বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। আর ১০ দিন বাদে ব্রাজিলের মাঠে গড়াবে ২০তম ফুটবল বিশ্বকাপ। কিন্তু কোথায় হবে খেলাগুলো? আনন্দযজ্ঞের সেই শহরগুলোই বা কেমন? কোন ইতিহাস-ঐহিত্যে স্মরণীয় করেছে সেই শহরগুলোকে। আসুন বিশ্বকাপ ভেন্যু ও শহরগুলির খুঁটিনাটি জেনে নেই-
সুউচ্চ হিজলের শহর: নাটাল
নীল আকাশ ও সারি সারি হিজল গাছ দিয়ে সাজানো নাটাল। চিরসবুজ এক বৃক্ষমেলা যেন! এই শহরটিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিজল গাছ। যা গিনেজ বুক অব রেকর্ডস কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। গিনেস বুকের ওই প্যানেল স্বীকার করে যে- এই গাছটি যে পরিমাণ পরিসর দখল করে তা একটি স্টেডিয়ামের বলয়ের সমান। গানিতিক হিসেবে যা ৮ হাজার ৪০০ বর্গমিটারের সমান।
ধারনক্ষমতা: ৪৩ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ২১০ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: মারিনহো চাগাস। ব্রাজিলের হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে খেলেছিলেন।
কার্নিভালের শহর: রিও
উপমহাদেশের লোকদের সামনে ব্রাজিলের নাম আসলেই ভেসে ওঠে বর্ণিল কার্নিভালের ছবি। ড্রাম-বাঁশির সুরে লাখো লাখো স্থানীয় আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী খোলামেলা পোশাক পড়ে সেই উৎসবে অংশ নেয়া। চোখ ধাঁধানো সেই শোভাযাত্রা। থাকে নাচে গানে ভরপুর জলসা।সেখানে বয়সের ফ্রেম থেকে বেরিয়ে ব্রাজিলিয়ানরা মুক্তির গান গায়। সাগর পাড়ের এই শহর বিখ্যাত রোদে পোড়া তামাটে চেহারার বিকিনি সুন্দরিদের জন্য। আক্ষরিক অর্থেই তা যদি আপনি উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে রিও ডি জেনিরোতে যেতে হবে। ব্রাজিলের সাবেক রাজধানী এটি। এই শহরেই ব্রাজিলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রেগুলোর অন্যতম কোরকোভাদো ও সুগারলভ পর্বত অবস্থিত। আছে সোনা রাঙা বিচও।
স্টেডিয়ামে নাম:এস্টাডিও ডো মারাকানা (রিও ডি জেনিরো)
ধারণক্ষমতা: ৭৮,৮৩৮
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
লোকাল হিরো: রোনাল্ডো, রোমারিও, জিজিনহো ও জিকো।
বিশ্ব রান্নাঘর: সাও পাওলো
ছোট ছোট নাইট ক্লাব ও রেস্তোরাঁর জন্য বিখ্যাত সাও পাওলো। আমাজানের বুকে এই শহরটি যেন এক জনঅরণ্য। প্রায় দুই কোটি লোকের বাস এখানে। যেখানে ধনী ও গরিবের জীবনযাত্রায় স্পষ্ট একটা ফারাক বা সীমারেখা দেখতে পাবেন আপনি। তবে এইটুকু তথ্যতেই হতাশ হলে অনেক কিছু মিস করবেন আপনি। ভোজন রসিক কিংবা বাঁধন-হারা লোকেরা ব্রাজিল গেলে ফরজ মনে করে এই শহরটায় একবার পা ফেলতে ভুলবেন না যেন।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ডি ইটাকুয়েরা
ধারণক্ষমতা: ৬৮ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
গড় বৃষ্টিপাত: ২.২ ইঞ্চি
লোকাল হিরো: কাফু, রবার্তো কার্লোস
যাদুকরী রাস্তার শহর: বেলো হরিজন্তে
সাধারণত পাহাডের ঢাল বেয়ে ওঠার জন্য মোটর গাড়ির হর্স পাওয়ার বাড়িয়ে দিতে হয়। কিন্তু বেলো হরিজন্তে গেলে এর উল্টোটা দেখতে পাবেন। কারণ, গাড়িকে নিউট্রাল গিয়ারে রাখলেও আপনা-আপনি আপনার গাড়িটি ওপরে উঠে যাবে। এখানকার মাটির নিচে চৌম্বকীয় ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এমনটি হয়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে এখানে সুন্দর দিগন্তেরও স্বাদ পাবেন । কারণ, দিগন্তের কমনীয়তার জন্যই এর নাম হয়েছে বেলো হরিজন্তে।
স্টেডিয়ামের নাম: এস্টাডিও মিনেইরাও
ধারণক্ষমতা: ৬৪ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ০.৬ ইঞ্চি
লোকাল হিরো: টোস্টা
বাগানের শহর: কুরিতিবা
ব্রাজিলের সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর একটি কুরিতিবা। বসবাসের জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা। থরে থরে সাজানো পাইন গাছ,সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন ও চোখ জুড়ানো বিল্ডিংয়ে ছবির মতো সাজানো এই শহরটি। কুরিতিবার সবচেয়ে চমক জাগানো তথ্য হলো এটি ব্রাজিলের সবচেয়ে কম সময়ের রাজধানী ছিল। ১৯৬৯ সালে সামরিক জান্তার সময় মাত্র তিন দিনের জন্য রাজধানী হওয়ার গৌরব অর্জন করে শহরটি।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ডা বেইক্সাডা
ধারণক্ষমতা: ৪১,৪৫৬
জুনে গড় তাপমাত্রা: ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৩ দশমিক ৯ ইঞ্চি
লোকাল হিরো: দুইলিও দিয়াস
ব্রাজিলের ভেনিস: রেসিফে
ভেনিস বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ইতালির নীল জলের একটি শহর। যেখানে থরে থরে সাজানো থাকে নৌকা। কিংবা ব্যক্তিগত প্রমোদতরীর বাহারি উপস্থাপন। অসংখ্য খালের সংযোগ সাধনের মাধ্যমে এই শহরটির বক্ষ রচনা। তবে ব্রাজিলেও কিন্তু ভেনিস নামের একটি শহর আছে। এই শহরটির নাম রেসিফে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বোয়া বোয়া ভিয়াজেম নামক সমুদ্র সৈকতের জন্য প্রসিদ্ধি আছে এই শহরটি। গ্রীষ্ম মৌসুমে বেশ ভালো গরম পড়ে ব্রাজিলের এই শহরটিতে। তবে জুনের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, খ্রিষ্টীয় অব্দের ষষ্ঠ মাসটি স্থানীয় ভাবে শহরটির সবচেয়ে বর্ষণমুখর সময়। সেজন্য বিশ্বকাপের সময় এই ভেন্যুটিতে প্রিয় দলের খেলা দেখতে বসে আকাশের মুখ ভার দেখলে বিরক্ত হবেন না যেন?
স্টেডিয়াম নাম: ইতাইপাভা অ্যারেনা পারনামবুকো (রেসিফে)
ধারনক্ষমতা: ৪৬,০০০ হাজার
জুনে গড় তামমাত্রা: ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৩৭৫ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: রেসিফের ক্লাব সান্তা ক্রুজে ফুটবলের হাতেখড়ি হয় ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি রিভাল্ডোর। যিনি পরবর্তীতে স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনায় গিয়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ২০০২ সালের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি।
আমাজানের হৃদপিন্ড: মানাউস
নিঝুমতার মাঝে এক প্রস্থ উল্লাস-মুখরতা হলো মানাউস। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট আমাজানের মধ্যে অবস্থিত এই ভেন্যুটি। সেজন্য স্বাভাবিক ভাবে দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য মানাউস। যেখানে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারবেন আপনি?
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ডে আমাজানিয়া
ধারনক্ষমতা: ৪৪,০০০ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৮৪ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: ফ্রান্সিসকো লিমা গোভিনহো। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় ইতালির রোমাতে খেলেছেন ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার।
কাউবয় হ্যাটস: কুইয়াবা
১৭২৭ সালে ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলে সোনা ও লোহার খনি আবিস্কার হওয়ার পর কুইয়াবা শহরটির গোড়াপত্তন হয়। লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে গরম শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এটি। তাছাড়া গো চারণের জন্যও বিশেষ প্রসিদ্ধি আছে এই অঞ্চলটির। সেজন্য ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী কাউ হ্যাটসের প্রচলন ও ব্যবহার মধ্য ব্রাজিলের এই শহরটিকে ঘিরেই।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা পানটানাল
ধারনক্ষমতা: ৪৩,০০০
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ১৫.৫ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: ব্রাজিলের লিভারপুল কিংবদন্তি লুকাস লেইভা।
২,০০০ দিনে নির্মিত শহর: ব্রাসিলিয়া
ব্রাজিলিয়ানদের গর্বের শহর ব্রাসিলিয়া। বর্তমানে ব্রাজিল প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। দেশটির আনাচে-কানাচে এই কিংবদন্তি প্রচলিত যে- মাত্র ২০০০ দিনের পরিশ্রমে এই শহরটির গোড়াপত্তন করে একদল আদিবাসী। ক্যাথেড্রাল ও রঙিন মন্দিরের জন্য প্রসিদ্ধি আছে ব্রাসিলিয়ার। যা ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেডের অর্ন্তভূক্ত।
স্টেডিয়ামে: এস্টাডিও ন্যাচনাল ডি ব্রাসিলিয়া
ধারনক্ষমতা: ৭০,০৬৪
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৩ শতাংশ
স্থানীয় হিরো: কাকা
নাইট ক্লাবের শহর: ফোর্টালেজা
ব্রাজিলিয়ানদের আমুদে জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন এই ফোর্টালেজা! সপ্তাহের তিন-চার দিনে পরিশ্রম, আর বাকি দিনে মাস্তি- এই জীবন দর্শন মেনে চলে এখানে বসবাসকারী মানুষেরা। তাই নিউইয়র্ক টাইমস ফোর্টালেজাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সরব শহর বলে অ্যাখ্যায়িত করে। নাইট ক্লাবের হই-হুল্লোড়ের কিংবা নীল জলরাশিতে আনন্দে মেতে ওঠার জন্য বিশেষ খ্যাতি আছে এই শহরটির।
স্টেডিয়ামে নাম: অ্যারেনা ক্যাস্টিলাও
ধারনক্ষমতা: ৬৭,০৬৭
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ১৬ শতাংশ
স্থানীয় হিরো: মারিও জারদেল
সুখের শহর: সালভাদর
স্থানীয় ভাবে ‘চেসী’ নামে পরিচিত এক প্রকার পানীয়ের জন্য বিখ্যাত সালভাদর। একে ব্রাজিলের ‘সুখের শহর’ নামে অভিহিত করা হয়। তাছাড়া এই শহরটিতেই ব্রাজিলের অন্যতম প্রাচীন কার্নিভাল ‘সেন্ট্রাল কার্নিভাল’ বিকাশ লাভ করে।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ফন্টে নোভা
ধারনক্ষমতা: ৫৫,০০০
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৫০ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: বেবেতো
স্কলারির জন্মশহর: পোর্তো অ্যালেগ্রে
ব্রাজিলের ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী কোচ ও বর্তমানে নেইমারদের ম্যানেজার লুইস ফিলিপ স্কলারির জন্মশহর পোর্তো অ্যালেগ্রে। তাছাড়া ব্রাজিলের এই শহরটিতেই জন্ম নিয়েছেন পাঁচ বারের বিশ্বজয়ী দলটির সাবেক কোচ মানো মানজেস। তাছাড়া ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের বিখ্যাত ডার্বি ‘গ্রেনাল’ এই শহরটিতেই হয়ে থাকে।
স্টেডিয়ামের নাম: এস্টাডিও জোস বোর্দা
ধারনক্ষমতা: ৫০,০০০
জুনে গড় তাপমাত্রা: ১৯.৭ ডিগ্রি
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ১২ শতাংশ
স্থানীয় হিরো: রোনালদিনহো।
বিশ্বকাপ কড়া নাড়ছে দরজায়। আর ১০ দিন বাদে ব্রাজিলের মাঠে গড়াবে ২০তম ফুটবল বিশ্বকাপ। কিন্তু কোথায় হবে খেলাগুলো? আনন্দযজ্ঞের সেই শহরগুলোই বা কেমন? কোন ইতিহাস-ঐহিত্যে স্মরণীয় করেছে সেই শহরগুলোকে। আসুন বিশ্বকাপ ভেন্যু ও শহরগুলির খুঁটিনাটি জেনে নেই-
সুউচ্চ হিজলের শহর: নাটাল
নীল আকাশ ও সারি সারি হিজল গাছ দিয়ে সাজানো নাটাল। চিরসবুজ এক বৃক্ষমেলা যেন! এই শহরটিতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হিজল গাছ। যা গিনেজ বুক অব রেকর্ডস কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে। গিনেস বুকের ওই প্যানেল স্বীকার করে যে- এই গাছটি যে পরিমাণ পরিসর দখল করে তা একটি স্টেডিয়ামের বলয়ের সমান। গানিতিক হিসেবে যা ৮ হাজার ৪০০ বর্গমিটারের সমান।
ধারনক্ষমতা: ৪৩ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ২১০ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: মারিনহো চাগাস। ব্রাজিলের হয়ে ১৯৭৪ সালের বিশ্বকাপে খেলেছিলেন।
কার্নিভালের শহর: রিও
উপমহাদেশের লোকদের সামনে ব্রাজিলের নাম আসলেই ভেসে ওঠে বর্ণিল কার্নিভালের ছবি। ড্রাম-বাঁশির সুরে লাখো লাখো স্থানীয় আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী খোলামেলা পোশাক পড়ে সেই উৎসবে অংশ নেয়া। চোখ ধাঁধানো সেই শোভাযাত্রা। থাকে নাচে গানে ভরপুর জলসা।সেখানে বয়সের ফ্রেম থেকে বেরিয়ে ব্রাজিলিয়ানরা মুক্তির গান গায়। সাগর পাড়ের এই শহর বিখ্যাত রোদে পোড়া তামাটে চেহারার বিকিনি সুন্দরিদের জন্য। আক্ষরিক অর্থেই তা যদি আপনি উপভোগ করতে চান তাহলে আপনাকে রিও ডি জেনিরোতে যেতে হবে। ব্রাজিলের সাবেক রাজধানী এটি। এই শহরেই ব্রাজিলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রেগুলোর অন্যতম কোরকোভাদো ও সুগারলভ পর্বত অবস্থিত। আছে সোনা রাঙা বিচও।
স্টেডিয়ামে নাম:এস্টাডিও ডো মারাকানা (রিও ডি জেনিরো)
ধারণক্ষমতা: ৭৮,৮৩৮
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
লোকাল হিরো: রোনাল্ডো, রোমারিও, জিজিনহো ও জিকো।
বিশ্ব রান্নাঘর: সাও পাওলো
ছোট ছোট নাইট ক্লাব ও রেস্তোরাঁর জন্য বিখ্যাত সাও পাওলো। আমাজানের বুকে এই শহরটি যেন এক জনঅরণ্য। প্রায় দুই কোটি লোকের বাস এখানে। যেখানে ধনী ও গরিবের জীবনযাত্রায় স্পষ্ট একটা ফারাক বা সীমারেখা দেখতে পাবেন আপনি। তবে এইটুকু তথ্যতেই হতাশ হলে অনেক কিছু মিস করবেন আপনি। ভোজন রসিক কিংবা বাঁধন-হারা লোকেরা ব্রাজিল গেলে ফরজ মনে করে এই শহরটায় একবার পা ফেলতে ভুলবেন না যেন।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ডি ইটাকুয়েরা
ধারণক্ষমতা: ৬৮ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস
গড় বৃষ্টিপাত: ২.২ ইঞ্চি
লোকাল হিরো: কাফু, রবার্তো কার্লোস
যাদুকরী রাস্তার শহর: বেলো হরিজন্তে
সাধারণত পাহাডের ঢাল বেয়ে ওঠার জন্য মোটর গাড়ির হর্স পাওয়ার বাড়িয়ে দিতে হয়। কিন্তু বেলো হরিজন্তে গেলে এর উল্টোটা দেখতে পাবেন। কারণ, গাড়িকে নিউট্রাল গিয়ারে রাখলেও আপনা-আপনি আপনার গাড়িটি ওপরে উঠে যাবে। এখানকার মাটির নিচে চৌম্বকীয় ক্ষমতা বেশি হওয়ায় এমনটি হয়ে থাকে। সঙ্গে সঙ্গে এখানে সুন্দর দিগন্তেরও স্বাদ পাবেন । কারণ, দিগন্তের কমনীয়তার জন্যই এর নাম হয়েছে বেলো হরিজন্তে।
স্টেডিয়ামের নাম: এস্টাডিও মিনেইরাও
ধারণক্ষমতা: ৬৪ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ০.৬ ইঞ্চি
লোকাল হিরো: টোস্টা
বাগানের শহর: কুরিতিবা
ব্রাজিলের সবচেয়ে সুন্দর শহরগুলোর একটি কুরিতিবা। বসবাসের জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা। থরে থরে সাজানো পাইন গাছ,সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন ও চোখ জুড়ানো বিল্ডিংয়ে ছবির মতো সাজানো এই শহরটি। কুরিতিবার সবচেয়ে চমক জাগানো তথ্য হলো এটি ব্রাজিলের সবচেয়ে কম সময়ের রাজধানী ছিল। ১৯৬৯ সালে সামরিক জান্তার সময় মাত্র তিন দিনের জন্য রাজধানী হওয়ার গৌরব অর্জন করে শহরটি।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ডা বেইক্সাডা
ধারণক্ষমতা: ৪১,৪৫৬
জুনে গড় তাপমাত্রা: ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৩ দশমিক ৯ ইঞ্চি
লোকাল হিরো: দুইলিও দিয়াস
ব্রাজিলের ভেনিস: রেসিফে
ভেনিস বলতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে ইতালির নীল জলের একটি শহর। যেখানে থরে থরে সাজানো থাকে নৌকা। কিংবা ব্যক্তিগত প্রমোদতরীর বাহারি উপস্থাপন। অসংখ্য খালের সংযোগ সাধনের মাধ্যমে এই শহরটির বক্ষ রচনা। তবে ব্রাজিলেও কিন্তু ভেনিস নামের একটি শহর আছে। এই শহরটির নাম রেসিফে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বোয়া বোয়া ভিয়াজেম নামক সমুদ্র সৈকতের জন্য প্রসিদ্ধি আছে এই শহরটি। গ্রীষ্ম মৌসুমে বেশ ভালো গরম পড়ে ব্রাজিলের এই শহরটিতে। তবে জুনের বিষয়টি ভিন্ন। কারণ, খ্রিষ্টীয় অব্দের ষষ্ঠ মাসটি স্থানীয় ভাবে শহরটির সবচেয়ে বর্ষণমুখর সময়। সেজন্য বিশ্বকাপের সময় এই ভেন্যুটিতে প্রিয় দলের খেলা দেখতে বসে আকাশের মুখ ভার দেখলে বিরক্ত হবেন না যেন?
স্টেডিয়াম নাম: ইতাইপাভা অ্যারেনা পারনামবুকো (রেসিফে)
ধারনক্ষমতা: ৪৬,০০০ হাজার
জুনে গড় তামমাত্রা: ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৩৭৫ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: রেসিফের ক্লাব সান্তা ক্রুজে ফুটবলের হাতেখড়ি হয় ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কিংবদন্তি রিভাল্ডোর। যিনি পরবর্তীতে স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনায় গিয়ে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। ২০০২ সালের ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি।
আমাজানের হৃদপিন্ড: মানাউস
নিঝুমতার মাঝে এক প্রস্থ উল্লাস-মুখরতা হলো মানাউস। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রেইন ফরেস্ট আমাজানের মধ্যে অবস্থিত এই ভেন্যুটি। সেজন্য স্বাভাবিক ভাবে দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্য মানাউস। যেখানে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে পারবেন আপনি?
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ডে আমাজানিয়া
ধারনক্ষমতা: ৪৪,০০০ হাজার
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৮৪ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: ফ্রান্সিসকো লিমা গোভিনহো। ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় ইতালির রোমাতে খেলেছেন ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার।
কাউবয় হ্যাটস: কুইয়াবা
১৭২৭ সালে ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলে সোনা ও লোহার খনি আবিস্কার হওয়ার পর কুইয়াবা শহরটির গোড়াপত্তন হয়। লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে গরম শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এটি। তাছাড়া গো চারণের জন্যও বিশেষ প্রসিদ্ধি আছে এই অঞ্চলটির। সেজন্য ব্রাজিলের ঐতিহ্যবাহী কাউ হ্যাটসের প্রচলন ও ব্যবহার মধ্য ব্রাজিলের এই শহরটিকে ঘিরেই।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা পানটানাল
ধারনক্ষমতা: ৪৩,০০০
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ১৫.৫ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: ব্রাজিলের লিভারপুল কিংবদন্তি লুকাস লেইভা।
২,০০০ দিনে নির্মিত শহর: ব্রাসিলিয়া
ব্রাজিলিয়ানদের গর্বের শহর ব্রাসিলিয়া। বর্তমানে ব্রাজিল প্রজাতন্ত্রের রাজধানী। দেশটির আনাচে-কানাচে এই কিংবদন্তি প্রচলিত যে- মাত্র ২০০০ দিনের পরিশ্রমে এই শহরটির গোড়াপত্তন করে একদল আদিবাসী। ক্যাথেড্রাল ও রঙিন মন্দিরের জন্য প্রসিদ্ধি আছে ব্রাসিলিয়ার। যা ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেডের অর্ন্তভূক্ত।
স্টেডিয়ামে: এস্টাডিও ন্যাচনাল ডি ব্রাসিলিয়া
ধারনক্ষমতা: ৭০,০৬৪
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৩ শতাংশ
স্থানীয় হিরো: কাকা
নাইট ক্লাবের শহর: ফোর্টালেজা
ব্রাজিলিয়ানদের আমুদে জীবনের প্রতিচ্ছবি যেন এই ফোর্টালেজা! সপ্তাহের তিন-চার দিনে পরিশ্রম, আর বাকি দিনে মাস্তি- এই জীবন দর্শন মেনে চলে এখানে বসবাসকারী মানুষেরা। তাই নিউইয়র্ক টাইমস ফোর্টালেজাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সরব শহর বলে অ্যাখ্যায়িত করে। নাইট ক্লাবের হই-হুল্লোড়ের কিংবা নীল জলরাশিতে আনন্দে মেতে ওঠার জন্য বিশেষ খ্যাতি আছে এই শহরটির।
স্টেডিয়ামে নাম: অ্যারেনা ক্যাস্টিলাও
ধারনক্ষমতা: ৬৭,০৬৭
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ১৬ শতাংশ
স্থানীয় হিরো: মারিও জারদেল
সুখের শহর: সালভাদর
স্থানীয় ভাবে ‘চেসী’ নামে পরিচিত এক প্রকার পানীয়ের জন্য বিখ্যাত সালভাদর। একে ব্রাজিলের ‘সুখের শহর’ নামে অভিহিত করা হয়। তাছাড়া এই শহরটিতেই ব্রাজিলের অন্যতম প্রাচীন কার্নিভাল ‘সেন্ট্রাল কার্নিভাল’ বিকাশ লাভ করে।
স্টেডিয়ামের নাম: অ্যারেনা ফন্টে নোভা
ধারনক্ষমতা: ৫৫,০০০
জুনে গড় তাপমাত্রা: ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ৫০ মিলিমিটার
স্থানীয় হিরো: বেবেতো
স্কলারির জন্মশহর: পোর্তো অ্যালেগ্রে
ব্রাজিলের ২০০২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী কোচ ও বর্তমানে নেইমারদের ম্যানেজার লুইস ফিলিপ স্কলারির জন্মশহর পোর্তো অ্যালেগ্রে। তাছাড়া ব্রাজিলের এই শহরটিতেই জন্ম নিয়েছেন পাঁচ বারের বিশ্বজয়ী দলটির সাবেক কোচ মানো মানজেস। তাছাড়া ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের বিখ্যাত ডার্বি ‘গ্রেনাল’ এই শহরটিতেই হয়ে থাকে।
স্টেডিয়ামের নাম: এস্টাডিও জোস বোর্দা
ধারনক্ষমতা: ৫০,০০০
জুনে গড় তাপমাত্রা: ১৯.৭ ডিগ্রি
জুনে গড় বৃষ্টিপাত: ১২ শতাংশ
স্থানীয় হিরো: রোনালদিনহো।