জুলিয়ান আসাঞ্জ আজ কোথায়?

জুলিয়ান আসাঞ্জ আজ কোথায়?

juliyan assaউইকিলিক্স-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান আসাঞ্জ আজ থেকে দু’বছর আগে লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন এবং আজ পর্যন্ত তিনি সেখানেই। একটি ঘর, একটি বাথরুম আর ইন্টারনেট, এই নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার এই অখ্যাত-অজ্ঞাত মানুষটি উইকিলিক্স ইন্টারনেট ‘হুইসলব্লোয়ার’ প্ল্যাটফর্মের কল্যাণে বিশ্বখ্যাত হয়ে পড়েন। আজ থেকে চার বছর আগেও তিনি মিডিয়ার হিরো, আপামর জনসাধারণের ভক্তে ও প্রশংসার পাত্র এবং একাধিক শক্তিশালী দেশের সরকারবর্গের চোখের বালি ছিলেন এবং শেষোক্ত ক্ষেত্রে সম্ভবত আজও আছেন।
চার বছর পরে সেই ‘হিরো’ যেন ‘জিরো’-তে পরিণত হয়েছেন। কয়জন আর মনে রেখেছে যে, ২০১২ সালের ১৯ জুন আসাঞ্জ লন্ডনে ইকুয়েডরের দূতাবাসে আশ্রয় নেন, যা-তে তাকে সুইডেনের হাতে তুলে না দেয়া হয়। দু’জন মহিলাকে যৌনভাবে উত্যক্ত, ও তাদের একজনের প্রতি যৌন অপব্যবহারের দায়ে সুইডেনের পুলিশ তখন আসাঞ্জের খোঁজে- যে কারণে তাকে ব্রিটেনেও রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হয়নি।
আসাঞ্জ ইকুয়েডরের কাছে রাজনৈতিক নয়, ‘কূটনৈতিক আশ্রয়’ পান। মুশকিল এই যে, ইকুয়েডর এবং ল্যাটিন অ্যামেরিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া আর কোনো দেশ ‘কূটনৈতিক আশ্রয়’-কে একটি সীমিত, স্থানীয় ‘ইউসান্স রাইট’ বা অভ্যাসগত অধিকার হিসেবে মেনে নেয়নি। এর ফলে আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
জার্মানির কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন বিভাগের অধ্যাপক বিয়র্ন শিফবাওয়ার এই অচলাবস্থা সম্পর্কে বলেছেন,  ব্রিটেনে আসলে কূটনৈতিক আশ্রয় আইনবিরুদ্ধ। ইকুয়েডরের (আসাঞ্জকে) কূটনৈতিক আশ্রয় দেয়ার অধিকারই ছিল না। অপরদিকে দূতাবাস ও তার প্রাঙ্গণ গৃহকর্তা দেশের পক্ষে অলঙ্ঘ্য, ব্রিটেনের সেখানে প্রবেশের অধিকার নেই।
এভাবেই ‘কূটনৈতিক আশ্রয়’ পেয়েছেন আসাঞ্জ।
বলতে কি, আসাঞ্জের অতি বড় সমর্থকরাও আজ মনে করেন না যে, তিনি ‘দুনিয়া বদলে দিয়েছেন’। দুনিয়া বদলানো অত সোজা কাজ নয়। তবে উইকিলিক্স থেকে এডওয়ার্ড স্নোডেন হয়ে জার্মানিতে নবপ্রতিষ্ঠিত পাইরেট পার্টির সাফল্য, অপরদিকে এনএসএ কেলেঙ্কারি যাবৎ সরকারি কর্মকাণ্ড আর জনমানসে তার বৈধতা-যৌক্তিকতা সম্পর্কে সন্দেহের টানাপোড়েন- এ সবেরই সূচনা জুলিয়ান আসাঞ্জ নামের এক ব্যক্তির বিপ্লবি চেতনায়, ইতিহাসবেত্তারাও তা আজ নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেন।
নয়ত জুলিয়ান আসাঞ্জ আজ যেন নিজেকে লোকচু থেকে অনেকটা সরিয়ে নিয়েছেন, কিংবা হারিয়ে গেছেন। রুশ টেলিভিশন কেন্দ্র ‘রাশিয়া টুডে’-তে আসাঞ্জের একটি সাপ্তাহিক টক-শো আজও চলেছে। অনুষ্ঠানটির নাম ‘দ্য ওয়ার্ল্ড টুমরো’। নয়ত আসাঞ্জ মাঝে-মধ্যে কোনো ইন্টারনেট কনফারেন্সে অংশ নেন। উইকিলিক্স-এও আর আগের মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়মিত প্রকাশ পায় না।
আসাঞ্জ কি লন্ডনের ইকুয়েডোরিয়ান দূতাবাসেই থাকবেন, না অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় পাবার প্রচেষ্টা করবেন? সেটা যদি বলা সম্ভব হতো, তাহলে আসাঞ্জ আর আসাঞ্জ থাকতেন না।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
আন্তর্জাতিক