রাষ্ট্রপতির বঙ্গ ভবন আজ হুমকির মুখে। দিলকুশায় বঙ্গ ভনের দেয়াল সংলগ্ন একটি ৩০ তলা অবৈধ ও ঝুকিপূর্ণ ভবন রাষ্ট্রপতির ভবনকে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই মন্তব্য করেছেন বঙ্গভবন, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিশেষ শ্রেনীর কেপিআই নিরাপত্তা কমিটির কর্মকর্তারা।
গত বছর ১৮ ডিসেম্বর মন্ত্রণালয়ে বিশেষ শ্রেনীর কেপিআই নিরাপত্তা কমিটির এক সমন্বয়ক সভায় দিলকুশায় অবৈধভাবে ওই ৩০ তলা ভবনের নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করাসহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২২ ডিসেম্বর ওই সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এনএসআই, ডিজিএফআই, এসবি, ডিএমপি ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়।
কিন্তু ওই চিঠির নির্দেশের আলোকে এখনো ‘সানমুন স্টার টাওয়ার’ নির্মাণকারী অস্বাভাবিক ক্ষমতাধর ও ভূমি সন্ত্রাসী বলে খ্যাত মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে আইনগত জোরালো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ রয়েছে, রাজউক এবং ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই প্রশাসনের নাকের ডগায় মিজানুর রহমানের মালিকানাধীন এম আর ট্রেডিং নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এই ভবনটি নির্মাণ করছে।
জানা যায়, মতিঝিল দিলকুশাসহ ওই এলকার ভয়াবহ যানজট নিরসনের উদ্দেশ্যে ২০০৩ সালের ৫ এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দিলকুশায় ৩৭ নম্বর প্লেটের ৪ বিঘা জমির ওপর আধুনিক কারপাকিং এবং বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেন । প্রকল্পটি বিসিআইসি ভবনের সামনে ও বঙ্গভবনের সীমানা প্রাচীরের উত্তরে দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত। এর প্রথম কয়েক তলা গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য এবং বাকি তলাগুলো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য এ প্রকল্পটি নেয়া হয়। এরপর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নিজস্ব অর্থায়নে ওই ভবনের ৫টি ফ্লোর ওই নির্মাণ করে।
এরপরই ওই ভবনের উপর কুদৃষ্টি পড়ে ভুমি সন্ত্রাসী মিজানুর রহমানের। তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকা এবং সিটি করপোরেশনের পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আর. ট্রেডিংয়ের মালিক মিজানুর রহমান কঠিন শর্তে একটি চুক্তি করেন। চুক্তিতে কার পাকিংয়ের ওই ৫ তলা ভবনের ওপরে ২৫ তলা কার পাকিং ও বানিজ্যিক ভবন নির্মানের কথা বলা হয়। ২০০৯ সালে ১২ নভেম্বর মিজানুর রহমানের এম. আর. ট্রেডিং ভবন নির্মাণের কার্যাদেশে বলা হয় ডিসিসির নির্মিত ৫টি ফ্লোরের উপর ২০টি ফ্লোর নির্মাণের অনুমতি দেয়া হয়।
তবে নির্মাণ কাজ শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থা, দফতরের অনুমোদন, ছাড়পত্র গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে ওই ভবনের বিস্তারিত ডিজাইন ড্রইং এবং স্পেসিফিকেশন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সামনে উপস্থাপন করে লিখিত অনুমতির পর নির্মাণ কাজ করতে হবে। কিন্তু ওই চুক্তির পর কার্যাদেশ নিয়েই এম আর ট্রেডিং নির্মাণ কাজ শুরু করে।
গত ৪ বছরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের সামনে চুক্তি অনুযায়ী ডিজাইন, ড্রইং, বিভিন্ন দফতরের ছাড়পত্রসহ আনুষঙ্গিক ডকুমেন্ট উপস্থাপন করেনি। ফলে, তাদেরকে ভবন নির্মাণে চুড়ান্ত কার্যাদেশ দেয়নি সিটি কর্পোরেশন।
এদিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই ভবন নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মফিজুর রহমান খানের স্বাক্ষরিত এক নোটিশে নির্মাণাধীন ওই ভবনকে অবৈধ ঘোষণা করে কোনো সম্পাদিত চুক্তি বাতিল করা হবে না, ৩ দিনের মধ্যে জবাব চেয়েছেন।
অপরদিকে এই চিঠির জবাব না দিয়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এমআর ট্রেডিং হাইকোর্টে আবেদন জানান। এম.আর. ট্রেডিং-এর ব্যবস্থাপক মো. মোস্তাফিজুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, তাদের নির্মাণ কাজে বাধা না দেয়া এবং কার্যাদেশ বাতিল না করার উপর সিটি কর্পোরেশনের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।