নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত ৭ খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন গ্রেফতার হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের রাজধানী কলকাতার উপকণ্ঠে বাগুইহাটির কৈখালির ইন্দ্রপ্রস্থ এপার্টমেন্ট থেকে দুই সঙ্গীসহ তাকে গ্রেফতার করা হয়। ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ১১টায় বিধাননগর পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী সেল তাদের গ্রেফতার করে। বিধাননগর কমিশনারেটের সন্ত্রাসবিরোধী সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অনিশ সরকার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নূর হোসেন এবং তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশ, অস্ত্র আইন এবং জুয়া খেলার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দু্ই সঙ্গীর একজনের নাম সেলিম। তিনি নূর হোসেনের দেহরক্ষীদের একজন। অপরজনের নাম আরিফ বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। আজ রবিবার তাদের বারাসাত আদালতে তোলা হবে। নূর হোসেনকে রাখা হয়েছে বিধাননগর কমিশনারেটের অন্তর্গত বাগুইহাটি থানায়।
এদিকে গতরাতে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নূর হোসেনের গ্রেফতারের বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। যোগাযোগের চেষ্টা করছি। নূর হোসেন গ্রেফতার হলে খুব দ্রুত তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। কারণ আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। ফলে আসামি আনার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে না।
কলকাতা পুলিশ সূত্র জানায়, শনিবার সন্ধ্যায় খবর আসে কয়েকজন অনুপ্রবেশকারী বাগুইহাটির কৈখালির ইন্দ্রপ্রস্থ এপার্টমেন্টে জুয়ার আসর বসিয়েছে। পুলিশ অতর্কিতে সেখানে হানা দিয়ে তাদেরকে আটক করে। এরপর থানায় নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নূর হোসেন তার পরিচয় জানায়। জেরায় নূর হোসেন স্বীকার করে, সে নারায়ণগঞ্জের ৭ খুনের মামলায় অভিযুক্ত। বেশকিছুদিন ধরে কলকাতায় আত্মগোপনে আছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৭এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭জনকে অপহরণ করা হয়। পরদিন নজরুল ইসলামের স্ত্রী নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে ফতুল্লা থানায় মামলা করেন। ৩০ এপ্রিল অপহূতদের ছয়জনের এবং পরদিন আরো একজনের লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভেসে ওঠে।
সাত খুনের ঘটনার পর নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যায়। নূর হোসেনকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অভিযোগে বেনাপোল সীমান্ত এলাকা থেকে ২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। নূর হোসেনকে ধরতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের তরফ থেকেও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হয়।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ খুনের ঘটনায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৮ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে র্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ ১৪জনকে ৭ খুনের ঘটনায় গ্রেফতার দেখানো হয়। অপর ১৪ জনকে দেখানো হয় ৫৪ ধারায়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে র্যাবের দুই কর্মকর্তা মেজর আরিফ এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ড্যান্ট এমএম রানা ও নূর হোসেনের বডিগার্ড চার্চিল আদালতে হত্যাকান্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছেন, নূর হোসেনের ইন্ধনেই এই ৭ খুনের ঘটনা ঘটে।