বাড়িঘরে আগুন লাগলে দমকল ডাকতে হয়। জঙ্গলে দাবানল দেখা দিলে বিমান থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলে। তাতে সে রকম কাজ হচ্ছে না বলে অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা এবার বিস্ফোরক ব্যবহারের কথা ভাবছেন।
অস্ট্রেলিয়ায় ‘বুশফায়ার’ বা দাবানল কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, টেলিভিশনের পর্দায় প্রায়ই আমরা তা দেখতে পাই। এ রোষের মুখে মানুষকে বড্ড অসহায় লাগে। আশপাশের এলাকা থেকে মানুষজনকে উদ্ধার করা অথবা দাবানলের পথে গাছ কেটে আগুন রোখার চেষ্টা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। বিমান থেকে বিশেষ তরল মিশ্রণ ঢেলে আগুন নেভানোর চেষ্টাও সব সময় সফল হয় না।
এএফপি জানিয়েছে, এ থেকে পরিত্রাণ পেতে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা এক অভিনব উপায়ে বুশফায়ার মোকাবিলার উদ্যোগ নিচ্ছেন। মোমবাতির শিখা নেভাতে যেমন ফু দেওয়া হয়, সেই পদ্ধতিতেই বিস্ফোরক থেকে শব্দতরঙ্গ সৃষ্টি করে আগুন নেভাতে চান তারা।
বিষয়টা একেবারে নতুন নয়। তেলের কূপে আগুন ধরলে বিস্ফোরক ব্যবহার করে তা নেভানোর চেষ্টা চলছে অনেক কাল ধরেই। সিডনি শহরে নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাহাম ডইগ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন।
একটি পরীক্ষায় তিনি চার মিটারের একটি ইস্পাতের নলের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে শকওয়েভ সৃষ্টি করেছিলেন। নল থেকে যে বাতাস বেরিয়ে এসেছিল, তা প্রায় ১ মিটার উঁচু আগুনের শিখার ওপর ধরা হয়। আগুনের শিখার উৎস ছিল একটি প্রপেন বার্নার।
বিস্ফোরণের শকওয়েভের ধাক্কায় শিখাটি তার উৎস থেকে ছিটকে যায়। এতে দেখা গেল, জ্বালানি থেকে বিচ্ছিন্ন হলেই আগুন নিভে যায়; কিন্তু তার জন্য চাই বিশাল পরিমাণ ‘কমপ্রেসড এয়ার’ বা ঘনীভূত বাতাস। সহজেই এমন ‘কমপ্রেসড এয়ার’ তৈরি করতে নাইট্রোগ্লিসারিনের মতো বিস্ফোরক কাজে লাগানো যেতে পারে।
ডইগ মনে করেন, ভবিষ্যতে হেলিকপ্টার থেকে এমন বিস্ফোরক আগুনের ওপর ফেলে দেওয়া যাবে। তবে শুধু তাতেই কাজ হবে না। এক সার্বিক কৌশলের অংশ হিসেবে এ প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে হবে। তাছাড়া ব্যাপক আকারে বুশফায়ার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিলে এ বিস্ফোরক আগুনের প্রসার সাময়িকভাবে বন্ধ করতে পারবে, যাতে উদ্ধার কাজ শেষ করা যায়। বাস্তবে এ প্রক্রিয়া কাজে লাগাতে গ্র্যাহাম ডইগ দমকলকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার কথা ভাবছেন। কোনো কোনো অবস্থায় এটা সবচেয়ে ভালো কাজে লাগতে পারে, তা জানতে চান তিনি।
দমকলকর্মীরা যদি কোনো আগুন একেবারে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারেন, সে ক্ষেত্রে এখনই বিস্ফোরক কাজে লাগানোর ইচ্ছাও আছে তার। অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে আগুন নেভাতে না পারলেও এ প্রযুক্তির প্রয়োগের বিষয়ে আরও জ্ঞান অর্জন করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।