মাঝারি ধরনের একটু বৃষ্টিতেই সোমবার অচল হয়ে গেল রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মগবাজার-মৌচাক-শান্তিনগর। রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনগুলো বিভিন্ন স্থানে আটকের ফলে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ জট। বর্ষা মৌসুমে এ এলাকায় চলাচলকারীদের ভোগান্তি নতুন না হলেও মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের কারণে এটি বেড়েছে বহু গুণ।
মগবাজার মোড়, মৌচাক ও শান্তিনগর এলাকা দিয়ে যাদের যাতায়াত করতে হয়, সোমবার সকাল থেকে তাদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। গন্তব্যে যেতে সুযোগ তৈরির আশায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে ব্যর্থ হয়েছেন। জলাবদ্ধতা না কমায় এবং গাড়ির চাকা না ঘুরায় শেষে জামা-কাপড় গুটিয়ে জুতা হাতে নিয়ে হাঁটু পানিতে হেঁটে যেতে হয়েছে তাদের।
রাস্তার মৌচাক-মগবাজার অংশের মাঝামাঝি জায়গায় ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজের কারণে একপাশ দিয়ে দুই দিকের যানবাহন চলাচল করতে হচ্ছে। এ কারণে একপাশের যানবাহান দীর্ঘ সময় জটের কবলে পড়ছে। একদিকের যান পার হলে অন্য দিকের যানগুলোর যাবার সুযোগ হয়। এতে সময় বাঁচাতে যাত্রীরা গাড়ি থেকে নেমে কাঁদা-মাটি মাড়িয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। এছাড়া ফ্লাইওভারের কাজের কারণে বাংলামোটর থেকে শুরু হয়ে মগবাজার মোড়, মৌচাক ও শান্তিনগর এলাকার রাস্তায় ব্যাপক খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। মোটরসাইকেলসহ ছোট আকারের বিভিন্ন যানবাহন প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
বেসরকারি কর্মকর্তা এজেড খান নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “এক ঘণ্টার বেশি সময় শান্তিনগরে আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে মৌচাকের দিকে যেতে হবে। কিন্তু রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি কমছেই না। গাড়িও চলছে না। এখন দেখছি পানিতে সাঁতরে যাওয়া ছাড়া উপায় নাই।”
পানির কারণে বেশ কিছু গাড়ি রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ির মালিকদের অনেককে মেরামতকারী ও চালক রেখে চলে যেতে দেখা গেছে। বিকল হওয়া একটি গাড়ির চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, “পানির কারছে গাড়িতে সমস্যা হয়েছে। সাহেবের (গাড়ির মালিক) জরুরি কাজ আছে। তাই তিনি চলে গেছেন। ফোন করে মেকানিক এনেছি। গাড়ি সচল না হওয়া পর্যন্ত পানিতে থেকেই কাজ করতে হবে।”
ট্রাফিক পুলিশকেও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে। রমনা জোনের ট্রাফিকের সার্জেন্ট শামসুজ্জোহা নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “গাড়িগুলো পার করে দেয়ার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। ফ্লাইওভারের কাজের কারণে বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দক তৈরি হয়েছে। এতে গাড়িগুলো চলতে সমস্যা হচ্ছে। চালকরা চেষ্টা করলেও গর্তের কারণে রাস্তা দ্রুত পার হতে পারছেন না। কারণ, দ্রুত যেতে চাইলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”
সকাল থেকে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজে দায়িত্ব পালন করছিলেন আরেক সার্জেন্ট আজিজুল হক। তিনি বলেন, “ট্রাফিক বিভাগে আমাদের দায়িত্ব। তাই কষ্ট হলেও কাজ চালিয়ে যেতে হবে।”
ফ্লাইওভার নির্মাণকাজে অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার কারণে রাজধানীবাসী দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন, এমন মন্তব্য ভুক্তভোগীদের। ঢাকা ওয়াসা ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) গাফিলতির অভিযোগও করেন তারা। ভোগান্তি দূর করতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এসব এলাকায় চলাচলকারীরা।