বাজেট ঘোষণার আগেই বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম

বাজেট ঘোষণার আগেই বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম

বাজেট ঘোষণার আগেই এর প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে। আর এ প্রভাব গত মাস থেকেই বেশি পড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন দোকানীরা। তবে বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কেন হঠাৎ করেই তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিলেন তারও ব্যাখ্যা তাদের কাছে দেয়নি তারা। অগত্যা দোকানীরা বাধ্য হয়েই সেই বাড়তি দামেই পণ্য কিনে বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।image_94407_0

দোকানীরা বলছেন, বেশির ভাগ পণ্যের দামই আজ থেকে ১৫ দিন আগেই বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে বাজেটের পর আবারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাদের অনেকের ধারণা।

সরেজমিনে রাজধানীর দয়াগঞ্জ, হাতিরপুর, মালিবাগ, কাওরানবাজার ঘুরে জানা গেছে- নিত্যদিনের পণ্যের মধ্যে তেল, ডাল,ঠাণ্ডা পানীয় ও মসলার দাম সপ্তাহ দুয়েক আগেই বেড়েছে। এসবের সঙ্গে শিশু পণ্য হরলিক্স ও ডানোর দামও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।

বাজারে নিত্যপণ্যের যে সয়াবিন সুপার তেল দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮২ টাকায় তা এখন ৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ১৩ টাকা।

অপরদিকে নারিকেল তেল প্যারাসুট প্যাকেট বড়টি ২ সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ২৩০ টাকায়, মাঝারি ১০৫ টাকায় এবং ছোটটি ৫০ টাকায়। আর এখন তা বেড়ে গিয়ে বড়টি হয়েছে ২৬০ টাকা, মাঝারিটি হয়েছে ১১৫ টাকা এবং ছোটটি হয়েছে ৫৫ টাকা। বড়টিতে ৩০ টাকা, মাঝারিতে ১০ টাকা এবং ছোটটিতে ৫ টাকা দাম বেড়েছে।

চিনির বাজার সারা বছরব্যাপী স্থির থাকলেও তা হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ দোকানীদের। তবে কোন কারণে চিনির দাম বাড়লো তা সঠিক করে বলতে পারেননি কোনো দোকানীই।

কয়েকদিন আগেও যে চিনি বিক্রি হয়েছে মাত্র ৪১ টাকায় তা এখন বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৪৫ টাকায়। বেড়েছে প্রতি কেজি চিনিতে ৪ টাকা।

কোনো কারণ ছাড়াই কোমল পানীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকটি কোম্পানি, অভিযোগ দোকানীদের।

কোমল পানীয় পণ্যের মধ্যে দুই সপ্তাহ আগে ৫০০ এমএল সেভেনআপ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকায়, ১ লিটার ৫৫ টাকায়। কিন্তু এ পানীয়টির ছোট ও বড় দুইটির দামই বাড়ানো হয়েছে। এখন সেভেনআপ ৫০০ এমএল বিক্রি হচ্ছে ৩২ এবং ১ লিটার ৬০ টাকায়।

অপরদিকে বেড়েছে মেরিন্ডা নামের আরেকটি কোমল পানীয়র দাম। যে মেরিন্ডা বিক্রি হয়েছে ৫০০ এমএল ২৮ টাকায়, ১ লিটার ৫৫ টাকায় এবং ২ লিটার ৯০ টাকায় তা এখন বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৫০০ এমএল ৩২ টাকা, ১ লিটার ৬০ টাকা এবং ২ লিটার ১০০ টাকা। এখন ছোটটিতে বাড়ানো হয়েছে ৪ টাকা, মাঝারিতে ৫ টাকা এবং বড়টি ১০ টাকা।

ডালের মধ্যে শুধু বুট জাতীয় ডালের দাম বেড়েছে। যে বুট বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৫৪ টাকায় এখন তা বেড়ে হয়েছে ৬০ টাকা। আর ডাবলিটা ছিল ৩৮ টাকা এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪৪ টাকা।

ডালের সঙ্গে বেড়েছে হলুদ ও আদার দামও। হলুদ আস্তটা ছিল প্রতি কেজি ১০০ টাকা  এখন তা হয়েছে ১৩০ টাকা।

তবে সব পণ্যের মধ্যে আদার দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। যে আদা বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৮০ টাকায় এখন তা বেড়ে হয়েছে ১৬০ টাকায়। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে আদায় প্রতি কেজিতে বেড়েছে দ্বিগুণ।

তবে এর সঙ্গে বেড়েছে তরকারির অন্যতম মসলা ধনিয়ার দাম। যে ধনিয়া (আস্ত) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল মাত্র ৭০ টাকায়। এখন তা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়।

বাজারে নিত্যপণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শিশুদের পণ্য দুধের দামও। বাজার ঘুরে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে শিশুদের গুড়ো দুধ ডানো বিক্রি হয়েছে ২৮০ টাকায়। তা এখন বেড়ে গিয়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। প্রতি  প্যাকেটে বেড়েছে ২০ টাকা। আর হরলিক্স বিক্রি হয়েছে ৩৬০ টাকায়। এখন তা ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৭০ টাকা।

নিত্যপণ্যের মধ্যে এসবের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে দোকানীরা কোম্পানীগুলোকে দোষারোপ করছেন।

দোকানীরা বলছেন, তাদের কোনো দোষ নেই, সব দোষ কোম্পানীগুলোর।

দয়াগঞ্জ বাজারের মুদি দোকানী তারেক রহমান বলেন, ‘দুই সপ্তাহ থেকে দাম বাড়ছে। তবে কেন দাম বাড়ানো হচ্ছে তার সঠিক কোনো জবাব কোম্পানীর ডিলারদের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।’

অপরদিকে কাওরান বাজারের মুদি দোকানী আফসার বলেন, ‘দেশে মজুদও ভালো আছে। কিন্তু কিছু মুনাফালোভী মজুদদার এসব পণ্য আটকিয়ে দাম বাড়ায়। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে। ফলে হঠাৎ করেই দাম বাড়া শুরু হয়েছে।’

হাতিরপুল বাজারের লোকমান হাকিম বলেন, ‘কোনো কারণ ছাড়াই অযথা শিশুদের দুধের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।’

এ ব্যাপারে দুধ বিক্রেতা কোম্পানির প্রতিনিধিদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দেননি।

অর্থ বাণিজ্য