একশ একুশ কোটির দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তার মাস-মাইনে মাত্র এক লাখ ষাট হাজার টাকা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি। সাম্প্রতিক প্রকাশিত রিপোর্টে জানা গিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বেতন ও আনুসঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার বিস্তারিত তালিকা।
মনমোহন সিং হোন বা নরেন্দ্র মোদী, দেশের প্রধান মন্ত্রীর রোজগার কত? তথ্য জানার আইনের ভিত্তিতে দায়ের করা সাম্প্রতিক এক আবেদনের উত্তরে জানা গিয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য। রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রীর প্রাথমিক বেতন ৫০,০০০ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যয়নিয়ন্ত্রক ভাতা হিসেবে ৩০০০ টাকা, দৈনন্দিন ভাতা ৬২,০০০ টাকা এবং সাংসদ ভাতা ৪৫,০০০ টাকা।
এ গেল নগদের হিসেব। তা ছাড়াও কিছু সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন দেশের শাসন ক্ষমতার শীর্ষে থাকা মানুষটি। এর মধ্যে প্রথমেই তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ব্যক্তি বিশেষের নিজস্ব জীবনহানির আশঙ্কার উপর ভিত্তি করে এ দেশে ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মোট চারটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এই স্তরগুলি হল জেড প্লাস, জেড, ওয়াই এবং এক্স। তা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর মতো চরম গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ব্যক্তির জন্য রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তাবাহিনী যার পোশাকি নাম এসপিজি। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর নিকটতম আত্মীয়দের জন্য স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল করা হয়। পায়ে হেঁটে , নিজস্ব গাড়িতে চড়ে, রেল বা আকাশপথে প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যান, তাঁকে ঘিরে থাকে নিশ্ছিদ্র এসপিজি বলয়। মার্কিন সিক্রেট সার্ভিসের আদলেই তালিম দেওয়া হয় এসপিজি জওয়ানদের।
মোদীর প্রাসাদ:
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসস্থান দিল্লির ৭ রেসকোর্স রোডের বাগানঘেরা প্রাসাদোপম বাড়ি, সরকারি খাতায় যার নাম পঞ্চবটি। তবে শুধু বসবাস করার জন্যই নয়, এই বাড়িতেই নানা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও রাজনৈতিক বৈঠকও সারেন প্রধানমন্ত্রী । উল্লেখ্য ২০১০ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের সময় ৭ নভেম্বর বারাক ও মিশেল ওবামাকে পঞ্চবটিতে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও তাঁর স্ত্রী গুরশরণ কৌর।
ল্যুটেন’স দিল্লিতে ১২ একর জমির উপর মোট ৫টি বাংলো (বাংলো নম্বর ১,৩,৫,৭ ও ৯) নিয়ে আশির দশকে তৈরি হয় প্রধানমন্ত্রীর আবাস। এর মধ্যে একটিতে অতিথি নিবাস এবং একটি বাংলোয় এসপিজির ঘাঁটি। বাকি বাংলোগুলি প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করে থাকেন। বাড়ির একমাত্র প্রবেশদ্বারে ২৪ ঘণ্টা মোতায়েন থাকেন এসপিজি জওয়ানরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন-তখন দেখা করতে পারেন না নিকট আত্মীয়-পরিজনেরা। একমাত্র মুখ্য সচিবের তালিকা অনুসারেই প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত্প্রার্থীদের এই বাড়িতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। সঙ্গে অবশ্যই থাকতে হবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর অনুমোদিত পরিচয়পত্র। ৭ রেসকোর্স রোড সংলগ্ন এলাকার আকাশপথে উড়ান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ঢিল চোড়া দূরত্বের বহুতল হোটেল সম্রাটের শীর্ষতম চারটি তলা ভাড়া দেওয়া নিষেধ। এগুলি নিরাপত্তার খাতিরে সরকার অধিগ্রহণ করেছে।
মোদীর বাহন:
যাতায়াতের জন্য প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে তৈরি ২টি কালো রঙের বিএমডব্লিউ সেভেন সিরিজ সেলুন ব্যবহার করেন। গাড়ি দু’টি আপাদমস্তক বি-৭ লেভেল নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মোড়া। তাপ অনুসন্ধানকারী যে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র, গ্যাস আক্রমণ ও বোমা নিরোধক গাড়ি দু’টিতে অত্যাধুনিক মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে ।ব গাড়িগুলির তেলের ট্যাঙ্ক দু’টিও বিশেষ ভাবে সুরক্ষিত। দুর্ঘটনার কবলে পড়লেও তাতে বিস্ফোরণ হবে না।
গাড়ি দু’র নিজস্ব অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থাও রয়েছে। এ দু’টি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্যে রয়েছে আরও চারটি বিএমডব্লিউ। এর মধ্যে দু’টি অতিথিদের জন্য এবং আরও দু’টি গাড়ি দেশে যেখানে প্রধানমন্ত্রী সফর করেন সেখানেই উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসপিজিদের জন্য রয়েছে পাঁচটি অত্যন্ত সুরক্ষিত বিএমডব্লিউ এক্স-৫ গাড়ি।
আকাশপথে যাতায়াতের জন্য রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব বিমান এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান। এটি আসলে একটি বোয়িং ৭৪৭-৪০০ বিমান। এয়ার ইন্ডিয়ার জিম্মায় এ রকম ৫টি বিমান শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য মজুদ রয়েছে। প্রতিটি বিমানের বিতর রয়েছে একটি বিলাসবহুল সুইট, একটি শোওয়ার ঘর, একটি লাউঞ্জ এবং ৬ জন বসার মতো একটি অফিস। বিমানটিতে অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোনের ব্যবস্থা রয়েছে। উড়ান নিয়ন্ত্রণ করে পালাম এয়ারফোর্স স্টেশন। প্রধানমন্ত্রীর আকাশসফরের আগে থেকেই উড়ানের খুংটিনাটি চলে যায় এসপিজির দায়িত্বে। বিমানের জ্বালানি থেকে পানীয় জল, সমস্ত কিছুই পরীক্ষা করে দেখে নিরাপত্তাবাহিনী।
কিন্তু অবসর গ্রহণের পরে কী কী সুবিধা ভোগ করতে পারেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী?
জানা গিয়েছে, প্রত্যেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে বসবাসের জন্য বিনা ভাড়ার বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া বিনামূল্যে সব রকম চিকিত্সা, ১৪ জন সচিবালয়ের কর্মীর বেতন এবং দপ্তর চালা নোর যাবতীয় খরচ দেয় সরকার। তা ছাড়া, অবসর গ্রহণের পর প্রথম পাঁচ বছর তাঁকে বাত্সরিক ৬টি অন্তর্দেশীয় একজিকিউটিভ শ্রেণীর বিমান টিকিট এবং যথেচ্ছ রেল সফরের সু বিধা দেওয়া হয়। এসপিজি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তিনি অবসরের প্রথম বছরে পেয়ে থাকেন।
পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলে বছরে ৬টি বিমান টিকিট এ বং বিনামূল্যে যথেচ্ছ রেল সফরের সুবিধা পান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। দপ্তরের কাজের জন্য একজন ব্যক্তিগত সচিব ও অফিস পিওন পান তিনি।
টাকার অঙ্কে বা সুয়োগ-সুবিধের নিক্তিতে তাঁর জীবনযাপন বেশ লোভনীয় মনে হতেই পারে, তবে দেশ-বিদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সম্মানিত হওয়াই এই পদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন।