মোবাইলে ফোন করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনকে অপহরণের অভিযোগে এক মহিলাসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
রোববার রাতে মিরপুর ও সিরাজগঞ্জের নিমগাছী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে পুলিশের অ্যান্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড টিম। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- অপহরণকারী চক্রের দলনেতা রেজাউল, তার দ্বিতীয় স্ত্রী শিউলী আক্তার শিল্পী, আনোয়ার হোসেন, আব্দুস সামাদ ও মরতুজা। এ সময় তাদের কাছ থেকে মুক্তিপণের এক লাখ টাকা, দু’টি হ্যান্ডকাফ ও অচেতন করার নেশাজাতীয় ওষুধ উদ্ধার করে পুলিশ।
গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, অ্যান্টি-কিডন্যাপিং স্কোয়াড গঠনের পর গত ১৭ দিনে ৬৩টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৫২টি অপহরণ ও ১১টি অন্যান্য অভিযোগ। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে ২৮টি ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অভিযোগ এসেছে আরো ২৪টি।
অপহরণের বিষয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, গত ৩০ এপ্রিল তুরাগ এলাকা থেকে হোটেল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনকে নারীর প্রলোভন দেখিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেয় চক্রটি। পরে শিল্পীর সাথে আপত্তিকর ছবি তুলে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা আদায় করার পর গত ৭ মে তাকে মুক্তি দেয়। জসিম উদ্দিনকে অপহরণের পর ২ মে তুরাগ থানায় এ বিষয়ে একটি মামলা করেন তার পরিবারের সদস্যরা। মামলার সূত্র ধরে ছায়া তদন্ত শুরু করে অ্যান্টি-কিডন্যাপিং স্কোয়াডের সদস্যরা। তারই ধারাবাহিকতায় অপহরণকারী সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের ওই পাঁচজনকে গ্রেফতার করে। নারী প্রলোভন দেখিয়ে তুলে নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে তারা এভাবে মানুষের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করত। মাঝে মধ্যে তারা র্যাব বা ডিবি পুলিশের নামও ব্যবহার করত। তাদের বিরুদ্ধে আগেও বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।
যুগ্ম কমিশনার বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছেÑ সঙ্ঘবদ্ধ চক্রের দলনেতা রেজাউল তার দ্বিতীয় স্ত্রী শিউলীর মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইল ফোনে কল করে প্রথমে প্রেমের ফাঁদ পাতে। এরপর দেখা করার নাম করে প্রেমিককে অপহরণ করে আপত্তিকর ছবি তুলে তা ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করে। এ চক্রের অন্যদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
ভুক্তভোগী জসিম উদ্দিন জানান, তিনি উত্তরা এলাকায় আমন্ত্রণ হোটেলের মালিক। গত ৩০ এপ্রিল তুরাগ এলাকায় একটি মেয়ে তার নাম ধরে ডাকে। এ সময় সে পেছনে তাকাতেই কয়েকজন তাকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে নাকে মুখে চেতনানাশক ওষুধ মাখিয়ে দেয়। এতে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফিরলে তিনি একটি অন্ধকার ঘরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করেন। সেখানে তাকে কিছুই খেতে দেয়া হতো না। পানি খেতে চাইলে দেয়া হতো ওই চেতনানাশক মিশ্রিত পানি। ওই ঘরে অপহরণকারীরা বিভিন্নভাবে তাকে নির্যাতন করে। মুক্তিপণের দাবিতে পরিবারের স্বজনদের কাছে মোবাইলে যোগাযোগ করত অপহরণকারীরা। এ সময় স্বজনদের আতঙ্কিত করতে তার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হতো। অপহরণের পর তার বাবা খলিলুর রহমানের কাছে ৭০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারীরা। এরপর ১২ লাখ টাকায় বিষয়টি রফা হয় বলেও জসিম উদ্দিন জানান।