গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন দুজনই। কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনি ও বীরেন্দর শেবাগের সম্পর্কটা যে এখন যথেষ্টই শীতল, এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে ক্রমেই। সত্যিই ভারতীয় দলে ‘ধোনি গ্রুপ’ আর ‘শেবাগ গ্রুপ’ বলে কিছু আছে কি না, বলা মুশকিল। তবে এটা অন্তত নিশ্চিত, দলটা আপাতত আর ‘সুখী পরিবার’ নেই।
দলে দ্বন্দ্বের গুজবে জোর হাওয়া লেগেছে তিন সিনিয়রের ফিল্ডিং নিয়ে ধোনির মন্তব্য ও শেবাগের জবাবে। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই বলা হচ্ছিল তরুণদের যথেষ্ট সুযোগ দিতেই টেন্ডুলকার-শেবাগ-গম্ভীরকে একসঙ্গে খেলানো হচ্ছে না। কিন্তু গত রোববার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ধোনি বলেন, ‘তিন সিনিয়রকে একসঙ্গে খেলালে দলের ফিল্ডিংয়ে প্রভাব পড়ে। প্রতিপক্ষ ২০টা রান বেশি পেয়ে যায়, যা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে ব্যাটসম্যানদের ওপর।’ ধোনির এই মন্তব্য আলোচনার ঝড় তোলে। ভারতের সাবেক ক্রিকেটারদের অনেকের অভিমত, ধোনির উচিত ছিল এসব ড্রেসিংরুমের ভেতরেই রাখা। অনেকে আবার বলেছেন, অধিনায়ক হিসেবে ধোনির অধিকার আছে নিজের যুক্তি তুলে ধরার।
ধোনিকে দেখিয়ে দিতেই যেন, পরশু মিড উইকেটে উড়ন্ত ডাইভে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন শেবাগ (মাহেলা জয়াবর্ধনের)। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিন সিনিয়রের ফিল্ডিং নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে মৃদু হাসিতে শেবাগের উত্তর, ‘আমার ক্যাচটা আপনি দেখেছেন? আমরা গত ১০ বছর ধরেই একই রকম, কিছুই বদলায়নি।’
তবে যে ধোনি বলেছেন মন্থর ফিল্ডিংয়ের জন্য তিন সিনিয়রকে একসঙ্গে খেলানো সম্ভব নয়? এবার শেবাগ যেন আকাশ থেকে পড়লেন, ‘এমএস কী বলেছে এবং সংবাদমাধ্যমে কী তোলপাড় হচ্ছে, আমি এসবের কিছুই জানি না। আমি শুধু জানি, আমাদের তিনজনের সঙ্গে সে আলাদা করে কথা বলেছে। আমাদের বলেছে, আগামী বিশ্বকাপ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে, তাই তরুণদের সম্ভব সর্বোচ্চ সুযোগ দিতে চায় খেলানোর। গত বিশ্বকাপে আমরা তিনজন একাদশে একই সঙ্গে খেলেছি ও জিতেছি। আমার মনে হয় না তিনজন একসঙ্গে খেললে সমস্যা আছে। এটা স্রেফ তরুণদের সুযোগ দেওয়ার ব্যাপার।’ ওয়েবসাইট।
পরশুই টুর্নামেন্টে প্রথমবার একসঙ্গে খেলেছেন তিন সিনিয়র। এটা নিয়েই গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নিষিদ্ধ থাকলেও ওই ম্যাচের একটা একাদশ টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে নাকি জমা দিয়েছিলেন ধোনি। ওই একাদশে ছিলেন রোহিত শর্মা। কিন্তু শেবাগ একাদশে রেখেছিলেন তিন সিনিয়রকে, রাখেননি রোহিতকে। অধিনায়ক শেবাগের চাওয়ারই জয় হয়েছে শেষ পর্যন্ত।
ফিল্ডিংয়ের প্রসঙ্গটা ঘুরেফিরে বারবারই এসেছে সংবাদ সম্মেলনে। বিরক্ত শেবাগ একপর্যায়ে বললেন, ‘এটা আপনারা ধোনিকেই আবার জিজ্ঞেস করুন। ও আমাদের বলেছে তরুণদের বেশি সুযোগ দিতে চায়, ব্যস।’ ‘ফিল্ডিংয়ের মন্তব্য নিয়ে কি তবে ধোনির সঙ্গে কথা বলবেন?’—একজনের এই প্রশ্নের উত্তর শেবাগ যেভাবে দিলেন, ভেতরের অবস্থাটা অনেকটা পরিষ্কার তাতেই, ‘আমি কেন তার সঙ্গে কথা বলব? সে অধিনায়ক, দলের নেতা। যদি সে ও কোচ মনে করে টপ-অর্ডারে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাবে, তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই। একাদশ বাছাইয়ের দায়িত্ব কোচ-অধিনায়কের। ওরা আমাকে বলে, “তরুণদের সুযোগ দিতে চাই, তুমি বিশ্রাম নাও,” আমি খুশি মনেই মেনে নেব।’