রেড নোটিশ জারি হলেও গ্রেফতার হয় না আসামি। এভাবে চলছে বছরের পর বছর। এর মধ্যে দু-একজনকে গ্রেফতার করা হলেও সেগুলো একেবারেই শীর্ষপর্যায়ের তদবিরে হয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এভাবেই দেশের মোস্ট ওয়ান্টেড ৬০ আসামির নাম ঝুলছে ইন্টারপোলের তালিকায়। সর্বশেষ সে তালিকায় যুক্ত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের আসামি নূর হোসেনের নাম। নূর হোসেন এর আগেও ইন্টারপোলের তালিকাভুক্ত ছিল। তখন শীর্ষপর্যায়ের তদবিরে সেই নাম কাটানো হয়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইন্টারপোলের তালিকায় এমন অনেকে রয়েছেন যারা এখন জনপ্রতিনিধি। এ দিকে অনেক অপরাধী আছে যারা ইতঃপূর্বে বিদেশে গ্রেফতার হলেও তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়নি। এর মধ্যে দেশের তালিকাভুক্ত পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত ইন্টারপোলের রেড নোটিশে যাদের নাম ঝুলছে তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নূর হোসেন, ওমর ফারুক কচি, আলম তাওফিক, আতাউর রহমান, নাসির উদ্দিন রতন, বুরহান উদ্দিন বুরহান, ইউসুফ, আমিনুর রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, আহমেদ হারিস, মিয়া চান, শাহাদাত হোসাইন আজিজ মোস্তাক, মালাকার স্বপন, শেখ হারুন, প্রসন্ন সরদার, শৈলেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, শাহাদাত হোসাইন, খোরশেদ আলম, মনোতোষ বসাক, সুজিদ সুলতান, ইকরাম নাঈম খান, গোলাম ফারুক অভি, সাইফুল হোসাইন, আহমদ কবির, সুব্রত আলম, সরাফত হোসেন, মোবারক হোসাইন, মিন্টু সালাহউদ্দিন, মাওলানা তাজউদ্দিন, বিশ্বাস প্রকাশ কুমার, আব্দুল জব্বার, আমান উদ্দিন শফিক, জাফর আহমেদ, নবী হোসেন, শহীদুল ইসলাম, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম, সুব্রত বাইন, শামীম আহমেদ, কালা জাহাঙ্গীর, মোল্লা মাসুদ, আনসার নজরুল, আবুল কালাম আজাদ, এম রাশেদ চৌধুরী, আব্দুর রশিদ খন্দকার, নূর চৌধুরী, শফিকুল হক ডালিম, আহমেদ আকাশ পিয়ার, রফিকুল ইসলাম, মজনু আহমেদ, কিসমত হাসেম খান, মোসলেম উদ্দিন, নাজমুল মাকসুদ ও নজরুল দিপু।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন রয়েছে যারা বছরের পর বছর ইন্টারপোলের তালিকায় ঝুলছে। কিন্তু গ্রেফতার হচ্ছে না তারা। আবার সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদসহ অনেকেই রয়েছে যারা দেশের বাইরে একাধিকবার গ্রেফতার হলেও তাদেরকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। তবে গত ৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্র থেকে নাজমুল মাকসুদ মুরাদকে দেশে ফিরিয়ে আনে সিআইডি। ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপের মামলায় গ্রেফতার হয় মুরাদ। ১৭ বছর পরে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়। সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ২০ বাংলাদেশীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০০৯ সালে তিনজন, ১০ সালে ১১ জন, ১১ সালে চারজন, ১৩ সালে একজন এবং সর্বশেষ মুরাদকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের সেভেন মার্ডারের প্রধান আসামি নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নূর হোসেনের বিরুদ্ধে এখন ২৩টি মামলা দেখানো হয়েছে। অথচ এই সেভেন মার্ডারের আগেও নূর হোসেন ছিল কিন ইমেজের। এর আগেও তার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাকে কিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে সেই নোটিশ প্রত্যাহার করানো হয়। ২০০৭ সালের ১২ এপ্রিল নূর হোসেনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছিল। ওই একই সময় রেড নোটিশ জারি করা হয়েছিল আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের বিরুদ্ধেও। ২০০৯ সালের আগস্ট মাসে শামীম ওসমানের নাম ওই তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হয়। আর নূর হোসেনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ প্রত্যাহার হয় ২০০১ সালের ১০ মার্চ। এই নোটিশ প্রত্যাহারের পেছনে আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর হাত রয়েছে বলে সূত্র জানায়। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ জানায়, এবারে যাচাই-বাছাই করেই নূর হোসেনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হয়েছে।
এ দিকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ রয়েছে এমন অনেকেই বিভিন্ন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। নাগরিকত্ব নিয়ে বিয়েশাদী করে বসবাস করছে এমনও রয়েছেন অনেকে। পেশাদার সন্ত্রাসী যাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি আছে তাদের মধ্যে অনেকেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবস্থান করছে। এ দিকে রেড নোটিশপ্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, তারা ইন্টারপোলকে অনুরোধ করে থাকেন। আর এই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারপোল নোটিশ জারি করে। গ্রেফতার করার বিষয়টি ইন্টারপোলের বিষয়। তবে এ ক্ষেত্রে তারা যখন সহায়তা চায় তখন তাদেরকে সহায়তা করা হয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের প্রতিটি সদস্য দেশের ক্ষেত্রে একই বিষয় প্রযোজ্য।