নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ৭ খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেন ভারতে পাড়ি দেওয়ার আগে যশোর সীমান্তে যার আশ্রয়ে দুই রাত ছিলো সেই মশিউরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার রাজধানী থেকে মশিউরকে গ্রেফতার করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ। সে এখন নারায়ণগঞ্জ পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। পুলিশ তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ যশোরের শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের কামাল হোসেন নামে এক ব্যক্তির নাম পায়। সে নারায়ণগঞ্জে নূর হোসেনের দোকানের সাবেক কর্মচারী। পরে কামালকে গ্রেফতারের জন্য নারায়ণগঞ্জ পুলিশ যশোর পুলিশকে রিক্যুইজিশন দেয়। গত ১৫ মে বিকালে যশোর ও নারায়ণগঞ্জ পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বেনাপোলের দুর্গাপুর রোডে বাদশার দোকানের সামনে থেকে কামালকে গ্রেফতার করে। ওই রাতেই যশোরে পুলিশ তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নূর হোসেন কীভাবে ভারতে পাড়ি জমায় সে বর্ণনা দেয় কামাল। সে জানায়, ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়রসহ সাতজন অপহৃত হওয়ার পর নূর হোসেন সেখানকার এক প্রভাবশালী ব্যক্তির আশ্রয়ে ছিল। কিন্তু ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে একের পর এক অপহৃতদের লাশ উদ্ধার হতে থাকায় আর ঝুঁকি নেয়নি নূর হোসেন। পরদিন ১ মে সে যশোর সীমান্তের উদ্দেশে রওনা দেয়। সোজা এসে ওঠে শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামে মশিউরের বাড়িতে।
দুই রাত সে ওই বাড়িতে মশিউরের আশ্রয়ে থাকে। ৩ মে সকালে একই গ্রামের কামাল হোসেনকে ফোনে ডেকে পাঠায় মশিউর। এ সময় মশিউর একটি মোটরসাইকেল আনতে বলে কামালকে। কামাল মোটরসাইকেল আনলে নূর হোসেনকে ওই মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে রঘুনাথপুর সীমান্তের দিকে চলে যায় মশিউর। পথে সে চোরাচালান সিন্ডিকেটপ্রধান বাদশাকে উঠিয়ে নেয়। এই দুই ব্যক্তি মিলে রঘুনাথপুর সীমান্ত দিয়ে নূর হোসেনকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়।
পুলিশ কামালকে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সেখানেও সে একই তথ্যের পুনরাবৃত্তি করে।
কামাল গ্রেফতার হওয়ার পরই আত্মগোপনে চলে যায় বাদশা ও মশিউর। পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজতে থাকে এই দুই ব্যক্তিকে। অবশেষে মঙ্গলবার ঢাকায় গ্রেফতার হলো মশিউর।
যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, বাদশাকেও শিগগির গ্রেফতার করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশাবাদী।
গ্রেফতার মশিউর যশোরের শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছি গ্রামের সেবাদত হোসেনের ছেলে। সে একই উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের মৃত কেরামত মল্লিকের ছেলে ফেনসিডিল চোরাচালান সিন্ডিকেটপ্রধান বাদশার অন্যতম সহযোগী।