পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর কমলাপুর আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) পণ্য খালাস ও রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত দুই দিনে ৪ শতাধিক কনটেইনারে আটকা পড়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার আমদানি-রপ্তানি পণ্য।
ট্রেন থেকে নামা কনটেইনারগুলোর ডেলিভারি প্রায় শূন্যে নেমে আসায় বাড়ছে জট। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কমলাপুর আইসিডিতে নামানো কনটেইনারগুলো ডেলিভারি না হওয়ায় দ্রুত খালি ইয়ার্ড ভরে যাচ্ছে। ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে বন্দরে কনটেইনার জট ভয়াবহ রূপ নেয়ার আশঙ্কা করছেন বন্দর কর্মকর্তারা।
এদিকে কাস্টমস হাউসে রাজস্ব আদায় ব্যাপক হারে কমে গেছে। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হতো। ধর্মঘটের কারণে রাজস্ব আদায়ও নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়।
কনটেইনার আটকা পড়ায় পণ্য জট লাগার কথা স্বীকার করে কমলাপুর আইসিডি’র ডেপুটি ট্রাফিক ম্যানেজার আহমেদুল করিম চৌধুরী জানান, ট্রাক, ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান পরিবহন মালিকদের ধর্মঘটের কারণে ইয়ার্ডে বাড়ছে পণ্যজট। তাই দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালককে (পরিবহন) জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব), কমলাপুর আইসিডি কমিশনার অব কাস্টম, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালক (নিরাপত্তা), বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারসহ যথাযথ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর একসঙ্গে বেশি কনটেইনার ছাড় করার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।’
রেফার কনটেইনারে থাকা পচনশীল দ্রব্য দ্রুত ছাড় করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এসব কনটেইনার ছাড় করতে আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কারণ ছাড় করতে দেরি হলে এসব পচনশীল দ্রব্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’
ধর্মঘটের কারণ হিসেবে আহমেদুল করিম চৌধুরী আরো বলেন, ‘আইসিডিতে আমদানি পণ্য খালাস ও রপ্তানি পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ট্রাক, ট্রেইলার ও কাভার্ড ভ্যান মালিকরা রেলওয়ের বালুর মাঠ প্রায় ১৬ বছর ধরে ট্রাক টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ আইসিডিকে না জানিয়ে একটি বেসরকারি কোম্পানির নামে লিজ দেয়। কোনো নোটিশ না দিয়ে ওই ট্রাক টার্মিনালের প্রবেশ মুখে দেয়াল নির্মাণ করে দেয়ার পর গত ২০ মে বেলা ১১টা থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘কমলাপুর আইসিডি চালাতে হলে দ্রুত একটি ট্রাক টার্মিনাল প্রয়োজন।’ ধর্মঘটের কারণে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় বন্ধ হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
মো. ইমরান নামে এক পরিবহন নেতা জানান, ট্রাক ড্রাইভার শ্রমিক ইউনিয়নের ডাকা ধর্মঘটে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন, ট্রাক কাভার্ড ভ্যান ট্রেইলার মালিক সমিতি, আইসিডির সিবিএ যুক্ত হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকার রাজস্ব জমা হচ্ছে না আইসিডি, কাস্টমস, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
তিনি বলেন, ‘বালুর মাঠের জায়গায় টার্মিনাল না হলে আইসিডি বন্ধ হয়ে যাবে। গত ১৬ বছর ধরে বালুর মাঠটি ট্রাক ড্রাইভাররা ট্রাক টার্মিনাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। হাঠাৎ করে রেলকর্তৃপক্ষ ট্রাকড্রাইভার বা আইসিডিকে না জানিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয়। তারা সম্প্রতি বালুর মাঠের প্রবেশ পথে দেয়াল নির্মাণ করে দেয়। অথচ এই জায়গাটা ছিল ডোবা। ট্রাক ড্রাইভার ও মালিকরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে মাঠটি বালু দিয়ে ভরাট করে টার্মিনাল করে।
বর্তমানে সেখানে কোনো ট্রাক রাখতে পারছেন না ড্রাইভাররা। কেউ রাখলে জোর করে বের করে দেয়া হচ্ছে। পাশের রাস্তায় রাখলে পুলিশ রেকার দিয়ে নিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে তারা ধর্মঘটের ডাক দেন। এরপর থেকে এসব ট্রাক ড্রাইভারের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। যে কোনো সময় অপ্রীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হতে পারে বলে মো. ইমরান জানান।
কমলাপুর আইসিডি ঢাকা কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ মো. ফরিদ উদ্দিন বাংলামেইলকে বলেন, ‘রেল কর্তৃপক্ষ যে কাজ করেছে তা রাষ্ট্রবিরোধী। আইসিডি, সিঅ্যান্ডএফ, কাস্টমসসহ আমাদের না জানিয়ে বা কোনো নোটিশ না দিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লিজ দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। আইসিডি বন্ধ হওয়া মানে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধ্বংস নেমে আসা।’
এ ব্যাপারে রেলওয়ের বিভাগীয় ম্যানেজার মো. কামরুল আহসানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি কোনো সাক্ষাৎ দেননি।