তাহলে কি শচীন টেন্ডুলকারের সময় চলে এসেছে? ভারতের সাবেক অধিনায়ক কপিল দেব অন্তত তাই মনে করেন। তাঁর মতে, শচীন টেন্ডুলকারের বিদায় বেলা উপস্থিত।
এক বছর আগে ফিরে যাই। শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন—এ কথাটাই ভারতীয়দের কাছে ছিল অচিন্তনীয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ জয়ের পর শচীন নিজেও তাঁর ক্যারিয়ারকে অন্তত ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। টেস্টে ৫১টি ও ওয়ানডেতে ৪৮টি সেঞ্চুরি করা এই ক্রিকেটারের বিদায় আলোচনা যে এত তাড়াতাড়ি শুরু হয়ে যাবে, তা বোধ হয় ভাবেননি খোদ শচীনও। ১৯৮৯ সালে অভিষিক্ত শচীন ইতিমধ্যেই দীর্ঘ ক্রিকেট ক্যারিয়ারের রেকর্ড করে ফেলেছেন। তাঁর সমসাময়িক সব ক্রিকেটারেরই ক্যারিয়ার এখন অতীতের গল্প।
হঠাত্ই সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। ৯৯টি আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি পূরণ করেছেন এক বছর হয়ে গেছে। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরি। ১১টি টেস্ট ও নয়টি একদিনের ম্যাচ হয়ে গেছে সেঞ্চুরি খরায় আক্রান্ত হয়েছেন এই ক্রিকেট গ্রেট। শততম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির অপেক্ষা করে করে ক্লান্ত অনেক পাঁড় সমর্থকও রায় দিয়ে দিয়েছেন, বোধ হয় ‘নার্ভাস নাইন্টিজেই’ জের টানতে হচ্ছে শচীন টেন্ডুলকারের আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির তালিকার।
ক্যারিয়ারের গল্পটি শচীন টেন্ডুলকারের যা-ই হোক, সেঞ্চুরির জন্য এত অপেক্ষা তাঁকে আর কখনোই করতে হয়নি। অস্ট্রেলিয়াতে চলমান সিবি সিরিজে শচীন টেন্ডুলকার ৫ ম্যাচে মাত্র ১৮ গড়ে রান করেছেন ৯০। ফর্মের এই চূড়ান্ত দুরবস্থা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই।
ভারতের আরেক সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি মনে করেন, বিশ্বকাপের পরপরই শচীনের ওয়ানডে ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল। তিনি আরও বলেন, ‘শচীন এখন নিজেকে প্রশ্ন করতে পারেন, ওয়ানডে ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া কি তাঁর ক্যারিয়ারের জন্য সুখকর হচ্ছে। এতে কি ভারতীয় ক্রিকেট দল লাভবান হচ্ছে। আমার মনে হয় এই প্রশ্নের উত্তর যদি শচীন পেয়ে যান, তাহলেই তিনি বুঝতে পারবেন ৩৯ বছর বয়সেও তাঁর ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়া উচিত হবে কি হবে না ।’
৪৫৮টি একদিনের ম্যাচে খেলতে নেমে এই শচীনই কিন্তু ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরিটির মালিক হয়েছিলেন। এমন একজন অ্যাম্বাসেডরের অবসর ভাবনাটা তাঁর ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, শচীন এখন পুরো ব্যাপারটিই বুঝতে পারছেন।
সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন শচীন ওয়ানডে ক্রিকেট চালিয়ে যাবেন কিনা সে ব্যাপারে নির্বাচকদের উচিত তাঁর সঙ্গে বসে আলোচনা করা। গাভাস্কারের এই পরামর্শ উড়িয়ে দিয়ে সৌরভ বলেছেন, ‘কোনো নির্বাচকেরই বুকের পাটা নেই যে সে শচীন টেন্ডুলকারের সামনে বসে তাঁর ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলবে। ক্যারিয়ার নিয়ে সিদ্ধান্তটা শচীনকে ব্যক্তিগতভাবেই নিতে হবে।’
এদিকে, আজ ভারতের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক জরিপে দেখা গেছে ৫৭ শতাংশ ক্রিকেটানুরাগী চান, শচীন টেন্ডুলকার যেন এই মুহূর্তেই ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে সসম্মানে সরে দাঁড়ান।
জনমত কি উপেক্ষা করবেন শচীন টেন্ডুলকার?