আবার বিশ্বকাপ জয়ের অভিযানে নামছে আর্জেন্টিনা। দলের প্রাণ লিওনেল মেসি হলেও বিশ্বকাপে তৃতীয় সাফল্যের জন্য গনজালো ইগুয়াইন, সার্খিও রোমেরো, ফার্নান্দো গাগো আর সার্খিও আগুয়েরোর কাছেও বিশেষ কিছু আশা করছে আর্জেন্টিনা।
লিওনেল মেসি
১৯৭৮ ও ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। ’৮৬-র আসরটাতো ম্যারাডোনা ম্যাজিকের জন্যই স্মরণীয়। ২০০৬ সালে মেসির কাছ থেকেও সেরকম কিছু আশা করেছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু বার্সেলোনার হয়ে ততদিনে মাঠ মাতাতে শুরু করলেও মেসি সেবার তেমন কিছুই করতে পারেননি। চার বছর পর দক্ষিণ আফ্রিকাতেও কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। পেলে, ম্যারাডোনা, বেকেনবাওয়ার, জিদানদের মতো বিশ্বকাপ জিতে ক্যারিয়ারের একটা অপূর্ণতা দূর করতে এবার মেসি তাই অনেক বেশি মরিয়া।
এতকাল সমালোচকরা বলতেন, মেসি বার্সেলোনার হয়ে যেমন খেলেন, দেশের হয়ে তেমন খেলতে পারেননা। এ ক্ষেত্রে তার আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হতো। দিন বদলেছে। ব্রাজিল বিশ্বকাপ যত এগিয়েছে বার্সেলোনায় মেসির উজ্বলতা ততটাই কমতে দেখে সমালোচকরা হালে উল্টো কথা বলতে শুরু করেছেন। তাদের মতে, মেসি এবার বিশ্বকাপের জন্য নিজের সামথ্যের্র অনেকটাই তুলে রাখছেন। আর্জেন্টিনার সমর্থকদের তো তাতে খুশিই হওয়ার কথা। ব্রাজিল থেকে মেসি বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফিরবেন- সমর্থকরা তো তা-ই চান!
সার্জিও অ্যাগুয়েরো
অ্যাগুয়েরো আর্জেন্টাইন লিগে যখন নজর কাড়লেন তখন তার বয়স মাত্র ১৫। তখন থেকেই আর্জেন্টিনার মানুষ ‘কুন’ বলে ডাকে তাকে। ফরোয়ার্ড হিসেবে কাব ফুটবলে দক্ষতা ও প্রতিভার স্বাক্ষর বেশ কয়েকবার রেখেছেন। ২০০৮ সালে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়েছেন অলিম্পিক ফুটবলের সোনা। এ ছাড়া অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে জিতিয়েছেন ইউরোপা লিগ (২০১০)। তারপর ২০১২ সালে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে যোগ দিয়েই ম্যানচেস্টার সিটির শো-কেসে তুলে দেন লিগ শিরোপা। কুইন্স পার্ক রেঞ্জাসের্র বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ইনজুরি টাইমে তার করা গোলই চার দশক পর লিগ শিরোপা জিতিয়েছিল ম্যান সিটিকে। অ্যাগুয়েরোর কাছ থেকে এবার বিশ্বকাপে তেমন চমকই দেখতে চায় আর্জেন্টিনা।
গনজালো ইগুয়াইন
সাত মৌসুমে ১২১ গোল করেও রেয়াল মাদ্রিদের সেরা একাদশে স্থানটা পাকা হচ্ছিল না তার। আর নিয়মিত সুযোগ না পেলে নজর কাড়বেন কী করে? আর্জেন্টিনার মতো দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলার নিশ্চয়তাই বা পাবেন কী করে? গনজালো ইগুয়াইন সেই নিশ্চয়তা পেয়েছেন রেয়াল ছেড়ে নাপোলিতে নাম লিখিয়ে। ইটালির এই কাবে ইগুয়াইন আবার ফিরে পেয়েছেন নিজেকে। এ মৌসুমে নাপোলির সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বেও আর্জেন্টিনার হয়ে করেছেন নয়টি গোল। তাই এবার এই স্ট্রাইকারের কাছে ২০১০-এর আসরের চেয়েও বেশি আশা আর্জেন্টিনার। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে একটি হ্যাট্রিকসহ গত আসরে চারটি গোল করেছিলেন ইগুয়াইন। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশন শেষ হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। সেই থেকে ফাইনাল জিতে বিশ্বকাপ শেষ করার স্বপ্নই দেখছেন ইগুয়াইন।
সার্জিও রোমেরো
কয়েক বছর ধরেই গোলপোস্টের নিচে তিনিই আর্জেন্টিনার সেরা পছন্দ। সার্জিও রোমেরোর ওপর এবারও আস্থা রাখছে আর্জেন্টিনা। রোমেরো বিশ্বকাপে তার সেরা সময়ে থাকবেন কিনা এ নিয়ে অনেকের মনেই সংশয় আছে। ফরাসি লিগে মোনাকোর হয়ে পুরো ম্যাচ খেলার সুযোগ খুব কমই পেয়েছেন রোমেরো। তবে কোচ আলেসান্দ্রো সাবেলার হাতে অবশ্য আর ভালো কোনো বিকল্পও নেই। দলের দ্বিতীয় গোলরক্ষক মারিয়ানো আন্দুজার। ইটালির কাতানিয়া কাবের সেরা একাদশে তিনিও অনিয়মিত। এ অবস্থায় অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে রোমেরো।
ফার্নান্দো গাগো
মিডফিল্ডার গাগোও এক সময় রেয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেন। ২০০৬ সালে বোকা জুনিয়র্স থেকে ২৭ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে তাকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। কিন্তু অনেক তারার ভিড়ে গাগোও নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছিলেন না। শুধু বেশি ম্যাচ খেলেননি বলেই ২০১০ বিশ্বকাপের আর্জেন্টিনা দলে সুযোগ পাননি তিনি। তবে রিয়াল ছেড়ে ফের বোকা জুনিয়র্সে ফিরে নিয়মিত খেলা অন্তত নিশ্চিত করেছেন এবং সেই সুবাদে বিশ্বকাপ দলেও ডাক পেয়েছেন। গাগোর প্রতিভা নিয়ে সংশয় নেই। বিশ্বকাপে সেই প্রতিভার বিচ্ছুরণ কিছু দেখাতে পারেন কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।