কর্মব্যস্ত দিন শেষ, এবার নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরার পালা। রাজধানীতে যারা বাসে চলাচল করেন তাদের নিয়মিত এক ধরনের যুদ্ধ করে চলতে হয়। ঈদ এলেই বাড়ি ফেরার জন্য সেই যুদ্ধটা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। হাজার কষ্ট হলেও বাড়ি যেতেই হবে। মা-বাব, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ বলে কথা।
গতকাল ছিল ঈদের আগে শেষ কার্যদিবস। এর ফলে আজ শুক্রবার ভোর থেকেই বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে রাজধানীর টার্মিনাল গুলোতে। অবশ্য বৃহস্পতিবার বিকেলেও এমন ভিড় দেখা যায়।
সরেজমিনে মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছে। বাস শ্রমিকদের হাঁকডাকে ভোর হওয়ার আগেই জেগে উঠেছে টার্মিনাল। টিকিটের জন্য শত শত মানুষের একাধিক সারি দাঁড়িয়ে গেছে। টার্মিনাল এলাকা ছেড়ে মূল রাস্তায় চলে এসেছে এসব সারি। আর একই সঙ্গে দিন যত বাড়ছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানযট।
অগ্রিম টিকিট নেয়া যাত্রীদের দেখা গেল বাসের জন্য অপেক্ষা করতে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে যানজটের কারণে সময়মতো বাস আসতে পারছে না বলে জানালেন বিভিন্ন কাউন্টারে দায়িত্বরতরা।
মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বেশির ভাগ বাস যায় বৃহত্তর ময়মনসিংহের ১৩ রুট, বগুড়া, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের কিছু এলাকায়।
আলাপকালে টিকিটপ্রত্যাশী যাত্রীরা অভিযোগ করেন, ঈদের আগাম টিকিট অধিকাংশ কালোবাজারে চলে গেছে। এই জন্য আগে এসে তারা টিকিট পাননি। বলা হয়েছিল, টিকিট শেষ। আর এখন পরিবহনের অসাধু শ্রমিক ও দালালরা অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করছে।
ময়মনসিংহের ভালুকায় যাবেন রহমত উল্লাহ। তিনি কোনো বাসের টিকিট পাচ্ছিলেন না। এ সময় এক জন শ্রমিক এসে বেশি টাকার বিনিময়ে টিকিটের ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়। অগত্যা তাতেই রাজি হলো ওই যাত্রীকে।
অন্যদিকে লোকাল বাসেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে বেশি। শেরপুর যাবেন আবুল কালাম। ড্রিমল্যান্ড পরিবহনের এক জন শ্রমিকের বাড়তি ভাড়া নিয়ে তর্ক করতে সঙ্গে দেখা গেল। এ সময় সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের সাব-ইনেসপেক্টর চাঁন মিয়াকে অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাননি আবুল কালাম। তিনি বার্তা২৪ ডটনেট’কে বললেন, “নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ১০০ টাকা বেশি দাবি করা হচ্ছে। পুলিশকে বললাম কিন্তু কোনো লাভ হলো না।”
মা-বোনসহ গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন। যাবেন শেরপুর। প্রায় দেড় ঘণ্টা পার হলেও গাড়ির কোনো খবর নেই। তিনি বললেন, “এরপরও বাড়ি পৌঁছালেই সব কষ্ট আনন্দে পরিণত হবে।”
ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের কয়েকটি বাস কাউন্টারে দেখা গেল, আজকেই তারা টিকিট দিচ্ছেন। ভোর থেকেই এই সব কাউন্টারে ঘরমুখো মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে।
বাস কাউন্টারে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা জানান, রোজার ঈদে রাস্তা খারাপের জন্য যাত্রী অনেক কম ছিল। এই ঈদে রাস্তা কিছুটা মেরামত করার কারণে যাত্রী বেড়েছে। বেশি ভাড়া নেয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা সরকার নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা দেখিয়ে বলেন, “আমরা অন্যসময় ভাড়া কম রাখি। ঈদের সময় বেশি রাখা হয় না।”
এ ছাড়া নেত্রকোনাগামী শাহজালাল, শেরপুরগামী ড্রিমল্যান্ড, সিরাজগঞ্জগামী অভি পরিবহনের কাউন্টারেও একই চিত্র লক্ষ করা গেছে।