তারেক রহমানই ভরসা?

তারেক রহমানই ভরসা?

নানা কারণেই গতিহীন বিএনপি। কেন্দ্রীয় নেতারা এখন নানান দোকান নামের ব্যানারে সেমিনার বক্তা। সাংগঠনিক কাজে নেই কেউ। দলের পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃত্ব ধান্দাবাজদের হাতে। ছাত্রদল আছে কি নাই তা বোঝাই যায় না। আন্দোলন চাঙ্গায় নতুন কমিটির কথা বললেও তার খোঁজ নেই। নেতৃত্বের আশায় থাকতে থাকতে ছাত্রত্ব, ধৈর্য সব শেষ। হতাশা এখন তাদের নিত্য সঙ্গী।একই অবস্থা অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনের। দলে এমন কেউ নেই যিনি শেষ কথাটা বলবেন। সংগঠনকে দিক নির্দেশনা দেবেন। আর এসব কিছু খালেদা জিয়া করবেন- এমন যারা আশা করেন তারা হয় রাজনীতি বোঝেন না, নয় নিজেদের দায়িত্ব এড়ানোর মওকা খুঁজেন।image_87515_0

এসব সংকট থেকে বিএনপিকে কে উদ্ধার করবেন- এই প্রশ্নটি এখন বিলিয়ন কোশ্চেন হিসেবে সামনে এসেছে। ঘুরেফিরে দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামই সামনে আসছে। ইদানীং দেশের বাইরে বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে তার বক্তব্য, সবশেষ তথ্যবহুল বইয়ের সম্পাদনা নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছে বলে দলের অনেকেই মনে করেছেন।

এক এগারোর মঈন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময়ে গ্রেফতারের পর অসুস্থত হয়ে পড়ায় তখন থেকে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক। প্রথম দিকে তিনি প্রকাশ্যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেননি। তবে গত নির্বাচনের ঠিক আগ মূহূর্তে দল ও দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে রাজনৈতিক বক্তব্য দেন তারেক। তা নিয়ে কোথাও কোথাও সমালোচনা হলেও সে বক্তব্য তখন নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছিল মনে করা হয়। যদিও আন্দোলনে গতি না থাকায় নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি বিএনপি।

এরপর থেকে প্রায়ই তারেক রহমান বিভিন্ন কর্মসূচিতে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। হয় লন্ডনে না হয় অন্য দেশে। এসব কর্মসূচিতে তিনি সরকারি দলের নেতাদের নানা বক্তব্যের জবাব দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়েও কথা বলছেন। এসব বিষয় নিয়ে নীরব থাকলেও তারেকের বক্তব্যের পর দলের শীর্ষ নেতাদের তা প্রচারে সোচ্চার হতে দেখা গেছে। সভা সমাবেশে তারেকের বক্তব্যের স্বপক্ষে কথা বলতে দেখা গেছে শীর্ষ নেতাদের।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিদেশে অবস্থান করলেও তারেক রহমান প্রতিনিয়ত দলের সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন। পাশাপাশি দল পুনর্গঠনেও নজর রাখছেন। এ কারণে মূল দল ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যর্থ নেতারাও এখন তার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। আবার অনেকে তারেকের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন নেতা ও ব্যক্তিদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি রাজধানীতে একটি বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে নেতাকর্মীদের মধ্যে তারেকের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। কারণ নিজের সম্পাদনা করা বইয়ের প্রকাশনা উৎসব তারেক রহমান লন্ডনে বসে স্কাইপেতে প্রত্যক্ষ করছিলেন বলে জানা গেছে।

ইদানীং নানা মহলে আলোচনা হচ্ছে-বিএনপি এখন আর বিএনপির হাতে নেই। নেতৃত্বের বেশিরভাগ দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন। বিভিন্ন দল ও প্লাটফর্ম থেকে আসা নেতাদের কমিটমেন্ট নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। কোন নেতা কার পারপাস সার্ভ করেন তা নিয়ে ক্রমেই সন্দেহ দানা বাঁধছে।

তবে নেতাদের অনেকে এ বিষয়টি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, সুস্থ হলেই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন এবং দলের হাল ধরবেন। এখন তারা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আন্দোলনে আছেন।

জানা যায়, একক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকলেও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কখনো কখনো তা পারছেন না। এর জন্য অদৃশ্য শক্তিকে দায়ী করা হচ্ছে। সবসময় যারা তার (খালেদা জিয়া) পাশে অবস্থান করছেন তাদেরকেই অদৃশ্য শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করছেন দলের ত্যাগী নেতারা।

অভিযোগ আছে, খালেদার আমলা-উপদেষ্টাদের কেউ কেউ মাসে লাখ লাখ টাকা ভাতা পাচ্ছেন। অথচ দলের বিপদকালে তাদের খোঁজ থাকে না। এমনকি চেয়ারপারসনকে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো পরামর্শ দিতে পারছেন না। যা নিয়ে দলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “গণতন্ত্রের মুখোশ পরে দুটি পরিবারই মূলত বাংলাদেশ চালাচ্ছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারেক রহমান বিএনপির হাল ধরবেন। তবে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন না হলে তিনি (তারেক) দেশে আসতে পারবেন বলে মনে হয় না। আর বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি। যে কারণে এতো বৃহৎ আন্দোলনের পরও ঢাকার রাস্তায় নেতাকর্মীদের পাওয়া যায়নি।”

তবে এখনো নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি সরকার গঠন করতে পারবে বলে মত দেন তিনি।

নির্বাচনের পরও আন্দোলন অব্যাহত রাখার বিষয়ে তারেক রহমানের বক্তব্যকে যৌক্তিক হিসেবে দাবি করছেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী। তিনি বলেন, “আন্দোলন কন্টিনিউ করার ব্যাপারে তারেক রহমানের বক্তব্য যৌক্তিক ছিল। কারণ আন্দোলন চললে এখন খালেদা জিয়া যে সরকারকে অবৈধ বলছেন সে দাবি আরো শক্তিশালী হতো। তখন নির্বাচনের জন্য বিদেশীরা চাপ প্রয়োগ করতো এবং সরকারও বিকল্প চিন্তা করতে বাধ্য হতো।”

বিএনপি এখন আর বিএনপির হাতে নেই- জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, “বিএনপির যেসব নেতাদের টাকা ছিল না, তাদের এখন ঢাকায় ৪০-৫০টি করে ফ্ল্যাট। তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। আর সম্পদে যাতে হাত না দেয় সেজন্য তারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করছে বলে মনে হয়। তাই চাইলেও বিএনপি আন্দোলনে গতি আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। সে কারণে দলে পূনর্গঠনের বিকল্প নেই।”

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের আরেক শিক্ষক অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশের প্রধান দু্টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চার কোনো সুযোগ নেই। এখানে মেরুকরণের রাজনীতি চলছে। সে কারণে সাধারণ মানুষ এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে মৌলিক ধারণার সৃষ্টি হয়েছে খালেদা জিয়ার পরে তারেক রহমান এবং শেখ হাসিনার পর জয় অথবা শেখ রেহানা দলের হাল ধরবেন।” তবে এই ধরনের রাজনৈতিক চর্চা সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য শুভকর নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আর বিএনপি এখন বিএনপির হাতে নেই এমন বক্তব্যে দ্বিতম পোষণ করেছেন অধ্যাপক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “বিএনপি এখনো বিএনপির হাতেই আছে। তবে তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলেরর কারণে সাংগঠনিকভাবে নিজেদের গোছাতে পারছে না। উদাহরণ স্বরূপ- ঢাকা মহানগরে আব্বাস-খোকার দ্বন্দ্ব, কাউন্সিল করে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে ভারমুক্ত করতে না পারা।”

তিনি আরো বলেন, “কেউ কেউ বলছেন-খালেদা জিয়া আমলাতান্ত্রিক উপদেষ্টাদের কারণে দলের বর্তমান পরিস্থিতি। আবার কেউ বলছেন- খালেদা জিয়াসহ অন্যরা একভাবে চেষ্টা করলেও তারেক রহমান অন্যভাবে চেষ্টা করেন। তবে বিএনপিকে অতীতের ভুল শুধরে নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই।”

রাজনীতি