আজ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস

আজ ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস

dofa6আজ ৭ জুন, ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের আজকের দিনে আওয়ামী লীগ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন তথা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে পূর্ণ দিবস হরতাল আহ্বান করেছিল। প্রদেশজুড়ে অভূতপূর্ব সে হরতালে সাড়া দেয় ছাত্র-শ্রমিক-জনতাসহ সারাদেশের মানুষ। হরতাল বানচাল করতে পুলিশ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে মুক্তিকামী মানুষের মিছিলে গুলি চালায়। এতে ঢাকার তেজগাঁওয়ে শ্রমিকনেতা মনু মিয়া, ওয়াজিউল্লাহসহ ১১ জন এবং নারায়ণগঞ্জে সফিক ও শামসুল হক নিহত হন। আহত হন অনেকেই।

এই দিনটি বাঙালির স্বাধীনতা, স্বাধিকার ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসের অন্যতম মাইলফলক, অবিস্মরণীয় এক দিন।

মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে যেসব আন্দোলন বাঙালির মনে স্বাধীনতার চেতনা ও স্পৃহাকে ক্রমাগত জাগিয়ে তুলেছিল; ছয় দফা আন্দোলন তারই ধারাবাহিকতার ফসল। এরই ধারাবাহিকতায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচনে বাঙালির অবিস্মরণীয় বিজয়, একাত্তরের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৫ মার্চের গণহত্যা এবং ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পথ ধরে দেশ স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যায়। ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে বিশ্ব-মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
ছয় দফা ছিল পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তির একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক সনদ।

এই ছয়টি দফার মধ্যে ছিল-
প্রথম দফা – পাকিস্তানের সরকার হবে যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং সংসদীয়। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভা প্রত্যক্ষ ও সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় আইনসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে।

দ্বিতীয় দফা – যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের হাতে থাকবে কেবলমাত্র দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়াদি।

তৃতীয় দফা – দেশের দুটি অঞ্চলের জন্য দুটি পৃথক অথচ সহজেই বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। এক্ষেত্রে দুই অঞ্চলে একক মুদ্রাও থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ফেডারেল ব্যাংককে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

চতুর্থ দফা – রাজস্বসংক্রান্ত নীতি-নির্ধারণের দায়িত্ব এবং কর ধার্যের ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারগুলোর থাকবে। দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় পরিচালনার জন্য আদায় করা রাজস্বের অংশবিশেষ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেয়া হবে।

পঞ্চম দফা – বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই অঞ্চলের জন্য পৃথক হিসাব রাখতে হবে। প্রাদেশিক সরকারগুলো বিদেশের সঙ্গে বৈদেশিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে পারবে।

ষষ্ঠ দফা – কার্যকরভাবে জাতীয় নিরাপত্তায় অংশগ্রহণের জন্য প্রদেশগুলোকে প্যারামিলিশিয়া বা আধা-সামরিক বাহিনী গঠনের ক্ষমতা দেয়া হবে।

এদিকে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ৬ দফার ভূমিকা অপরিসীম। সে কারণে প্রতি বছর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৭ জুন ‘৬ দফা দিবস’ হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পালন করে থাকে।

তারই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরের মতো এবারও সমগ্র জাতির সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় স্মরণ ও পালন করবে।

৬ দফা দিবসে আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
৭ জুন সূর্যোদয়ের সময় বঙ্গবন্ধু ভবন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন; সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন; বিকেল তিনটায় আলোচনা সভা; ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এমপি এক বিবৃতিতে ৭ জুন ঐতিহাসিক ‘ছয় দফা দিবস’ যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করতে আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সব শাখাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর