সীমান্তে গুলি: বিএসএফ প্রধানের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন!

সীমান্তে গুলি নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) প্রধানের বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম।

নয়াদিল্লিতে শুক্রবার বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের চিদাম্বরম সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএসএফ প্রধানের বক্তব্য নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে এবং তার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’

বিএসএফ প্রধানের বক্তব্য তারা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন জানিয়ে চিদাম্বরম বলেন, ‘সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত বিএসএফ প্রধান ইউ কে বানসালের বক্তব্যের কপি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিএসএফ প্রধানের সর্বশেষ মন্তব্য সম্পর্কে আমাকে অবহিত করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে চিদাম্বরম আমাকে আবারও আশ্বস্ত করেছেন।’

এ বক্তব্যে সাহারা খাতুন আরও বলেন, ‘সীমান্তে হত্যার ঘটনা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে আমাদের তরফ থেকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।’

গত জানুয়ারি মাসের শেষদিকে বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জের বিপরীতে ভারতের মুর্শিদাবাদের রাণীনগর আউটপোস্টে বাংলাদেশি যুবকের নির্যাতনের জন্য বিএসএফ সদস্যদের বিচার চলছে বলে জানান ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে সেদিনের ঘটনায় বিএসএফের ৮ সদস্যকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।’

বিএসএফের ওই সদস্যদের বিচারের আওতায় আনার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন।

বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএসএফ মহাপরিচালক ইউ কে বানসাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই ৮ বিএসএফ জওয়ানের বিচার সামরিক আদালতে হবে।’

সীমান্তে হত্যা বন্ধে বিএসএফকে সর্বোচ্চ নির্দেশনা দেওয়ার দাবি করে চিদাম্বরম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে তিনি দুঃখিত এবং যথাযথ ব্যবস্থার মাধ্যমে এ ধরনের হত্যাকা- শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

গত ৮ মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে চারজন মারা গেছে বলেও জানান তিনি।

সীমান্তে হত্যার ঘটনা কমে এলেও গুলি করার ঘটনার সাফাই গেয়ে চিদাম্বরম বলেন, ‘এ চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় বিএসএফ সদস্যদের এক প্রকার বাধ্য হয়েই অন্য সহকর্মীদের বাঁচাতে গুলি ছুঁড়তে হয়।’

চিদাম্বরম গত ৮ মাসের তথ্য দিলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিএসএফের হাতে সীমান্তে ২০৩ জন বাংলাদেশি মারা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বিএসএফ প্রধান ইউকে বানসাল মন্তব্য করেন, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় বিএসএফ গুলি চালাবেই। তার এ মন্তব্যে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সীমান্তে হত্যা প্রসঙ্গ:

গত বছরের জুলাই মাসে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা চুক্তির পর শুক্রবার দু’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথম বৈঠকে বসেন। ওই চুক্তিটি বাস্তবায়নের ওপরই এবার মূলত বেশি নজর দেওয়া হয়।

বাংলাদেশি নাগরিকদের রাতের বেলা সীমান্তে চলাফেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে বিজিবিকে কঠোর হতে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়।

সীমান্তে যে কোনও ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনায় বাস্তবায়নের ওপর বাংলাদেশের তরফ থেকে জোর দেওয়া হয়।

অনুপ চেটিয়া প্রসঙ্গ:

বাংলাদেশের কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে আটক থাকা উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিতে আরও কিছু আইনি প্রক্রিয়া আছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সাহারা বলেন, ‘অনুপ চেটিয়াকে ফেরানোর বিষয়ে বাংলাদেশেও কিছু আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এ প্রক্রিয়া শেষেই তাকে ফেরত দেওয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একদিনের জন্যও অনুপকে আটক রাখার কোনও ইচ্ছা বাংলাদেশের নেই। বাংলাদেশের আদালতে একটি বিষয় রয়েছে, সেটা নিষ্পত্তি হলেই তাকে হস্তান্তর করা হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এ বক্তব্য দেওয়া হলেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অনুপ চেটিয়া প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া নয়াদিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান।

বঙ্গবন্ধুর ২ খুনি প্রসঙ্গ:

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই আসামি ভারতে পালিয়ে আছেন বলে এবারের বৈঠকেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে জানানো হয়।

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি এদেশে পালিয়ে আছে বলে বাংলাদেশ আমাদের জানিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দু’জনকে খুঁজতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের ওপর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে সাহারা খাতুন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দুই হত্যাকারী ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার  মোসলেহউদ্দিন পশ্চিমবঙ্গের কোথাও আছেন বলে আমাদের সন্দেহ।’

বঙ্গবন্ধুর দুই হত্যাকারীকে আটক করতে পারলে ভারত তাদের বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে বলে জানান চিদাম্বরম। তবে তার আগে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির প্রয়োজন হবে বলেও তিনি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘একে অপরের দেশ থেকে আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির বিষয়ে দুই দেশ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে।’

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ-ভারত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ১২ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। একদিনের বৈঠক শেষে শনিবার তারা দেশে ফিরবেন।

বাংলাদেশ