চলে গেলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক সরদার ফজলুল করিম। রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত পৌনে ১টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন।
তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। রাত দেড়টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেন। গভীর রাতে তার মৃত্যু সংবাদে আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ছুটে যান। এসময় হাসপাতালে শোকের ছায়া নেমে আছে।
হৃদযন্ত্রের সমস্যাজনিত কারণে কয়েক দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ফজলুল করিমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।
এর আগে দিনে তার জামাতা ডা. শাকিল আখতার শনিবার সাংবাদিকদের জানান, বহুমুখী সমস্যায় ভুগছেন তার শ্বশুর। তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। বেশ কয়েকটি অঙ্গ ঠিকমতো কাজ করছে না তার।
স্বাধীনতা ও বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত সরদার ফজলুল করিম ১৯৪৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে স্নাতক এবং ১৯৪৬ সালে স্নাতকোত্তর সনদ নেন। এরপর ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েই দর্শনশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসাবে নিয়োজিত থাকেন।
ছাত্রজীবন থেকেই ‘শোষণমুক্ত ও মানবতাবাদী’ সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলনরত এই লেখক রাজবন্দি হিসাবে দীর্ঘ ১১ বছর কারাভোগ করেন। ১৯৫৪ সালে জেলে থাকাকালেই তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৬৩ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমীর সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষের পদে কাজ করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ১৯৭২ থেকে ৮৫ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখি করেছেন জাতীয় অধ্যাপক সরদার ফজলুল করিম। তার উল্লেখযোগ্য অনুবাদ ও রচনার মধ্যে রয়েছে, ‘প্লেটোর সংলাপ’, ‘প্লেটোর রিপাবলিক’, ‘অ্যারিস্টটলের পলিটিক্স’, এ্যাঙ্গেলসের অ্যান্টি ডুরিং’, ‘নানা কথার পরের কথা’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক’, ‘চল্লিশের দশকের ঢাকা’, ‘নূহের কিশতি’, ‘রুমীর আম্মা’, ‘দর্শনকোষ’, ‘শহীদ জোতির্ময় গুহঠাকুরতা স্মারকগ্রন্থ’, ‘সেই সে কাল’।