বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া) এবং পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা: মোজাহেরুল হক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিশেষ করে ফরমালিন দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহারের জাতির ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যাবে। ফরমালিন দেয়া খাদ্য খেলে মায়েরা বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারেন। এর পাশাপাশি আমাদের সন্তানেরা বোকা হাবা-গোবা হয়ে যেতে পারে। তিনি খাদ্য ফল-ফলাদিতে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বিশেষ করে ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে রাষ্ট্রকে কঠোর হতে পরামর্শ দেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ও কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে ডা: মোজাহেরুল হক তার এই আশঙ্কার কথা জানান।
খেলাঘরের চেয়ারপারসন অধ্যাপক মাহফুজা খানমের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য দেন ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. শুভাগত চৌধুরী, প্রফেসর ডা. আবু সাঈদ, প্রফেসর ডা. ফজলুর রহমান, সম্পাদক ডা. আজিজুল হক, খাদ্য বিষয়ক জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ডা. লেলিন চৌধুরী, পবার নির্বাহী সদস্য আবুল হাসনাত, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. মোজাহেরুল হক, বাংলাদেশ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের ডা. সমীর কুমার সাহা।
অপরদিকে আইনজীবি ও নীতি বিশ্লেষক সৈয়দ মাহবুবুল আলমের লেখা ‘খাদ্যের বিষাক্ততা : বিদ্যমান আইনসমূহ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খেলাঘরের সম্পাদক লাভলী চৌধুরী।
গোলটেবিল বৈঠকে অন্যান্য বক্তারা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা ও মান রক্ষায় বাংলাদেশের একাধিক সরকারী সংস্থার দায়িত্ব রয়েছে। সরকারের সাতটি মন্ত্রণালয় নিরাপদ ও মানসম্মত খাদ্য নিশ্চিতের সাথে সরাসরি জড়িত। এছাড়া বিভিন্ন অধিদপ্তর ও স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরগুলোর উপরও বিভিন্ন দায়িত্ব সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা রয়েছে। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই। এই সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য লাগামহীনভাবে বিপনন ও বাজারজাতকরণ সম্ভব হচ্ছে। এজন্য জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্য সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের সমন্বয় ও তা দ্রুত কার্যকর করা জরুরি।
বক্তারা বলেন, খাদ্য উৎপাদন, মজুদ, বিপনন, বাজারজাতকরণ, মূল্য নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য মান রক্ষার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, বানিজ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার অধিদফতর, কৃষি অধিদফতর, প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর, মৎস অধিদপ্তর, বিএসটিআই, বিসিএসআইআর এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। এ সংস্থাগুলোর নীতিমালা, আইন ও কার্যপরিধিতে খাদ্য মানরক্ষা সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন পুলিশকে বিভিন্ন আইন বাস্তবাস্তবায়নে সহযোগিতার বাধ্যকতা রয়েছে। এ সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্য লাগামহীনভাবে বিপনন ও বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে খাদ্য সংশ্লিষ্ট আইনসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার।