জেলে হত্যার ঘটনায় ভারত-ইতালির কূটনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে

জেলে হত্যার ঘটনায় ভারত-ইতালির কূটনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে

ভারতীয় দুই জেলেকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ইতালি ও ভারতের মধ্যে কুটনৈতিক উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। ভারত মহাসাগর সংলগ্ন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালার উপকূলের অদূরে একটি ইতালীয় পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে গত বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি)গুলি করে ভারতীয় ওই দুই জেলেকে হত্যা করা হয়।

জাহাজটির রক্ষীরা জলদস্যু সন্দেহে জেলেদের ওপর গুলি চালায় বলে দাবি করেছে জাহাজের কর্তৃপক্ষ। ভারত এই ঘটনার পর বাণিজ্যিক জাহাজটি আটক করে অভিযুক্ত দুই রক্ষীকে গ্রেফতার করে।

অভিযুক্ত দুই ইতালিয়ান নৌ-সেনা মাসিমিলিয়ানো লাতোরে এবং সালভেতোরে গিরোনে ইতালির পতাকাবাহী বাণিজ্যিক তেলবাহী ট্যাংকার এনরিকা লেক্সির সশস্ত্র রক্ষীর দায়িত্ব পালন করতেন। তারা ট্যাংকারটির নিরাপত্তায় মোতায়েন ছয় সদস্যের রক্ষীদলের অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।

অভিযুক্ত দুই ইতালিয়ান রক্ষী আত্মপক্ষ সমর্থন করে দাবি করেন, নিহত জেলেদের ওই নৌকাকে তারা সোমালিয়ার জলদস্যুর নৌকা বলে ভেবেছিলেন।

কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের এসব দাবিকে পাত্তা দেয়নি। ভারতীয় কোস্টগার্ড ট্যাংকারটি থেকে ওই দুই রক্ষীকে ধরে নিয়ে এসে আদালতে বিচারের সম্মুখীন করেছে।

তবে জাহাজে ভারতীয় হানায় নাখোশ ইতালি। জাহাজটিতে ভারতীয় আইন-শৃংখলা বাহিনীর হানা দেওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইতালি। তাদের দাবি রোববার সম্পূর্ণ একতরফা ও জোরপূর্বক ভারতীয় পুলিশ আন্তর্জাতিক জলসীমানা থেকে তাদের সেনাদের আটক করে। তাদের গ্রেফতারের সময় ভারতীয় পুলিশের আচরণও মোটেই সুবিধাজনক ছিল না বলেও দাবি করে তারা।

এদিকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ড কেন্দ্র করে ইতালির সঙ্গে ভারতের কুটনৈতিক উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার ভারতে আসছেন ইতালির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরের সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ভারত সফরে আসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইতালির সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্তাফান ডে মিসতুরা ইতালির পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং বিচার মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের স্বমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিনিধি দলটি তাদের ভারতীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার একটি কূটনৈতিক সমাধান আনতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছে ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তরফে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।

এদিকে দুই দেশের কুটনৈতিক রশি টানাটানির মধ্যেই ভারতীয় আদালতে এ ব্যাপারে আইনি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বুধবার অভিযুক্ত দুই হত্যাকারীকে কেরালা হাইকোর্টে শুনানির জন্য উপস্থিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।

তবে ছাড় পাচ্ছে না তেলবাহী জাহাজটির মালিক ইতালিয়ান শিপিং কোম্পানিও। ইতিমধ্যে নিহত জেলেদের পরিবারের তরফে আবেদন করা হয়েছে, বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যেন জাহাটিকে কেরালা ত্যাগ করতে না দেওয়া হয়। তারা কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও আদালতে আবেদন জানিয়েছেন।

এই আবেদনের ওপরে বুধবার অপর একটি শুনানি হতে যাচ্ছে আদালতে। উল্লেখ্য, হত্যাকাণ্ডের পর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের জাহাজ এবং বিমান পাঠিয়ে অয়েল ট্যাংকারটিকে ধরে নিয়ে আসে।

এদিকে মঙ্গলবার কেরালার একজন বিচারক হত্যার সময় ব্যবহৃত অস্ত্র এবং আলামত জব্দ করার জন্য জাহাজটিতে তল্লাশি চালানোর ব্যাপারে পুলিশকে অনুমতি দিয়ে একটি পরোয়ানা জারি করেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসএম কৃষ্ণা চলমান তদন্তে সহায়তা করার জন্য ইতালির প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেন, ‘আমি এই ব্যাপারে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ভারতের নিজস্ব আইন অনুযায়ীই এ ঘটনা প্রবাহিত হবে। আমরা ইতালিয়ানদের পরামর্শ দিয়েছি তারা যেন এ ব্যাপারে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌছাঁর জন্য কেরালা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই আহবানের পরও ঘটনা এত সহজে নিষ্পত্তি হবে না বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা। ইতিমধ্যেই কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ওমেন চান্দি কোল্লাম উপকুলের অদূরে সংঘটিত এই ঘটনাকে ঠাণ্ডামাথার খুন বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি তিনি এর বিরুদ্ধে শক্ত আইনী ব্যবস্থা নেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিকভাবে নিজেকে একজন শক্ত ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরার সুযোগ হাতছাড়া করবেন বলে মনে হয় না।

আন্তর্জাতিক