সম্প্রতি একটি জরিপে জানিয়েছেন, পৃথিবীর ১২টি দেশে কিভাবে শরিয়া আইন অনুসরণ করা হয়৷ এসব দেশের রাজনীতিতে ইসলাম ধর্মের প্রভাব চোখে পড়ার মতো৷ লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরো জানান,‘‘শরিয়া আইনের প্রবর্তন করা হলে কেউ জানবে না কী অপেক্ষা করছে সামনে৷” অধ্যাপক মিশেল অটো একটি বই লিখেছেন ‘শারিয়া ইনকর্পোরেটেড’৷ তিনি জানান, পশ্চিমী বিশ্বের অনেক দেশই আতঙ্কিত শারিয়া আইন নিয়ে৷ অথচ ইসলামি আইনের প্রবর্তন অনেক বেশি স্বাধীনতা দিতে পারে মানুষকে৷
তুরস্কের কোনিয়ার সেলচুক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ইয়াসিন আকতায় জানান, শরিয়া আসলে কোনো ধরণের আইন নয়৷ এখানে শুধু অত্যাচার আর শাস্তির কথা বলা হয়েছে তা-ও ঠিক না৷
মধ্যেপ্রাচ্যের অনেক দেশেই শরিয়া আইন মেনে চলা হয়৷ কিন্তু এর পাশাপাশি পশ্চিমী বিশ্বের অনুকরণে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আইনও মেনে চলে দেশগুলো৷ শুধু সৌদি আরব বাদে অন্যান্য দেশগুলোতে বিভিন্ন আইনের সমন্বয় চোখে পড়বে৷ শরিয়া আইনের শাসন কোনো দেশ চাইলে বেশ কড়াভাবে অনুসরণ করতে পারে৷ আবার চাইলে বেশ শিথিলভাবেও এই আইনের প্রবর্তন সম্ভব।
তিউনিসিয়ার নাহদা রোববারের নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে৷ আরব জগতে প্রথম বিপ্লব শুরু হয়েছিল এই দেশটিতেই৷ তিউনিসিয়ার এই দলটি জানিয়েছে, গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা তাদের রয়েছে এবং মানবাধিকারের বিষয়টিও তাদের কাছে বেশ গুরুত্ব পাবে৷
তিউনিসিয়ার সংবিধানে দেশের আনুষ্ঠানিক ধর্ম হিসেবে ইসলামের নাম উল্লেখ করা রয়েছে৷ কিন্তু শরিয়া আইন মেনে চলতে হবে, এমনটা উল্লেখ করা নেই৷ এর আগের সংবিধানটি রচনা করেছিলেন রশিদ ঘানুশি৷ এখন নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব পেয়েছে নাহদা ইসলামিক পার্টি৷ ধারণা করা হচ্ছে, নাহদা যদি শারিয়া আইন প্রবর্তন করতে চায়, তাহলে হয়তো তারা বিরোধিতার সম্মুখীন হবে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।